২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সম্পন্ন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তার ছাত্রত্ব বাতিল করেছে একাডেমিক কাউন্সিল। যার ফলে অবৈধ হয়ে পড়েছে ’১৯ সালের ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদ, এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম (সিন্ডিকেট)।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা সূত্রে জানা গেছে, তার এম.ফিল প্রোগ্রামে ভর্তি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। যা ভর্তি আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বাতিল বলে বিবেচিত। যার ফলে বৈধ ছাত্রত্ব না থাকার কারণে গত ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর প্রার্থীতা অবৈধ।
ছাত্রত্ব বাতিলের ফলে প্রার্থীতা অবৈধ হওয়াতে এ ব্যাপারে জিএস পদ বাতিলের সিদ্ধান্তটি সিন্ডিকেট চূড়ান্ত হবে, বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটি ভর্তির ব্যাপারে অনেক অনিয়ম পায়। তদন্ত কমিটির সেই প্রতিবেদনের আলোকে একাডেমিক কাউন্সিলে তার ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা হয়। সিন্ডিকেটের সেই সুপারিশ গ্রহণ কর এবং তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করে একাডেমিক কাউন্সিল। যেহেতু একাডেমি কাউন্সিল এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। তাই পরবর্তীতে আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে তার জিএস পদ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে জিএস পদ বাতিল করা হলে তৎকালীন ডাকসু নির্বাচনের তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদ খাঁন সেই নির্বাচনের জিএস হতে পারেন। যদিও কিছু আইনি বিষয় রয়েছে। প্রার্থীতা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলে যদি রাশেদ খাঁন আইনজীবীদের মাধ্যমে আবেদন করলে তিনি জিএসের মর্যাদা পেতেন পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে তৎকালীন জিএস পদপ্রার্থী ও গণঅধিকার পরিষদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁনের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাশেদ লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানীর এমফিলের ছাত্রত্ব চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত। ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ায় ঢাবি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী তার ডাকসু পদও অবৈধ। ২০১৯ সাল থেকে আমার সংগ্রাম চালু ছিল। ২০২৫ সালে এসে ন্যায়বিচার পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশাসনকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৯ বছরের বিরতির পর ২০১৯ সালে ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মোট ২৫ টি পদের মধ্যে ২৩টি পদেই নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থীরা। অন্যদিকে ভিপি এবং সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদকের পদে জয়ী হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মনোনীত প্রার্থীরা।
এছাড়া জিএস পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, তিনি পান ১০ হাজার ৪৮৪ ভোট। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৎকালীন কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খাঁন, পান ৬ হাজার ৬৩ ভোট। অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সব সদস্যের ডাকসুর সদস্যপদ বাতিলপূর্বক ভুক্তভোগী প্রার্থীদের মূল্যায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে সংঘটিত নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার দাবিতে আবেদন করে রাশেদ খাঁন। এর প্রেক্ষিতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর