• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২৮ সেকেন্ড পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:১৫ দুপুর

সোনালি শীষের উল্লাসেও কমছে না কৃষকের দুশ্চিন্তা

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

শীতের কোমল রোদে ঝিলমিল করে ওঠে নবধানের স্তূপ। উঠোনে কাঁসার থালায় চাল ঝাড়ার শব্দ, ঘরে ঘরে নতুন ভাতের গন্ধ- সব মিলিয়ে নবান্ন যেন এক অপ্রকাশিত আনন্দগান। অথচ এই সোনালি উৎসবের আড়ালে লুকিয়ে আছে কৃষকের গভীর নিঃশ্বাস। উৎপাদনের সাফল্যে মন ভরলেও অনিশ্চয়তা তাড়া করছে বাজারদরে।

চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের আমন ধানে উল্লেখযোগ্য উৎপাদন দেখা গেলেও, সরকারি সংগ্রহ প্রক্রিয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন খরচের চাপে কৃষকদের সুখ যেন পুরোপুরি নিঃশর্ত নয়। মাঠের বাস্তবতা বলছে- ফলন ভালো হলেও নিরাপদ মূল্য এবং ন্যায্য বাজার ব্যবস্থার প্রশ্নটি এবারও অমীমাংসিত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কক্সবাজারে রোপা আমনের লক্ষ্য ছিল ৭৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর। ইতিমধ্যে জেলার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকিগুলোও কয়েক দিনের মধ্যে ঘরে উঠবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, চলতি মৌসুমে ঠিক সময়ে বৃষ্টি হয়েছে; আবার কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগও ধান উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করেনি। ফলে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও ফলনের ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি।

মাঠপর্যায়ে কথোপকথন ও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে- এ বছর সময়মতো বৃষ্টি হয়েছে। খরা বা অতিবৃষ্টির প্রভাব ছিল না। কীটনাশক ও সারের সংকট তীব্র না হলেও দাম ছিল বেশি। শ্রমিকসংকট আগের মতোই বড় সমস্যা। উৎপাদন খরচ বেড়েছে, তবুও কৃষকেরা মনে করছেন- এবছর ফলন এতো ভালো হয়েছে যে খরচ কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে বাজারের অস্থিরতা নিয়েই তাদের সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, জ্বালানি, সার, কীটনাশকের দাম বিগত দুই বছরে ২০-৩০% বেড়েছে। ধান কাটার শ্রমিক সংকট থাকায় জনপ্রতি ৮০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি গুনতে হচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় ধান বিক্রিতে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীর আধিপত্য রয়েছে। সরাসরি সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া কৃষকের নাগালের মধ্যে নেই। ফলন ভালো হলেও বাজার হাতের মুঠোয় নয়- এমনটাই শঙ্কা কৃষকদের।

খুরুশকুল এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ফলন ভালো, এইটা ঠিক। কিন্তু ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত যে খরচ, সেইটা এখন বেশি। বাজারে যদি দাম না থাকে, সব লাভ দালালের হাতেই যাবে।

চৌফলদন্ডির কৃষক মোহাম্মদ রহিম উদ্দিন ২ বিঘায় ব্রি- ২৮ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ২০-২৫ মণ উঠবে আশা করি। কিন্তু বাজারে ১ হাজার টাকাও যদি মন–প্রতি না পাই, তাহলে লাভ বেশি হবে না।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে- বেশিরভাগ কৃষক ধান বিক্রি করেন মাঠ থেকে দালালের কাছে। কারণ, সরকারি ক্রয়কেন্দ্র কৃষকের জন্য দূরে। প্রক্রিয়া জটিল। পরিচয়পত্র, সনদ ও কাগজপত্রের ঝামেলা। স্থানীয় ক্ষমতাবানদের তালিকা নিয়ন্ত্রণ। ফলে অধিকাংশ কৃষক কখনোই সরকারি সংগ্রহমূল্যের ধারেও কাছে যান না।

জেলার ৯টি উপজেলায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর। এর মধ্যে- চকরিয়া ১৯,৫৫০ হেক্টর, পেকুয়া ৮,৪৩৫ হেক্টর, রামু ৯,৪৫০ হেক্টর, সদর ৪,৪৪৫ হেক্টর, ঈদগাঁও ৪,১৪৫ হেক্টর, উখিয়া ৯,৬৯০ হেক্টর, টেকনাফ ১০,৯৩৫ হেক্টর, মহেশখালী ৮,১০০ হেক্টর, কুতুবদিয়া ৩,৯৮০ হেক্টর।

জেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত আমন জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রি–২৮, ২৯, ৪৯, ৮৯, ১০৩ ও ৭৫। এসব জাতের ধানে বিঘাপ্রতি ২৫–২৮ মণ পর্যন্ত ফলন হওয়ায় কৃষকেরা এগুলোতে বেশি ঝুঁকছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা সোনালি ধানের সারি বাতাসে দুলছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ধান কাটায় সমানতালে অংশ নিচ্ছেন।

চলতি মৌসুমে সরকার দাম ঘোষণা করেছে, ধান প্রতি কেজি ৩৪ টাকা, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা ও আতপ চাল ৪৯ টাকা।

কক্সবাজার জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৭১ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ের কৃষকের প্রশ্ন- সরকার কি সেই ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনবে, নাকি দালাল- চালকল মালিকরা সুবিধা পাবে?

গত বছরের প্রতিবেদনে দেখা যায়- সরকারি সংগ্রহের বড় অংশ কৃষকের সরাসরি হাতে যায়নি। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ডিলাররা এতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন।

জাতীয় পর্যায়ে এবার আমনে আবাদ হয়েছে ৫৭ লাখ হেক্টরে, লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন।

তবে অর্থনীতিবিদদের মত- উৎপাদন বাড়লেও বাজারে অস্থিরতা থাকবে। সংগ্রহ ও মজুত ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা না থাকলে কৃষকের লাভ মিলবে না। মধ্যস্বত্বভোগী নিয়ন্ত্রণ না করলে কৃষি খাত টেকসই হবে না।

কক্সবাজারের মাঠ এখন সোনার হাসিতে ভরা। কৃষকের ঘরেও নবান্নের আনন্দ। কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে এসেছে- দালালচক্রের দাপট। সরকারি ক্রয়ব্যবস্থায় অনিয়ম। উৎপাদন খরচের লাগামহীন বৃদ্ধি। বাজারমূল্য নিয়ে অনিশ্চয়তা।

কৃষকেরা বলছেন- ফসল মাঠে পেকে গেছে। এখন বাজারে পাকে কি না- সেটাই দেখার বিষয়।

কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. বিমল কুমার প্রমাণিক বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর রোপা আমনের ফলন অনেক ভালো। এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ ধান কাটা শেষ। কয়েক দিনের মধ্যেই সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা। সময়মতো বৃষ্টি ও দুর্যোগ না থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।

মাসুম/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]