প্লট দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের আদালতের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক। সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে এ কথা বলেছেন তিনি।
টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক। তিনি বলেন, এই ক্যাঙ্গারু আদালতের ফলাফল যেমন অনুমানযোগ্য, তেমনি অযৌক্তিক। আমি আশা করি এই তথাকথিত রায় যে অবজ্ঞা পাওয়ার যোগ্য, তা পাবে। আমার মনোযোগ সবসময় আমার হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের ভোটারদের প্রতি। আমি বাংলাদেশের এই নোংরা রাজনীতি দ্বারা মনোযোগ হারাতে চাই না।
প্লট দুর্নীতির মামলায় টিউলিপকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের একটি আদালত। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি (বোনের মেয়ে) টিউলিপের বিরুদ্ধে তার খালা ও পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি জমিসংক্রান্ত দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগের মামলায় এই রায় দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকার এক আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। রুলে বিচারক জানান, হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ হিসেবে তার বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে তার মা, ভাই ও বোনের জন্য মূল্যবান জমি নিতে সাহায্য করেছেন। এই রায়ে টিউলিপের মা শেখ রেহানাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রায় ঘোষণার সময় শেখ হাসিনা, টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানা বা এই মামলায় অভিযুক্ত তাদের পরিবারের অন্য কোনও সদস্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। আসামিদের অনুপস্থিতির কারণে তাদের পক্ষে আইনি প্রতিনিধিত্বের সুযোগও ছিল না। টিউলিপসহ অন্যদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টাকারী এক আইনজীবী অভিযোগ করেন, তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং গৃহবন্দি রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোনও প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই, তাই টিউলিপের এই সাজা ভোগ করার সম্ভাবনা কম। লেবার পার্টি এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই রায়কে স্বীকৃতি দেয় না, কারণ তাকে এই মামলায় সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করে আসছেন, প্রসিকিউটররা যে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তার অধিকাংশই ভুয়া। শৈশব থেকে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট রাখেননি এবং সেখানে কখনও কর দেননি। তবুও তাকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট ও ট্যাক্স আইডি দিয়ে বিচার করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
সাবেক কেবিনেট মন্ত্রী টিউলিপের দাবি, তার খালা শেখ হাসিনার ওপর রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণের শিকার হয়েছেন তিনি। গত বছর আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এই সরকারের অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো শেখ হাসিনা এবং তার প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিচার করা।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের একজন সাবেক রক্ষণশীল বিচার সচিবসহ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ আইনজীবীর একটি দল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে জানায় যে, টিউলিপের বিরুদ্ধে চলা এই বিচার কৃত্রিম, সাজানো ও অন্যায্য।
মামলার প্রসিকিউটর খান মোহাম্মদ মাইনুল হাসান অভিযোগ করেন, টিউলিপ সিদ্দিক তার পরিবারের জন্য রাজধানীতে জমি নিশ্চিত করতে হাসিনার কার্যালয়ের শীর্ষ সহকারীদের সঙ্গে ফোনে ও মেসেজে কথা বলেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে ঢাকা সফর করেছেন। যদিও প্রসিকিউটররা এই মেসেজগুলোর কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। তবে তারা জানান যে যোগাযোগসংক্রান্ত এসব তথ্য ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কর্মরত দুজন কর্মকর্তার কাছ থেকে এসেছে।
এর আগে গত মাসে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে গত বছরের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সহস্রাধিক বেশি মানুষকে গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছে। পরবর্তী এক দুর্নীতি মামলায় গত সপ্তাহে হাসিনাকে আরও ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ক্ষমতা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসনে রয়েছেন এবং তার দণ্ড ভোগের জন্য তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ অনুরোধে ভারত এখনও সাড়া দেয়নি।
টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার শাসনামলে কয়েকবার বাংলাদেশে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। যদিও তিনি দাবি করেন যে তার সব সফরই ব্যক্তিগত ছিল। গত জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত সম্পত্তির ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ ওঠায় তিনি ট্রেজারি মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। পরে এক তদন্তে দেখা গেছে, তিনি কোনও নিয়ম ভাঙেননি। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সম্পর্কের সম্ভাব্য সুনামগত ঝুঁকি নিয়ে আরও সতর্ক না থাকায় দুঃখজনক বলা হয়েছিল।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর