কক্সবাজারের উখিয়ার তচ্ছাখালী খালের ঘোলাটে পানিতে ভেসে থাকা একটি বস্তা প্রথমে কারও নজর কাড়েনি। কিন্তু বস্তা কাটতেই বেরিয়ে আসে এক নারীর নিথর দেহ- রহিমা আক্তারের লাশ। প্রায় দশ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হলেও স্বামীর স্থায়ী আয় না থাকায় জীবন কাটাতেন শ্বশুরবাড়িতে। সেই চারপাশেই জন্ম নেয় দাম্পত্য কলহ- অপমান, ঝগড়া, হুমকি।
কিন্তু দাম্পত্যের দীর্ঘ উত্তেজনা এক সময় নিতান্ত নিষ্ঠুর হত্যায় রূপ নেয়। ৬ নভেম্বর রাতে স্বামী জসিম উদ্দিন স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন, এরপর নিখোঁজ হয়ে যায় রহিমা। এক সপ্তাহের নীরবতা ও আশার খোঁজাখুঁজি শেষে ১৩ নভেম্বর উদ্ধার হয় বস্তাবন্দী লাশ, যা পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
হত্যার পর দীর্ঘদিন পলাতক থাকা স্বামী জসিম উদ্দিনকে ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৫। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে দাম্পত্য কলহের নেপথ্যে পরিকল্পিত হত্যার তথ্য।
তিনি নিখোঁজ হন ৬ নভেম্বর রাত থেকে, সেদিন রাতে স্বামী জসিম উদ্দিনকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল।
পরিবার জানায়- রহিমার বিয়ে হয়েছিল জালিয়াপালং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে, পাশের ইউনিয়নের জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। স্বামীর স্থায়ী আয় না থাকায় বিয়ের পর থেকেই তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন।
রহিমার আত্মীয় কায়সার বলেন, বোনটা অনেক সহ্য করেছে। জসিমের হুমকি প্রতিদিনের ঘটনা ছিল। কিন্তু যে এমন পরিণতি হবে, ভাবিনি।
লাশ উদ্ধার হওয়ার পরপরই র্যাব-১৫ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। রহিমার নিখোঁজ হওয়ার সময় এবং জসিমের ‘শেষ যাত্রা’র মিল খুঁজে সন্দেহ আরও গভীর হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার ও র্যাবের সহকারী পরিচালক (ল’ অ্যান্ড মিডিয়া) আ. ম. ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান- জসিম প্রাথমিকভাবে দাম্পত্য কলহ ও পূর্বপরিকল্পিত হত্যার ইঙ্গিত দিয়েছে। র্যাব ৬ নভেম্বর থেকে জসিমের মোবাইল ব্যবহার, অবস্থান পরিবর্তন ও সম্ভাব্য সহযোগীদের খোঁজ বিশ্লেষণ করে। শেষ পর্যন্ত ১ ডিসেম্বর, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থেকে গোপন অভিযানে গ্রেফতার করা হয় জসিম উদ্দিনকে।
তিনি আরো জানান, এ হত্যাকাণ্ড একা ঘটানো সম্ভব নয়, সহযোগী থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর