মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংশোধিত জাতীয় নিরাপত্তা নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, ওয়াশিংটনের নতুন কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি তাদের ভাবনার সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।
রবিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, নতুন নিরাপত্তা নীতির পরিবর্তনগুলো “অনেক দিক থেকেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মেলে।” তিনি বিশেষভাবে স্বাগত জানান ন্যাটোকে ‘চিরতরে সম্প্রসারিত সামরিক জোট’ হিসেবে দেখার ধারণা পরিবর্তনে ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষাগত ইঙ্গিতকে। বহু বছর ধরে ন্যাটো সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে আসছে মস্কো।
তবে পেসকভ সতর্ক করে বলেন, মার্কিন রাজনীতিতে তথাকথিত “ডিপ স্টেট”—যে শব্দটি ট্রাম্প নিজেই ব্যবহার করেন—এর অবস্থান এই নীতির সঙ্গে ভিন্ন হতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও কূটনৈতিক উত্তেজনা
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল ও ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর মার্কিন নিরাপত্তা নীতিগুলো রাশিয়াকে পশ্চিমা বিশ্ব-ব্যবস্থার জন্য হুমকি হিসেবেই দেখে আসছিল। তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইউক্রেন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের অবস্থানে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তার সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে “বন্ধু” বলে অভিহিত করার ঘটনাও আলোচনায় রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানে হোয়াইট হাউসের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। সোমবার জেলেনস্কি লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মেরৎসের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে—যে কোনো শান্তি আলোচনায় ইউরোপীয় সমর্থন অপরিহার্য, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রায়ই মস্কোর অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ‘সীমানা ছাড়ের’ পরামর্শ আসে।
কেন্দ্রবিন্দুতে ইন্দো-প্যাসিফিক, নজর চীনের দিকে
ট্রাম্পের নতুন নিরাপত্তা নীতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূল কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেছে। এতে চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা মোকাবিলায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি জোরদারের অঙ্গীকারও রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় চাপের মুখে থাকা রাশিয়া এ সময় চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করেছে। অথচ ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ইতিহাস বলে প্রথম শিক্ষা—রাশিয়া ও চীনকে কাছাকাছি আসতে দেওয়া উচিত নয়।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব-ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের ট্রাম্পের প্রচেষ্টার অংশ, যা “আমেরিকা ফার্স্ট” ধারণাকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
‘পশ্চিমা পরিচয়’ রক্ষার ওপর জোর
নতুন কৌশলগত নথিতে ইউরোপের ‘পশ্চিমা পরিচয়’ রক্ষা ও ‘সভ্যতার বিলুপ্তি’ ঠেকানোর মতো ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে—যা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনৈতিক বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপথে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্র-আলজাজিরা।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর