ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ব্যক্তিগত ধারণা, অসম্পূর্ণ তথ্য বা গুজবের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি বা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না করে সরকারি কর্মচারী হিসেবে শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষা জীবন এবং সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে দেশের উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ও সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অভিভাবকসহ সব অংশীজনের ন্যায্য স্বার্থ রক্ষা এবং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে ইতিবাচক একাডেমিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা এ বিভাগের প্রধান লক্ষ্য।
মানসম্মত শিক্ষা, সময়মতো পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফল প্রকাশ এবং প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাগত উৎকর্ষ নিশ্চিতকরণ বিষয়ে ঢাকা শহরের সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের যৌক্তিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া, যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক ইতোপূর্বে প্রেরণ করা হয়েছিল, তা পরিমার্জনপূর্বক চূড়ান্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, অংশীজন ও সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়া অধ্যাদেশটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। খসড়া বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সুধীজনসহ বিভিন্ন মহল হতে পাঁচ হাজারেরও বেশি মূল্যবান মতামত পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে তিনটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
একইসঙ্গে, নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ-এর মতামত সংগ্রহের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাপ্ত প্রতিটি মতামত আইনগত ও বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করে খসড়া পরিমার্জন করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, পরিমার্জনের কাজ সম্পন্ন করে আগামী ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে পরিমার্জিত খসড়ার ওপর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা সম্ভব হবে।
খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলমান রাখার পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এর পক্ষ হতে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (প্রস্তাবিত) এর অন্তবর্তীকালীন প্রশাসন, সাত কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ, শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মধ্যবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা যেন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয় সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও ক্লাস পরিচালনার বিষয়ে গত ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন এবং সাত কলেজের অধ্যক্ষদের অংশগ্রহণে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণপূর্বক নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত, বিগত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (প্রস্তাবিত) অন্তর্বর্তী প্রশাসন এর প্রশাসকের ২৮/০৭/২০২৫ তারিখে স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট, বিজ্ঞান ইউনিট ও ব্যবসা শিক্ষা ইউনিট ভর্তির আবেদন গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন ইউনিটে মোট ১০ হাজার ১৯৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে ৯ হাজার ৩৮৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তির নিশ্চায়ন সম্পন্ন করে। আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন- অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনা এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও পাঠদানের জন্য একটি অপারেশন ম্যানুয়েলও অনুমোদন করা হয়েছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যে সকল শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, তাদের ক্লাস শুরুর বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে বিগত ৪ ডিসেম্বর অধ্যক্ষগণ এবং ৭ ডিসেম্বর শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে সভা করা হয়েছে। ভর্তি বিজ্ঞপ্তির আলোকে বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর জন্য স্ব স্ব কলেজের শিক্ষকগণকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আসন্ন শীতকালীন ছুটি শেষে ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে মর্মে শিক্ষক প্রতিনিধিগণ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ব্যাপকতা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদ সংরক্ষণ, কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য রক্ষা, নারী শিক্ষার সুযোগ সংকোচন না করা, নারীদের জন্য নির্ধারিত কলেজসমূহের মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে কলেজসমূহের মালিকানা সংরক্ষণ, কলেজসমূহের বিদ্যমান উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না করা, সর্বোপরি প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সাথে সাত কলেজের সম্পৃক্ততার ধরণ বিষয়ে বাস্তবসম্মত, কার্যকর ও উপযোগী কাঠামো নির্ধারণসহ সকল সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে ও বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে অধ্যাদেশের খসড়া পরিমার্জন করা হচ্ছে। সময়সাপেক্ষ এ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকল মহলের ধৈর্যশীল আচরণ ও বিবেচনা একান্ত কাম্য। সকলের সহযোগিতায় সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও সমন্বিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বিশ্বাস করে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর