ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এসকোয়্যার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের (Esquire Electronics Ltd.) বিরুদ্ধে গ্রাহক ঠকানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নামিদামি জাপানি ব্র্যান্ডের কথা বলে বিক্রি করা ফ্রিজ কিনে মাসের পর মাস ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা।
একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি জাপানি ব্র্যান্ডের আড়ালে চীন থেকে ডুপ্লিকেট বা রিকন্ডিশন্ড পণ্য আমদানি করে নিজেদের কারখানায় স্টিকার লাগিয়ে বাজারজাত করছে। এতে একদিকে গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী গ্রাহকের অভিযোগে ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের সেবার মান নিয়ে ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রাহক ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ ইলেকট্রনিক্স থেকে শার্প ব্র্যান্ডের একটি প্রিমিয়াম সাইড বাই সাইড (Model- SJESB631XN) ফ্রিজ ক্রয় করেন।
শুরুতেই বিপত্তি: ডেলিভারির প্রথম দিন থেকেই ফ্রিজটির ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমতে থাকে। তাৎক্ষণিকভাবে কল সেন্টারে জানালেও ৪ জুন ২০২৪ তারিখে টেকনিশিয়ান এসে ‘সব ঠিক আছে’ বলে দায় সারেন।
পূর্ণাঙ্গ অচল: দীর্ঘদিন ধুঁকতে থাকার পর ২৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ফ্রিজটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ২৮ অক্টোবর সার্ভিস সেন্টার ফ্রিজটি নিয়ে যায় এবং ৮ নভেম্বর ফেরত দেয়।
সমস্যার অবনতি: ফেরত পাওয়ার পর গ্রাহক দেখেন ফ্রিজটি ঠান্ডা তো হচ্ছেই না, উল্টো বিকট শব্দ করছে এবং বডি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। ১৮ নভেম্বর টেকনিশিয়ান বাসায় এসেও সমাধান করতে ব্যর্থ হন। নিরুপায় হয়ে ২৩ নভেম্বর আবারও ফ্রিজটি নিয়ে যায় কোম্পানি।

ভুক্তভোগী বিডি২৪লাভকে বলেন, ‘দেড় বছর ধরে আমি শুধু ভোগান্তি পোহাচ্ছি। বারবার মেরামতে ব্যর্থ হওয়ার পর আমি রিফান্ড বা নতুন ইউনিট চেয়েছি, কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করছে না। এটি স্পষ্টত ভোক্তা অধিকার আইনের লঙ্ঘন।’
গ্রাহক হয়রানির বাইরে এসকোয়্যার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে আরও বড় জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি জাপানি ব্র্যান্ডের এসি, ফ্রিজ ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিক্রি করলেও এর বড় একটি অংশ চীন থেকে আমদানি করা।
স্টিকার বাণিজ্য: অভিযোগ রয়েছে, চীন থেকে ডুপ্লিকেট ভার্সন বা রিকন্ডিশন্ড (পুরাতন মেরামত করা) পণ্য আমদানি করে এসকোয়্যার নিজেদের কারখানায় নিয়ে তাতে ‘জাপানি ব্র্যান্ডের’ স্টিকার লাগিয়ে বাজারজাত করছে।
দ্বিমুখী ক্ষতি: সাধারণ ক্রেতারা জাপানি মানের আশায় চড়া দাম দিয়ে মূলত নিম্নমানের চীনা বা রিকন্ডিশন্ড পণ্য কিনছেন। অন্যদিকে, মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্য আমদানি করায় সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রিমিয়াম ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রি করে এমন একটি নামী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এমন অপেশাদার আচরণ ও জালিয়াতি কাম্য নয়। ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বদলে না দিয়ে বারবার মেরামতের চেষ্টা করা গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, পণ্যে বড় কোনো ত্রুটি থাকলে এবং তা মেরামতযোগ্য না হলে বিক্রেতা তা বদলে দিতে বা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য। এসকোয়্যারের বিরুদ্ধে ওঠা এই জালিয়াতি ও কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত করে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব বিষয়ে জানতে কোম্পানিটির একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর
কৃষি, অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর