নিকোটিন পাউচের মতো রোগ উৎপাদনকারী নেশাজাত দ্রব্যের কারখানার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা লঙ্ঘনের দুঃসাহস দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকার একদিকে তামাকসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৩৫ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অন্যদিকে সরকারেরই একটি প্রতিষ্ঠান বিদেশি কোম্পানিকে নেশাজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য দেশে আনতে চাচ্ছে। যে পণ্যের ব্যবহার বাংলাদেশে নেই, সেই পণ্যকে কম ক্ষতিকর বলে অনুমোদন দিয়ে বাংলাদেশে ব্যবহারের সাহস এ প্রতিষ্ঠানকে কে দিয়েছে সেটা উন্মোচন করা জরুরি।
আজ মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘আপিল বিভাগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিকোটিন পাউচের কারখানা অনুমোদন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবিলম্বে অনুমোদন বাতিলের দাবি’তে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটস (বিটিসিএ), পাবলিক হেলথ ল’ইয়ার্স নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিসিজিডি) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটসের আহ্বায়ক ইকবাল মাসুদ। বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট এবং রাজনীতি বিশ্লেষক আবু নাসের অনিক, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হাসান সোহেল, উন্নয়ন সংস্কারক এ কে এম মাকসুদ, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিসিজিডি) এর সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ফারহানা জামান লিজা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, অর্থনীতির উন্নয়নের নামে রোগ ও নেশার ক্ষেত্র তৈরি করতে চায় বেজা। একজন উপদেষ্টার পারিবারিকভাবে তামাকের ব্যবসা থাকায় এবং বিদেশি কোম্পানির সাথে পূর্ববর্তী সম্পর্ক থাকার পাশাপাশি বেজার চেয়ারম্যানের সাবেক কর্মস্থল হওয়ায় মরণব্যাধী এ পণ্য ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বেজা।
তারা আরও বলেন, নিকোটিন পাউচ বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবেও নিষিদ্ধ বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। বিশ্বের বহু দেশ নিকোটিন পাউচকে হুমকি হিসেবে দেখছে। বেলজিয়াম, জার্মানি, লিথুয়ানিয়া, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও কিরগিজস্তানসহ ১১ দেশে এর বিক্রি সম্পূর্ণ বা আংশিক নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র এফডিএ এটিকে ‘নিকোটিন পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে কঠোর প্রি-মার্কেট অনুমোদন বাধ্যতামূলক করেছে। সাম্প্রতি টিসিআরসির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার কোনো বাজার, দোকান বা ফার্মেসিতে নিকোটিন পাউচ নেই। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা পণ্যটি সম্পর্কে অবগতও নয়। তবুও বেজা একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানিকে নিকোটিন পাউচ কারখানা স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে এই ক্ষতিকর পণ্যকে বাজারে প্রবেশ করাবে এবং তরুণদের নেশার দিকে ঠেলে দেবে।
তারা আরও বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টের অধীন মহামান্য হাইকোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল আপিল নং ২০৪–২০৫/২০০১ মামলায় ০১ মার্চ ২০১৬–এর রায়ে বলা হয়েছে দেশে কোনো নতুন তামাক কোম্পানিকে অনুমোদন বা লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না। বরং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলোকে ধীরে ধীরে অন্যান্য শিল্পে স্থানান্তর করতে হবে। ফলে নিকোটিন পাউচের মতো নেশা সৃষ্টিকারী নতুন তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন অনুমোদন করে হাইকোর্টের নির্দেশনার লঙ্ঘন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতির বিরোধিতা, এবং জনস্বাস্থ্য ও সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮(১)–এর লঙ্ঘন করেছে বেজা।
সংবাদ সম্মেলনে ৫টি দাবি জানানো হয়। এ দাবিগুলো হলো, নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন তাৎক্ষণিক বাতিল করতে হবে। দেশে নিকোটিন পাউচ, ই-সিগারেটসহ সব নতুন নিকোটিন পণ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।
অনলাইন বিক্রি, অবৈধ আমদানি ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বেজা কর্তৃক কারখানা স্থাপনের অনুমতি বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এবং তরুণ জনগোষ্ঠীকে নেশার দিকে ঠেলে দেওয়ার পথ বন্ধ করতে তাৎক্ষণিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দেশে বিভিন্ন তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর