রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আলোচিত মা–মেয়ে খুনের মামলার প্রধান আসামি গৃহকর্মী আয়েশা আক্তারকে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে পুলিশে ধরিয়ে দেন তার শাশুরি। এ ঘটনায় ব্রিফ করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিমেম্বর) পুলিজ জানায়, মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ছুরি-চাকু নিয়ে প্রবেশে করে গৃহকর্মী। সে এর আগেও এমন কাজ করেছে।
এর আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর গ্রামে দাদা শ্বশুরের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা–পুলিশ। এ সময় তার স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকেও আটক করা হয়।
সে সময় পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- হত্যাকাণ্ডের পর আয়েশা ও তার স্বামী ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল হয়ে বুধবার সকালে নলছিটিতে আসেন। সকাল ১০টার দিকে তারা কয়ারচর গ্রামের দাদা রুস্তুম সিকদারের বাড়িতে পৌঁছান। গ্রামে তাদের প্রথমে কেউ চিনতে পারেনি। পরে পরিচয় দিলে রাব্বির দাদার বাড়িতে ওঠেন স্বামী-স্ত্রী। স্থানীয়দের ধারণা, স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে বেড়াতে নয়, বরং আত্মগোপনের উদ্দেশ্যেই রাব্বি দীর্ঘ ১৫ বছর পর এলাকায় ফিরে আসেন।
কয়ারচর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মন্নান মৃধা চুন্নু বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে রাব্বির বাবা–মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হলে তার মা অন্য সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন। তখন রাব্বি ঘর ছেড়ে চলে যান এবং এরপর আর এলাকায় দেখা যায়নি। স্থানীয়দের মধ্যে প্রচলিত ছিল—রাব্বি নাকি ধনী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। আজ সকালে সেই স্ত্রীকে নিয়ে এলেও তাকে দেখে কেউ চিনতে পারেনি। এমনকি রাব্বি নিজেও বাবার বাড়ি ঠিকমতো চিনতে পারছিলেন না। রাব্বির বাবা প্রবাসে থাকেন। বাড়িতে কেবল তার বৃদ্ধ দাদি থাকেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আয়েশার শাশুড়ি রুমা বেগম রাজধানীতে পুলিশকে জানান যে, তার ছেলে ও পুত্রবধূ নলছিটিতে দাদা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই মোহাম্মদপুর থানা দ্রুত অভিযান চালায়।
সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি টিম দুপুরে কয়ারচর গ্রামে পৌঁছে দাদা শ্বশুরের বাড়ি থেকে আয়েশা ও রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সহিদুল ইসলাম মাসুম জানান, মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন আয়েশা। গত সোমবার সকালে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন তিনি। বাসা থেকে কিছু মালামাল চুরির সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন আয়েশা।
নিহত লায়লা আফরোজ গৃহিণী ছিলেন; তার স্বামী এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরা সানবীমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। তাদের মেয়ে নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। বহু বছর পর রাব্বির ফিরে আসা, সঙ্গে অচেনা এক তরুণীকে স্ত্রী পরিচয়ে নিয়ে আসা, পরে জানা যায় তিনি আলোচিত জোড়া খুনের পলাতক আসামি—এ সব মিলিয়ে কয়ারচর গ্রামে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের অনেকেই গৃহকর্মী আয়েশার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর