ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহকে হত্যায় ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম। গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই নেত্রী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এ স্ট্যাটাস দেন।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির মারলো সাজিদ নামের ছেলেটিকে। তার বন্ধুরা প্রতিবাদ করতে গেলেও বাধার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে আপনি রাজনৈতিকভাবে কিছু করলেন না। এত সুশীল আপনি!’
ডাকসুকে ইঙ্গিত করে তিনি পোস্টে আরও লেখেন, ‘গতকাল বহিরাগতদের হামলায় তেজগাঁও কলেজে ছাত্রদলেরই কর্মী মারা গেলো। এরমধ্যে মোনাফেকদের সংগঠন ও মোনাফেকদের ডাকসু হাউকাউ জুড়ে দিলো উলটে আপনারই বিরুদ্ধে। অভিনন্দন! দুপুর আড়াইটায় আপনার হুঁশ ফিরেছে একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে জাতিকে উদ্ধার করতে।’
এদিকে তার পোস্টের পর এক বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানান ইবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মু. মাহমুদুল হাসান ও সেক্রেটারি ইউসুফ আলী। ওই পোস্ট সুস্পষ্ট মিথ্যাচার, দায় চাপানো রাজনীতি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিবৃতিতে দাবি করেছেন তারা। একইসঙ্গে তারা প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট এটিকে ব্যাক্তিগত মতামত বা গুজব বলে উল্লেখ করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে মাদকসেবনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দু’পক্ষের সংঘর্ষে গতকাল (১০ ডিসেম্বর) একজন শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের নৃশংস ঘটনা আড়াল করতে এবং ক্যাম্পাসগুলোতে একের পর এক ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ছাত্রদলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা শিবিরের উপর দায় চাপানোর অপরাজনীতি করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা আলম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজিদ হত্যাকাণ্ড ইস্যুর দায় শিবিরের উপর চাপিয়ে তেজগাঁও কলেজে শিক্ষার্থী খুনের ঘটনা আড়াল করতে চাচ্ছেন।”
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “গত ১৭ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির শুরু থেকেই বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সাজিদের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে কিছু মহল ও ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের উপর এ ঘটনার দায় চাপিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে তদন্ত চলাকালীন সময়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেত্রী মানসুরা আলমের এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ ছাত্রদলের ঘৃণ্য লাশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক অপপ্রচারেরই একটি অংশ।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, “প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছাত্রদল সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপকর্ম, মাদকাসক্তি, নারী হেনস্তা এবং ক্ষমতা দখলের রাজনীতির মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে ক্যাম্পাসগুলোতে ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে ধারালো অস্ত্র হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনার দায় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ ছাত্রশিবিরের উপর চাপিয়েছিল, কিন্তু ওই ঘটনায় প্রকাশিত নিউজে ছবিসহ যুবদল ও ছাত্রদল সন্ত্রাসীদেরকেই দেখা যায়। একইভাবে বিগত সময়েও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ ঢাবির সাম্য হত্যাসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায় ছাত্রশিবিরের উপর চাপানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন। সর্বশেষ তেজগাঁও কলেজে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনার দায় এড়াতে ছাত্রদল নেত্রীও চিরাচরিত মিথ্যাচারের পথেই হাঁটছেন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা ছাত্রদল নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, সাজিদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে দেওয়া অসত্য বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে সুস্থ ও শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্ররাজনীতির পথে ফিরে আসুন। অন্যথায় ছাত্রদলের দায় চাপানোর নোংরা রাজনীতি শিক্ষার্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।”
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেত্রী মানছুরা আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাজিদের বন্ধুদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তাদের কাছে এর প্রমাণ আছে। আমার কাছেও প্রমাণ আছে তবে আমি প্রমাণ দিতে বাধ্য নই।’
এ বিষয়ে জানতে ইবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার গত বুধবার ফেসবুকে সাজিদের হত্যাকারীরা ‘গুপ্ত আলবদর’ উল্লেখ করে পোস্ট দেন। তিনি লিখেছেন, ‘তেজগাঁও কলেজে ছাত্রখুনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ক্যাম্পাসে দ্বিতীয় ছাত্রহত্যার ঘটনা ঘটলো। ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের হত্যাকারী গুপ্ত আলবদরের উত্তরসূরিদের বিচার হলে হয়তো আজকের ঘটনা ঘটতো না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি রূপক অর্থে হত্যাকারীদের আখ্যায়িত করেছেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ইউনিট সিআইডি কর্মকর্তা ও সাজিদ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সংবাদিকদের বলেন, ‘তারা নিজেরা কিভাবে এসব বলছে সেটা তারাই জানে। আমাদের সঙ্গে তাদের ওই ধরনের কোনো কথা হয়নি। এ বিষয়ে আমার অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা ধারণা করে এসব ফেসবুকে পোস্ট করেন বলে জানান। এগুলো তাদের ব্যক্তিগত মতামত অথবা গুজব।’
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই ইবির শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর লাশ উদ্ধার হয়। ভিসেরা রিপোর্টে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে উঠে আসে। বর্তমানে এটি সিআইডির অধীনে তদন্তাধীন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর