চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রদলসহ বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান, স্লোগান ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উত্তেজনার মধ্যেই মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরাও মিছিলে অংশ নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে দীর্ঘক্ষণ স্লোগান দিতে দেখা গেছে তাদের।এ ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি তকিবুল হাসান চৌধুরী তকির নেতৃত্বে গতকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে মিছিল নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঘণ্টাখানেক সেখানে অবস্থান করে তারা। এ ঘটনার লাইভ সম্প্রচারও করা হয়েছে তকির ফেসবুক আইডি থেকে। এরপর রাত ৮টার পরে আরেকটি লাইভে প্রধান ফটক ত্যাগ করতে দেখা যায় বহিরাগত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে বসে ধর ধর শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর স্লোগান দিয়েছেন হাটহাজারী যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও মেখল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জিএম সাইফুল ইসলাম। এ সময় তার নেতৃত্বে শিবির ধর, জবাই কর স্লোগান দেওয়া হয়। সাইফুল ইসলামের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে শাখা ছাত্রদল নেতাদের শোডাউন দেওয়ায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ছাত্রদল নেতাদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে কেন শোডাউন করবে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ধর ধর শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর এই স্লোগান এক সময় ছাত্রলীগ দিত। আমরা মনে করেছিলাম ৫ আগস্টের পর এসব স্লোগানের পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ছাত্রদল, যুবদল এবং বহিরাগত যে সন্ত্রাসীরা এসেছে, তারা আবার একই স্লোগান দিচ্ছে। ছাত্রলীগের সেই নেতাকর্মীদের ছাত্রদল-যুবদল ও বিএনপির মধ্যে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং আগামীতে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় ক্যাম্পাস দখলের পাঁয়তারা হিসেবে এই স্লোগান সামনে এনেছে।
স্লোগানের বিষয়ে চাইলে হাটহাজারী যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও মেখল ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক জিএম সাইফুল ইসলাম বলেন,"আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম কিন্তু এরকম কোন স্লোগান দেইনি।"
জানা যায়, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকে তালা দিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ৷ এসময় প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারী আটকা পড়েন। তালা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রদলসহ বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান, স্লোগান ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নির্বাচিত ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনির দিকে তেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভিপি রনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন—এমন সময় হঠাৎ উত্তেজনা তৈরি হয় এবং ছাত্রদল সভাপতি ও তার অনুসারীরা মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসেন।
গত রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে উপাচার্যের দপ্তরে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম খান বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ এবং বিষয়টি নিয়ে প্রচলিত কিছু বর্ণনাকে তিনি “অবান্তর” বলে মন্তব্য করেন।
এই বক্তব্যের পরপরই ওইদিন রাতে শাখা ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল করে। পরদিন উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। প্রায় আট ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তালা খুলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন কর্মসূচি পালন করে। পরে প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য ড. শামীম উদ্দিন খান উপস্থিত হলে আবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনার একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করে চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি লেখেন, “চবির বিজয় দিবসের প্রোগ্রামে ছাত্রদলের উস্কানি ও হামলার চেষ্টা।”
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী জানান, সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর