ছেঁড়া-ফাটা, পোড়া বা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া নোটের বিনিময় মূল্য ফেরত দেয়ার বিষয়ে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এই বিধিমালার আওতায় এখন থেকে গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেই নষ্ট নোটের বিনিময় মূল্য ফেরত পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সী ম্যানেজমেন্ট (ডিসিএম) থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক নোট প্রত্যর্পণ প্রবিধান, ২০২৫ জারি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক (নোট রিফান্ড) রেগুলেশন-২০১২ রহিত করা হয়েছে। জনসাধারণের স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু নগদ লেনদেন অব্যাহত রাখার স্বার্থে ব্যাংক শাখা থেকে বিধি মোতাবেক ছেঁড়া- ফাটা/ত্রুটিপূর্ণ ও ময়লাযুক্ত নোটের বিনিময়মূল্য প্রদান ও দাবিযোগ্য নোট সংক্রান্ত সেবা নিয়মিতভাবে দিতে হবে।
এ ধরনের সেবা দেয়ায় কোনো ব্যাংক শাখার অনীহা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নোট প্রত্যর্পণ প্রবিধান, ২০২৫ এর আলোকে ও সময়োপযোগিতার নিরীখে নোটের শ্রেণিবিভাগ, বৈশিষ্ট্য ও করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনাগুলো অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হলো। নোটের ব্যবহার উপযোগিতা ও বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রচলনে থাকা নোটগুলো শ্রেণিবিন্যাস করা হলো- পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট, অপ্রচলনযোগ্য নোট, ছেঁড়া-ফাটা/ত্রুটিপূর্ণ নোট, দাবিযোগ্য নোট এবং আগুনে পোড়া নোট।
ব্যাংকের শাখায় অপ্রচলনযোগ্য ও ছেঁড়া-ফাটা/ত্রুটিপূর্ণ নোটের সম্পূর্ণ বিনিময়মূল্য প্রদানযোগ্য। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে-
(ক) ব্যাংক শাখার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ম শ্রেণির কর্মকর্তা এবং বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে পদমর্যাদার দিক থেকে উক্ত মর্যাদার সমান) নিশ্চিত হবেন যে উপস্থাপিত নোটে আসল নোট হিসেবে সন্দেহাতীতভাবে শনাক্ত হবার মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং নোটটিতে সম্পূর্ণ নোটের ৯০ শতাংশের বেশি অংশ বিদ্যমান।
(খ) উপস্থাপিত নোট দুই খণ্ডে খণ্ডিত হলে, খণ্ড দুটি সন্দেহাতীতভাবে একই নোটের অংশ হতে হবে। এক্ষেত্রে জমা নেয়ার সময় নোটের বিচ্ছিন্ন খণ্ড দুটোর উল্টো পিঠে যথাসম্ভব সরু আকারের হালকা সাদা কাগজ এমনভাবে জোড়া লাগাতে হবে যাতে আসল নোট হিসেবে শনাক্তকরণের জন্য নোটটির পরীক্ষণে অসুবিধা না হয়। দুই খণ্ডে বিচ্ছিন্ন হয়নি কিন্তু পরীক্ষা করার সময় নাড়াচাড়ায় বিচ্ছিন্ন হতে পারে- এমন জীর্ণ নোটেরও উল্টো পিঠে একই রকমভাবে যথাসম্ভব সরু আকারের হালকা সাদা কাগজ লাগাতে হবে, যাতে আসল নোট হিসেবে শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষণে অসুবিধা না হয়।
দাবিযোগ্য নোটের বিনিময়মূল্য ব্যাংক শাখায় প্রদানযোগ্য নয়। এ ধরনের নোটের বিনিময় মূল্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রদেয় হবে। মূল্য সংগ্রহের জন্য এসব নোট বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর ডাক বা ক্যুরিয়ার মাশুল নোট জমাদানকারী থেকে আদায়যোগ্য হবে। দাবিযোগ্য নোট গ্রহণের আগে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে ও তার মূল্য সংগ্রহের জন্য নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা মানতে হবে-
(ক) নোটের মূল্যমান, নম্বর, জমাদানকারীর নাম ও পূর্ণ ঠিকানা সম্বলিত আবেদন পত্রের সঙ্গে ব্যাংক শাখা দাবিযোগ্য নোট গ্রহণ করবে। পরীক্ষার সময় নাড়াচাড়ায় বিচ্ছিন্ন হতে পারে এরকম নোটের উল্টো পিঠে যথাসম্ভব সরু আকারের হালকা সাদা কাগজ এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে আসল নোট হিসেবে শনাক্তকরণের জন্য নোটটির পরীক্ষণে অসুবিধা না হয়। নোটের কোনো অংশ বিদ্যমান না থাকলে সেখানে কোনো কাগজ লাগানো যাবে না।
(খ) জমাদানকারীর আবেদনপত্রসহ গৃহীত নোট শাখার ফরওয়ার্ডিং পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকটস্থ কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক (কারেন্সি)/নির্বাহী পরিচালক বরাবর বাহকের মাধ্যমে কিংবা প্রাপ্তি স্বীকার স্লিপ সম্বলিত রেজিস্ট্রি ডাক/ক্যুরিয়ারযোগে প্রেরণ করতে হবে।
(গ) বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কার্যালয় কর্তৃক আবেদনপত্র প্রাপ্তির ৮ সপ্তাহের মধ্যে নোটটির মূল্য দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে এবং মূল্য প্রদানযোগ্য হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে মূল্য আকলন করা হবে ও এ সংক্রান্ত এডভাইস প্রেরণ করা হবে।
(ঘ) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দাবিমূল্য প্রাপ্তির পর ব্যাংক শাখা থেকে প্রাপ্তি স্বীকার পত্রে আবেদনকারীর স্বাক্ষর গ্রহণ করে দাবিমূল্য প্রদান করতে হবে।
(ঙ) আবেদনকারীকে দাবিমূল্য প্রদান। করার পর প্রাপ্তি স্বীকারপত্রটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে এবং তৃতীয় অংশটি শাখায় সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া শাখায় এ সংশ্লিষ্ট একটি স্থায়ী রেজিস্টার। সংরক্ষণ (সংরক্ষণের সময় ১০ বছর) করতে হবে।
আগুনে পোড়া নোটের বিনিময়মূল্য ব্যাংক শাখায় প্রদানযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকটস্থ অফিসের হেল্প ডেস্ক দাবি শাখায় যোগাযোগ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
জালনোট উপস্থাপনকারীকে এবং একাধিক নোটের বিভিন্ন অংশ সংযোজন করে Built-up নোট উপস্থাপনকারীর বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সী ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পেমেন্ট সিস্টেমসের পরিপত্র অনুসরণ করতে হবে।
ব্যাংকের প্রত্যেক শাখায় জনসাধারণের সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে 'ছেঁড়া-ফাটা/ত্রুটিপূর্ণ ও ময়লা নোট বিনিময় ও দাবিযোগ্য নোট সংক্রান্ত সেবা দেয়া হয়' মর্মে নোটিশ স্থাপন করতে হবে। নোটিশে উল্লেখ থাকবে যে-
১) অল্প মরিচা/রং/তেল/কালিযুক্ত, ছেঁড়া/টেপযুক্ত, ছিদ্রযুক্ত ও ময়লা নোট, দুই খণ্ডে খণ্ডিত (নোটের সম্পূর্ণ অংশ বিদ্যমান) এবং নোটের ৯০ শতাংশের বেশি অংশ বিদ্যমান থাকলে সম্পূর্ণ বিনিময়মূল্য কাউন্টারের মাধ্যমে দেয়া যাবে।
২) নোটের উপস্থিত অংশের পরিমাণ। নোটের সম্পূর্ণ আয়তনের ৯০ শতাংশ বা তার কম, স্যাঁতসেঁতে, অধিক জরাজীর্ণ,।অত্যধিক তেল/রং/কালি/মরিচা ইত্যাদি।দ্বারা বিকৃত, দুই এর অধিক খণ্ডে খণ্ডিত ও বিকৃত নোটের বিনিময় মূল্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রদেয় হবে। মূল্য সংগ্রহের জন্য এসব নোট বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে ডাক বা ক্যুরিয়ার মাশুল নোট জমাদানকারী থেকে আদায়যোগ্য হবে।
৩) জালনোট বা একাধিক নোটের বিভিন্ন অংশ সংযোজন করে Built-up নোট উপস্থাপনকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্যাংক শাখাগুলো থেকে অপ্রচলনযোগ্য, ছেঁড়া-ফাটা/ত্রুটিপূর্ণ ও দাবিযোগ্য নোট গ্রহণের তথ্য মাসিক ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়/প্রিন্সিপাল অফিস থেকে পরিবীক্ষণ করতে হবে।
এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর
কৃষি, অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর