ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটি দাবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল এসব পোস্টে বলা হচ্ছে, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ঢাকা ব্যাংক হিসাব থেকে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেনের সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের আর্থিক যোগসূত্র রয়েছে। তবে সরকারি তদন্ত, আদালতের নথি এবং নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন কোনো তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সিআইডির তদন্তে ১২৭ কোটি টাকার তথ্য কীভাবে এলো
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (CID) হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অংশ হিসেবে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীদের ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণ করে অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেনের তথ্য শনাক্ত করে।
CID-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে, যা সময়, উৎস ও লেনদেনের ধরন অনুযায়ী স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই লেনদেনগুলো মানি লন্ডারিং, সংগঠিত অপরাধ ও অপরাধে অর্থায়নের ইঙ্গিত বহন করে- এ কারণে বিষয়টি আলাদাভাবে গভীর তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।
আদালতের আদেশ ও আইনগত পদক্ষেপ
CID-এর আবেদনের পর আদালত- ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীদের অন্তত আটটি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন, এসব হিসাবে থাকা অর্থের মধ্যে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়, একই সঙ্গে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়।
আদালতের আদেশ ও মামলার নথিতে এই লেনদেনগুলো ফয়সাল ও তার সংশ্লিষ্টদের হিসাবেই সীমাবদ্ধ বলে উল্লেখ রয়েছে।
মির্জা আব্বাসের সম্পৃক্ততার দাবি কতটা সত্য
যাচাই করে দেখা গেছে- CID-এর তদন্ত প্রতিবেদন, আদালতের আদেশ কিংবা চার্জসংক্রান্ত নথিতে মির্জা আব্বাসের নাম নেই। একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেনকে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের কোথাও বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বা তার ঢাকা ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে এই অর্থ লেনদেনের কোনো সংযোগ নিশ্চিত করা হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, “রাজনৈতিকভাবে পরিচিত কোনো ব্যক্তির নাম জড়িয়ে দাবি ছড়ানো হলেও, তদন্তে এখন পর্যন্ত এমন কোনো আর্থিক ট্রেইল পাওয়া যায়নি যা মির্জা আব্বাসের দিকে নির্দেশ করে।”
কীভাবে ছড়াল বিভ্রান্তিকর তথ্য
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, CID-এর প্রতিবেদনে উল্লেখিত ‘১২৭ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন’ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সময় মূল অভিযুক্তদের নাম বাদ দিয়ে ভিন্ন ব্যক্তির নাম যুক্ত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আংশিক সত্য তথ্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার একটি ক্লাসিক উদাহরণ, যা সাধারণ পাঠকদের বিভ্রান্ত করে।
তদন্ত এখনও চলমান
CID জানিয়েছে, হাদি হত্যাকাণ্ডের অপরাধী শনাক্ত, অর্থের উৎস ও অর্থ প্রবাহের চূড়ান্ত গন্তব্য নির্ধারণে তদন্ত এখনো চলমান। প্রয়োজনে নতুন ব্যক্তি বা হিসাব তদন্তের আওতায় আসতে পারে, তবে বর্তমান পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মির্জা আব্বাসের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত নয়।
হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানী উপাদান হলেও, ১২৭ কোটি টাকার এই লেনদেনকে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বা তার ঢাকা ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে যুক্ত করার মতো কোনো সরকারি বা প্রামাণিক তথ্য নেই। ফলে তাকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো দাবি ভিত্তিহীন, যাচাইহীন এবং বিভ্রান্তিকর বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
এক্সক্লুসিভ এর সর্বশেষ খবর