ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেওয়ার শেষ দিনে লালমনিরহাট জেলার তিনটি সংসদীয় আসনে মোট ২৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ২৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট-১ আসনে ১১টি মনোনয়ন বিক্রি হলেও জমা পড়েছে ১০টি, লালমনিরহাট-২ আসনে ১০টি বিক্রির বিপরীতে জমা পড়েছে ৯টি এবং লালমনিরহাট-৩ আসনে ৮টি মনোনয়ন বিক্রি হলেও জমা পড়েছে ৭টি। তিনটি আসনের কোনোটিতেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই লালমনিরহাট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু হয়। দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৩টা ২০ মিনিটে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহের এবং ৩টা ৩০ মিনিটে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও জেলা সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান লিমন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
এ ছাড়া গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট জোটের প্রার্থী ও কমিউনিস্ট পার্টির লালমনিরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্রী মধুসূদন রায়ও মনোনয়ন জমা দেন।
এদিকে লালমনিরহাট-১ ও লালমনিরহাট-২ আসনেও প্রার্থীরা নিজ নিজ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে লালমনিরহাট-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নির্বাচনী পরিবেশে প্রবেশ করেছি। যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আশা করছি আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। লালমনিরহাট একটি সীমান্তবর্তী ও দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত জেলা। মানুষের যে প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করব।”
একই আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবু তাহের বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েনি। দীর্ঘদিন পর লালমনিরহাট সদর আসনের মানুষ আনন্দের সঙ্গে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। সব রাজনৈতিক দল এখানে সহাবস্থানের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে। আশা করি আমরা একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারব।”
জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জাহিদ হাসান লিমন বলেন, “জাতীয় পার্টি উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ জেলার অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন, তার বড় অংশ জাতীয় পার্টির আমলেই হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জনগণ আবারও জাতীয় পার্টিকে ভোট দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নির্বাচিত হলে লালমনিরহাটের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।”
গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী মধুসূদন রায় বলেন, “বর্তমানে নির্বাচনী পরিবেশ আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হচ্ছে। আমরা নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার আশাবাদ রাখি। তবে আমাকে এবং আমার কিছু সমর্থককে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে, যা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।”
এছাড়া মনোনয়ন দাখিল অন্যান্য প্রার্থীরা জনগণের স্বার্থে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং জয়ের বিষয়ে আশাবাদী বলে জানান।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এইচ এম রকিব হায়দার জানান, জেলার তিনটি সংসদীয় আসনে মোট ২৬টি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর