বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দেশের প্রথম উট পাখির বাচ্চা

প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:০৪ এএম

বালুময় বিস্তীর্ণ মরুভুমির অঞ্চলের প্রাণী উট পাখির ডিম থেকে সাড়ে তিন বছর পরে বাচ্চা ফুঁটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। সমতল ভূমিতে উড়তে না পারা সবচেয়ে বড় পাখি হলো উট পাখি। এ পাখি উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে ডিম পেড়ে নিয়মিত তা দিয়ে বাচ্চা দেওয়ার এমন ঘটনায় এ দেশের পরিবশে ও উট পাখি বংশ বিস্তার করতে পারবে এমন আশার আলো দেখছে বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে এটাই প্রথম ডিম থেকে উট পাখির বাচ্চা ফোঁটার বিরল ঘটনা।

প্রায় দেড় মাস আগে ১৫টি ডিম নিয়ে পুরুষ ও নারী উট পাখি ডিমে তা দিয়ে একটি বাচ্চা ফুটিয়েছে। গত কয়েকদিন আগে নজরে আসে মায়ের সঙ্গে বাচ্চার ঘুরে বেড়ানোর এ দৃশ্য। একটি বাচ্চা ফুটলেও অন্য ডিমগুলোতে নিয়মিত পালাক্রমে তা দিচ্ছে পুরুষ ও নারী উট পাখিগুলো। আরো বেশ কয়েকটি বাচ্চা ফুটবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। বাচ্চার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আপাতত দর্শনার্থীদের জন্য উট পাখির বেষ্টনীর কাছে যাওয়া বন্ধ ও সীমিত করা হয়েছে।

পার্ক সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১জুন ও ৩০জুন সুদূর আফ্রিকা থেকে ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে ক্রয় করা হয় ৬টি উট পাখি। পরে ইমু পাখির বেষ্টনীর দক্ষিন পাশের বেষ্টনীতে রাখা হয় উট পাখিগুলো। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার ডিম দিলেও বাচ্চা ফুঁটেনি। প্রথম বারের ডিম পাড়ার পর থেকেই পার্ক কর্তৃপক্ষ নিয়মিত নজর রাখছে উট পাখির নিয়মিত জীবন যাপনের ওপর। উন্নত খাদ্য আর পরিচর্যায় পরিবর্তন আনা হয়। চলে বাচ্চা ফুঁটানোর প্রচেষ্টা আর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।

এ্যানিমেল কিপার মাসুদ হাওলাদার জানান, উট পাখি যে কোন শাক খেতে পছন্দ করে। বিশেষ করে কলমি শাক, পালং শাক, ভুট্টা ভাঙা, পোল্ট্রি ফিড ও কলা বেশি পছন্দ। সকাল বিকাল দুই বেলা করেই নিয়ম মেনে উপযুক্ত খাদ্য দেওয়া হয়।

ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান জানান, আকারে সবচেয়ে বড় উট পাখি ক্যাটিভে (আবদ্ধ স্থান) অবস্থায় ৬০ বছর বেঁচে থাকে। আর নেচারে (প্রকৃতিতে) বাঁচে ৪০-৪৫ বছর। এদের ওজন হয় প্রাই ৬৩ কেজি থেকে ১৪৫ কেজি পর্যন্ত। তবে সর্বমোট পুরুষ পাখির ওজন ১১৫ কেজি ও নারী পাখির ওজন ১০০ কেজি হয়ে থাকে। এরা ঘন্টায় ৭০ কিমি গতিতে দৌঁড়াতে পারে।

অপর ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার সারোয়ার হোসেন খান বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমাদের সামনে বাচ্চা নিয়ে মায়ের ঘুরাফেরার দৃশ্য প্রথম চোখে পড়ে। পৃথিবীতে সবচেয়ে আকারে বড় পাখি হচ্ছে উট পাখি। এদের ডিমও আকারে সবচেয়ে বড় হয়ে থাকে। পুরুষ পাখির শরীর কালো রঙ আর লেজ সাদা রঙের হয়ে থাকে। নারী পাখির সারা শরীরই দূসর বাদামী রঙের হয়ে থাকে। বালুময় মরু অঞ্চলে এদের বেশি বিচরণ থাকে।

সাহারা উত্তর, দক্ষিন ও পূর্ব আফ্রিকা আঞ্চলে পাওয়া যায় উট পাখি। আফ্রিকা রেইন ফরেস্ট দক্ষিন অঞ্চল, আরবের বালুময় অঞ্চলেও রয়েছে এদের বসবাস। সাভানা ফরেস্ট (ঝুপ ঝাপড়া অঞ্চল), উট পাখি চলাফেরা করতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করে। ন্যাচারে এদের অনেক শত্রুর মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হয়। লায়ন, লেপার্ড, মুঙ্গোস, বাঘ শিয়াল এদের প্রধান শত্রু। ন্যাচারে ৫-৫০ পাখি দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। পুরুষ পাখি দুলদুলে(বালুময়) স্থানে বাসা তৈরী করে। রাতে মেইল(পুরুষ) পাখি ডিমে তা দেয় আর দিনে ফিমেইল (নারী) পাখি ডিমে তা দেয়। উট পাখি ২-৪ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। একটি পাখি ৫-১০ ডিম দিয়ে থাকে। এক বাসায় একাধিক মা পাখি ডিম দেয়। উট পাখি ডিমে ৪০ দিন তা দেওয়ার পরে বাচ্চা ফুঁটে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সহকারী বন সংরক্ষক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, আগেও ডিম পেড়েছিল উট পাখি,নষ্ট হয়েছে। তবে এবার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে উট পাখির নিজে নিজে তা দিয়ে বাচ্চা ফুঁটিয়েছে। এ দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে এটাই প্রথম উট পাখির বাচ্চা ফোঁটার বিরল ঘটনা।



বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: