গোঁফ দেখিয়ে এ কেমন আন্দোলন!

প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৩৩ পিএম

নিজেদের গোঁফসহ ছবি দিয়ে সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল বানিয়ে এক অভিনব প্রতিবাদ শুরু করেছে ভারতের গুজরাত রাজ্যের দলিতরা। গত কয়েকদিনে গোঁফ রাখার অজুহাতে উচ্চবর্ণের লোকজন অন্তত চারজন দলিতের ওপরে হামলা চালিয়েছে। দলিত শ্রেণির এক যুবক গরবা নাচ দেখতে গিয়ে খুন হন গত সপ্তাহে। একের পর এক হামলার দায় নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন দলিত যুবক।

তারা বলছেন, দলিতদের ওপরে আক্রমণের কোনও সাজা হয় না বিজেপিশাসিত গুজরাতে, অথচ সেই রাজ্যেরই সবচেয়ে বেশি  পরিচিত ব্যক্তিত্ব মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এই দলিতদেরই আপন করে নিয়ে নাম দিয়েছিলেন হরিজন। ১৭ বছর বয়সী দলিত শিক্ষার্থী দিগন্ত মাহেরিয়া যখন মঙ্গলবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মোটরসাইকেলে চেপে এসে তার পিঠে ব্লেড চালায়। তার এক দাদা পিযুষ পারমা গত সপ্তাহে মার খান নিজের গ্রামেই। এদের অপরাধ, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও গোঁফ রেখেছিলেন।

সন্দেহ করা হচ্ছে আক্রমণকারীরা রাজপুত সম্প্রদায়ের, যারা মনে করে যে দলিত শ্রেণীর মানুষের গোঁফ রাখার অধিকার নেই। তারপরই গুজরাতের দলিতরা সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের ছবি বদলে দিতে শুরু করেছেন - নিজের ডিসপ্লে পিকচারে গোঁফ সহকারে ছবি দিচ্ছেন তারা।

দলিতদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেন জিগনেশ মেওয়ানি। তিনি বলেন, "গতবছর উনাতে চারজন দলিতকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল - যা নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছিল। কিন্তু গুজরাতে দলিতদের ওপর তার চেয়ে বহু গুণ বেশি অত্যাচার প্রতিদিন ঘটছে। আর এই এত বছর ধরে সেসব অত্যাচারের কোনও বিচার হয়নি। রাজ্যে দলিতদের ওপর অত্যাচারের ১০০টি ঘটনা হলে, ৯৭ জন অভিযুক্তই ছাড়া পেয়ে যান। " তিনি বলেন, "সব ঘটনায়ই উচ্চবর্ণের লোকেরা জড়িত, তাই বিজেপিশাসিত সরকার বলতে গেলে কিছুই করে না। এতদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ এবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।"

&dquote;&dquote;

মেওয়ানি যখন কথা বলছিলেন তার কয়েক মিনিট আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। দলিতদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণের প্রতিবাদে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে একটি মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মেওয়ানিসহ আরও অনেকে। তার কথায়, শুধুমাত্র গোঁফ রাখার কারণে উচ্চবর্ণের লোকজন দলিতদের মারছে। নবরাত্রির উৎসবে গরবা নাচ দেখতে গিয়েছিলেন বলে এক দলিত যুবককে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দিয়ে মেরে ফেলা হলো - এ সবই হচ্ছে সত্যিকারের গুজরাত মডেল - যে মডেলের কথা নরেন্দ্র মোদি সারা দেশে বলে বেড়াচ্ছেন।

জিগনেশ মেওয়ানী আরও বলেন, "মোদি গান্ধীজীর কথা বলেন, যে গান্ধীজী দলিতদেরকেই হরিজন বলে আপন করে নিয়েছিলেন, তাদেরই আজ এই অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে গুজরাতের গ্রামে গ্রামে।

কিন্তু দলিতদের এই ক্ষোভ কি বিজেপি বিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা রয়েছে ডিসেম্বরে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে? জানা যায়, বিজেপি উচ্চবর্ণের দল হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। আর কেন্দ্র ও রাজ্য - দুই জায়গায়ই তাদের সরকার, অথচ দলিতদের ওপর  একের পর এক অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসছে। এ নিয়ে সরকারকে কোনও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। তাই বিজেপিবিরোধী বিক্ষোভ তো বাড়ছেই। তবে শুধু মাত্র দলিতরা বিজেপিকে খুব একটা বেগ দিতে পারবে বলে মনে হয় না।

কিন্তু পাটিদার সম্প্রদায়ও আগেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেছে। অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষেরও ক্ষোভ রয়েছে। তাদের সঙ্গেই যদি এই দলিতদেরও বিক্ষোভ শুরু হয়, তাহলে সেটা বিজেপিকে নির্বাচনে কিছুটা হলেও বেগ পেতে হবে।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, যে সামাজিক মাধ্যমকে নিজেদের প্রচারের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার করে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এই দলিত যুবকরাও কিন্তু সেই মাধ্যমকেই বেছে নিয়েছেন নিজেদের প্রতিবাদ জানানোর জন্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই হয়তো দলিত শ্রেণির সব মানুষ এক জায়গায় আসতে পারছেন না কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে গোঁফসহ নিজের ছবি লাগিয়ে প্রতিবাদটা তারা ছড়িয়ে দিতে পারছেন অনেক সহজেই। বিবিসি

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: