বহিরাগত টেকনোলজিস্ট দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্র
এমবিবিএস না হয়েও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র মেকানিক মো: জাহাঙ্গীর আহমেদের মেয়ে তানজিলা আক্তারের (২২) বিরুদ্ধে মেডিকেল অফিসারের চেয়ারে বসে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ এক বছর এ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারের আসনে বসে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপসন) দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর কারণ জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক সংকটের কথা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টায় সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে। এ সময় পেটে তীব্র ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন কলেজ ছাত্র রায়হান। হাসপাতালের সরকার নির্ধারিত হারে টিকিট কাটার পর তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কক্ষে পাঠিয়ে দেন টিকেট প্রদানকারী অফিস সহায়ক আব্দুস সামাদ। সেখানে পূর্বে থাকা অন্যান্য রোগীসহ রায়হানের সাথে কথা বার্তা বলে হাসপাতালের প্যাডে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন তানজিলা। পরে, খোঁজ নিয়ে জানা গেল তানজিলা হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন চিকিৎসক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নয়, তার বাবা হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক জাহাঙ্গীর আহমেদ এই হাসপাতালে চাকরি করেন, সেই সুবাদে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনার পর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এখানে বসে রোগী দেখছেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মইনুল হক খান বিডি২৪লাইভকে জানান, তৃণমূলে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার স্বাস্থ্য ও সেবার কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার ২০১৭ সালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে। শিল্প-কারখানা সমৃদ্ধ গাজীপুরের শ্রীপুরে এই হাপাতালে প্রতিদিন গড়ে ছয়শত রোগী চিকিৎসা নেন। এ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের পদ ১২ জন থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩ জন। কনসালটন্টের ৫ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন চারজন। কনসালটেন্টেরা বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জনকে বর্তমানে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও বর্হিবিভাগে রোগীদের চাপ সামাল দিতে আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসারকেও সব ধরনের রোগী দেখতে হচ্ছে। অস্ত্রোপ্রচার কার্যক্রমের জন্য অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকার পরও এনেসথেসিয়া (চেতনাহীন) চিকিৎসকের অভাবে বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।
উজিলাব গ্রামের লাইলী বেগম (৩৬) শরীরের বিভিন্ন সমস্যার জন্য টিকেট কেটে বর্হিবিভাগের ৯ নম্বর রুমে চিকিৎসা নিয়েছেন। যেখানে প্রতিদিনের মত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসার বিলকিস আক্তার। তাকে রোগীর চাপ সামলাতে সকল বিভাগের রোগী দেখতে হয়, বিধায় ব্যবস্থাপত্রে সব ধরনের ওষুধ লিখতে হয়। বাধ্য হয়েই বেশির ভাগ ওষুধই আয়ুর্বেদিক ছাড়া লিখতে হয়।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ারা ফেরদৌসী বিডি২৪লাইভকে জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খিতে হচ্ছে তাদের। তবে বর্হিবিভাগে চিকিৎসকের দায়িত্বপালন করা তানজিলা কিভাবে দায়িত্বপালন করছেন সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মইনুল হক খান আরো জানান, তানজিলা মেডিকেল টেকনোলজিতে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা পাশ করা। তিনি ইতোমধ্যে মেডিকেল অফিসারদের সঙ্গে কাজ করে অনেকটাই অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। বর্তমানে চিকিৎসক সংকটের কারণে তানজিলাকে এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে তিনি এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন স্টাফ নন। তাকে যদি বাদ দেয়া হয় তবে বহির্বিভাগের একটি কক্ষে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া তানজিলার বাবা এ হাসপাতালেরই একজন স্টাফ বলে তার মেয়েকে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পেলে তাকে আর প্রয়োজন হবে না।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা: সৈয়দ মো. মঞ্জুরুল হক বিডি২৪লাইভকে জানান, হাসপাতালে চাকরি করা স্টাফ ছাড়া বহিরাগতদের রোগী দেখার নিয়ম নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব, এ রকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: