‘সৌদি ব্যাটারা খুব খারাপ, এমনও রাইত গেছে না ঘুমাইয়া কাটছে’
হবিগঞ্জ জেলা সদরের দুই নারী সখিনা বেগম ও নাবিলা বেগম (দু’জনের ছদ্মনাম) বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন বিদেশে গিয়ে অনেক টাকা আয় করে কিছুটা সাবলম্বী হবেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। স্বপ্ন যে স্বপ্নই রয়ে গেছে। উল্টো শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসতে হয় তাদের। সখিনা ও নাবিলা সম্পর্কে তারা দু’জন চাচাতো বোন।
শনিবার (১০ মার্চ) রাত ৮ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার ৩৯ নারী। এই নির্যাতিতদের মধ্যে সখিনা বেগম ও নাবিলা বেগমও ছিলেন।
তারা যখন শাহজালাল বিমানবন্দরের ক্যানোপি-২ গেট দিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাইরে মাইনসে য্যান আর সৌদি আরব না যায়। সৌদি ব্যাটারা (পুরুষরা) খুব খারাপ। ব্যাটারা মাইয়া পাইলে অনেক খারাপ আচরণ করে। আমি কান ধরছি আর সৌদি আবর যামু না।’
নির্যাতনের শিকার সখিনা বেগম বলেন, বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। এরপর নিজের একটি মাত্র মেয়ে সন্তানকে নিয়ে বাবা মায়ের কাছে থাকতেন তিনি। সখিনা বাবা-মা এর বোঝা হয়ে না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমান। কিন্তু তার সে স্বপ্ন আর পূরর্ণ হয়নি।
তিনি জানান, গ্রামের এক দালালের খপ্পরে পড়েছিলেন তিনি। ওই দালালই তাকে জানান সরকারি খরচে কম টাকায় সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ মেলে। কাজ যাই হোক না কেন কিন্তু টাকা আয় হয় অনেক। ওই দালালের কথা বিশ্বাস করেই নিজের বাবার জমি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলেন। এরপর পাসপোর্ট আর ভিসা করে পাড়ি জমান সৌদি আরবে।
তিনি আরো বলেন, সৌদিতে যে টাকা খরচ করে গিয়েছিলেনন তার আসলই তুলতে পারেননি তিনি। সৌদি আরবে ৬ মাস থাকলেও এর মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের আশ্রয়কেন্দ্রেই ছিলেন ২ মাস। বাকী ৪ মাস যেখানে কাজ করতেন সেখানে কেটেছে। সখিনা বলেন, এই ৪ মাসের দুঃসহ স্মৃতি তিনি কখনো ভুলতে পারেন না।
৩০ বছর বয়সী সখিনা জানান, ‘সৌদি ব্যাটারা তো মাইনসের বাচ্চা না। নরপশু। ওই ব্যাটারা গো আবার মা বইন আছে নাকি? আমার সঙ্গে যা হইছে তা তো আর মুখে কওন যায় না (বুইঝা লন)। শুধু শুধু তো আর কাজের বাসা থাইক্যা পলায় আসি নাই।’
সখিনা বেগম আরো বলেন, ‘ওই বাসাতে ৬ জন ব্যাটা (পুরুষ) মানুষ আছিল। বাপ ব্যাটা সবাই খুব খারাপ। বাধ্য হইয়া একদিন বিকেল বেলা পলায় আইছি।’
কিন্তু ওই বাসা থেকে পলায় আসাটা কোনোভাবেই সহজ ছিল না। পলায় আসার সময় বাসার তিন গেটে ধরা পড়েছিলেন। তখন তিনি বলেন বাইরে একটু কাজে যাচ্ছেন। এই বলে পলায়ি আসি। এরপর তার ঠাঁই হয় বাংলাদেশ দূতাবাসের আশ্রয় কেন্দ্রে।
তিনি জানান, ৪ মাস সৌদি মালিকের বাসায় কাজ করলেও কোনো টাকা পয়সা পাননি।
অপরদিকে, চাচাতো বোন সখিনার মতো অনেক টাকা আয় করার জন্য নাবিলা বেগমও পাড়ি জমান সৌদি আরবে।
নাবিলা বেগমও জানান, বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে তার। তিনিও তালাকপ্রাপ্তা।
২৯ বছর বয়সী নাবিলা বলেন, সৌদি আরবে এক বাসায় কাজ পেয়েছিলেন কিন্তু কাজের পরিবেশ তেমন ভালো না বলে দেশে ফিরে আসেন।
তিনি আরো জানান, ৩ মাস আগে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে মাত্র ২ মাস সেই বাড়িতে থাকেন। এরপর একদিন হঠাৎ করেই পালিয়ে আসেন তিনিও।
কেন পালিয়ে আসলেন? এমন প্রশ্নে নাবিলা কিছুক্ষণ পর বলেন, ‘ভাইরে কি আর কমু দুঃখের কতা। যেই বাসাটিতে কাম করছিলাম হেই ব্যাটারা খুব খারাপ। ওগোর জ্বালায় রাইতে ঘুমাইতেও পারতাম না। এমনও রাইত গেছে যে রাইতে না ঘুমাইয়া কাটছে।’
ওই দুই নারী জানান, সৌদি ব্যাটারা (পুরুষরা) বাংলাদেশ থেকে নারীদের গৃহের কাজের জন্য নিলেও মূলত তাদের যৌনদাসীর মতো ব্যবহার করেন তারা। প্রতিবাদ করলেই তারা মারধর করে, অত্যাচার করে, তাদের কথা না শুনলে চুরির অপবাদ দিয়ে জেলে পাঠানোর মামলাও দেন সৌদি বাসার মালিকরা।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীর ওপর যৌন নির্যাতনের একটি খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তুমুল ভঅবে নিন্দার ঝড় তুলেছিল।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: