কবে শেষ হবে এ যুদ্ধ?
সাত বছর আগে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল সেটি ছিলো শান্তিপূর্ণ।
অথচ সেদিনের যে শান্তিপূর্ণ ক্ষোভ বিক্ষোভের জের ধরে এখন গৃহযুদ্ধের আগুনে পুড়ে প্রায় ছাই হয়ে গেছে সিরিয়া।
সাত বছরের লড়াই আক্রমণ আর হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ।
কিভাবে যুদ্ধ শুরু হলো?
তবে সিরিয়া সংকট শুরুর আগে থেকেই দেশটিতে উচ্চ বেকারত্ব, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক অধিকার না থাকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিলো প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে।
প্রেসিডেন্ট আসাদ তার বাবার কাছ থেকে দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন ২০০০ সালে।
আর ২০১১ সালে গণতন্ত্র পন্থীরা আরব বসন্তে উজ্জীবিত হয়ে প্রথম বিক্ষোভ করেন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দিরায়।
তবে সরকার এ বিক্ষোভ দমনে রক্তক্ষয়ের পথ বেছে নেয় যাতে প্রতিবাদ আরও ছড়িয়ে পড়ে যা একপর্যায়ে দেশজুড়ে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। ফলে বিক্ষোভ যেমন বাড়ে তেমনি বাড়ে দমন পীড়ন।
এক পর্যায়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় বিরোধীরা যা প্রথমে আত্মরক্ষায় আর পরে সরকারি বাহিনীর সাথে প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
মিস্টার আসাদ পুরো বিষয়টি 'বিদেশী সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ' আখ্যায়িত করে একে সমূলে উৎপাটনের ঘোষণা দেন।
কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে?
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা দি সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এর হিসেব মতে চলতি মাস পর্যন্ত সিরিয়ায় মোট নিহত হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯০০ মানুষ যার মধ্যে ১ লাখ ৬ হাজার বেসামরিক নাগরিক।
তবে এর মধ্যে নিখোঁজ ৫৬ হাজার ৯০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং ধারণা করা হয় তারা আসলে মারাই গেছেন।
কী নিয়ে এই যুদ্ধ?
এটা এখন আসলে আর প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষ বিপক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন গ্রুপ ও দেশ নিজেদের নানা স্বার্থে এতে জড়িত হয়ে পড়েছে, যা লড়াইকে করছে প্রলম্বিত।
সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শিয়া ধর্মাবলম্বী বাশার আল আসাদ- এর সুযোগ নিয়ে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ধর্ম ভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও। এমনকি ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদাকে বিস্তৃত হবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আর সিরিয়ার কুর্দিরাও এ সংকটে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
কারা কারা জড়িত এ সংকটে ?
সিরিয়া সরকারের সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া ও ইরান। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের রসদ যোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও সৌদি আরব।
রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করেছে সিরিয়ায়। ২০১৫ সাল থেকে তারা সেখানে বিমান হামলাও শুরু করে। অন্যদিকে ইরান সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি আসাদ সরকারের জন্য ব্যয় করছে বিলিয়ন ডলার।
শিয়া মুসলিমদের অর্থ অস্ত্র নিয়ে সহযোগিতা করছে ইরান। অন্যদিকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর মধ্যে থেকেই লড়াই করছে ইরাক আফগানিস্তান ও ইয়েমেন থেকে আসা যোদ্ধারা।
আবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন 'উদারপন্থী' বিদ্রোহীদের সহায়তা দিচ্ছে।
সৌদি আরব যারা ইরানের প্রভাব খর্ব করতে চায় তারাও বিদ্রোহীদের একটি অংশের প্রতি অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে।
আর ইসরায়েল। তারা হেযবুল্লাহকে ইরানিরা অস্ত্রশস্ত্র পাঠায় কি-না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, এমনকি একবার তারা বিমান হামলাও করেছিলো এমন যুক্তিতে।
গৃহযুদ্ধে কতটা ক্ষতি হলো দেশটির?
লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ছাড়াও অন্তত পনের লাখ মানুষ স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ছিয়াশি হাজার মানুষ হাত পা হারিয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরে বাস্তু চ্যুত হয়েছে প্রায় ৬১ লাখ মানুষ। আর বিদেশে চলে গেছে ৫৬ লাখ সিরিয়ান। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান ও তুরস্কে। সেখানে অনেকেই মানবিক সহায়তা পর্যন্ত পাচ্ছে না।
দেশটি এখন কত ভাগে বিভক্ত?
দেশের বড় শহরগুলোর ওপর সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ পুন:প্রতিষ্ঠা হয়েছে সত্যি কিন্তু দেশটির বড় অংশই এখনো বিদ্রোহী ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ জোটের নিয়ন্ত্রণেই আছে। ২৬ লাখ লোকের শহর ইদলিবে শক্ত অবস্থানে আছে বিরোধীরা।
পূর্ব ঘৌতায় চলছে ব্যাপক লড়াই। আবার রাকাসহ ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব অঞ্চল জুড়ে নিয়ন্ত্রণ আছে এসডিএফের। রাকা ছিলো আইএস ঘোষিত খেলাফতের রাজধানী। আইএস অবশ্য এখন সিরিয়ার খুব অল্প জায়গাতেই টিকে আছে।
এ যুদ্ধ কবে শেষ হবে?
খুব শিগগিরই এ যুদ্ধ শেষ হবে তার কোন সম্ভাবনা এ মূহুর্তে দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ২০১২ সালের জেনেভা ঘোষণা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন গভর্নিং বডি কার্যকরের আহবান জানিয়েছে।
যদিও ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘ মধ্যস্থতায় নয় দফা শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। প্রেসিডেন্ট আসাদ বিরোধীদের সাথে সমঝোতায় রাজী নন।
আবার বিদ্রোহীরা চাইছে বাশার আল আসাদ পদত্যাগ করুক। আবার পশ্চিমা বিশ্ব শান্তি প্রক্রিয়াকে গুরুত্বহীন করার জন্য দোষারোপ করছে রাশিয়াকে।
অন্যদিকে রাশিয়ার জাতীয় সংলাপের আয়োজন করলেও তাতে বেশির ভাগ বিরোধী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাই যোগ দেননি। সব মিলিয়ে কবে শেষ হবে এ যুদ্ধ তার আসলে কোন ইঙ্গিত নেই কোন দিক থেকেই। বিবিসি
বিডি২৪লাইভ/এএইচআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: