বাঘের সাথে লড়াই, পড়ুন সেই লোমহর্ষক কাহিনী

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০১৮, ১০:৪৭ পিএম

জীবন মানে যুদ্ধ-জীবন মানে সংগ্রাম। যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার মত সাহসী মানুষ খুব-ই কম। সবাই বেঁচে থাকতে আর সুস্থ্য থাকতে চায়। কিন্তু নিয়তি ক্ষনে ক্ষনে বড়ই নির্মম। মাঝে মধ্যে বেঁচে থাকার সেই সব ভরদুপুরের স্বপ্নগুলোকেও তছনছ করে দেয়। হটাৎ করেই ভালোবাসায় মোড়ানো দুই মলাটের জীবনটাকে থামিয়ে দেয়।

সাহায্য আর বেঁচে থাকার করুন আকুতি প্রতিনিয়ত পৌঁছে যায় পৃথিবীর সব মানবিক মানুষগুলোর কাছে। আজ ভীন্নধর্মী এবং নতুন একটি গল্প জানাবো সবাইকে।

আতিয়ার মল্লিক সাতক্ষীরার ইতিহাসে এক সাহসী যোদ্ধার নাম। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সেন্ট্রাল কালিনগর এলাকার বাসিন্দা সে। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। আতিয়ারের বসতবাড়ির ২ কাঠা জমি ছাড়া কিছুই নেই।পরিবারে মোট ৬ জন সদস্য। তার মধ্যে রয়েছে তিন ছেলে মেয়ে। কোন রকমে দিনমজুর আর নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চলাতো।

আতিয়ার মল্লিক জীবনের শুরু থেকে কৃষি শ্রমের সাথে জড়িত। সংসার জীবনের শুরুর দিকে ঠিকমত সংসার চলতো না। কখনও জমিতে শ্রম আবার কখনও বা সুন্দরবনের মধ্যে প্রবাহিত বিভিন্ন খাল যেমন, মালঞ্চ, কলাগাছি, দোবেকী, হরি, পশুর খালে থেকে রেনু ধরে বিক্রি করে দিন চালাতো।

দিন, সময় বেশ ভাল যাচ্ছিল। যদিও কোন জমি নেই আছে দুটো উপার্জনের হাত। ২০০৭ সাল আতিয়ার মল্লিকের জীবনে এক লাল দিন। বৈশাখ মাসের ১৪ তারিখ দুপুরের ঘটনা এটি। আতিয়ার মল্লিক বাড়ি থেকে বের হন সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে। মাছের রেনু ধরবেন। সুন্দরবনের একটি খালে মাছ ধরছেন তিন জন মিলে। দুই জন জালের এক পাশে অন্যপাশে আতিয়ার। জাল কিছুক্ষন টানার পর প্রায় তিন হাজার মাছের রেনু ধরেন। এরপর আরও কিছু দূর যাওয়ার পর আতিয়ার ছিল খালের ধারে, হটাৎ গাছের আগালে লুকিয়ে থাকা একটি বাঘ এসে তার মাথায় থাবা মেরে পানির সাথে চেপে ধরে। এরপর আতিয়ারের মল্লিককে বাঘ কামড় দিয়ে ঘাড়ের হাড় ক্ষত করে দেয়। শরীরে দিয়ে রক্ত ভেসে যেতে থাকে। রক্তে গোসল হয়ে যেতে থাকে। সাথে যে দুজন ছিল তারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। আতিয়ার একা-ই বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে থাকে। সে বাঘের গলা পানিতে চেপে ধরে রাখে। বাঘের পুরো মাথাটা পানির নিচে চলে যায়। আতিয়ার মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করেন এবং কারও সাহায্য মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকেন। বাঘের চোখের ভিতরে এবং গালের ভিতরে হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেন।

&dquote;&dquote;একটি সময় বাঘটিও হাঁপিয়ে ওঠে। এরপর এক পর্যায়ে বাঘ আতিয়ারকে ছেড়ে দিয়ে ছুটে দূরে চলে যায়। তারপর কিছু লোক একটি নৌকাতে এসে আতিয়ারকে উদ্ধার করেন। দুই হাতে, দুই কাঁধে, মুখে, পেটে, ঘাড়ে ও মাথায় বাঘের কামড়ের ক্ষত। হাড় ভেঙ্গে গেছে কোথাও কোথাও। এমনি অবস্থা মধ্যে দিয়ে তাকে বাড়িতে এনে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করেন।

এরপর দুই বছর গ্রামের এক কবিরাজ আতিয়ারকে চিকিৎসা করেন। ছয় মাস একটি কথাও বলতে পারিনি সে। কিছু বুঝতে পারতেন না, কাউকে চিনতেও পারতেন না। সারাক্ষণ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বালা যন্ত্রণা করতো। এমন কি কিছু খেতেও পারতো না। বছর দুই পর ধীরে ধীরে আতিয়ার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এখনও প্রতিদিন তিন বেলা ঔষধ না খেলে সারা শরীরে জ্বালা যন্ত্রনা করে। কিন্তু আগের মত আর শ্রম বা নদীতে মাছ ধরকে যেতে পারেনা। আতিয়ার আর স্বাভাবিক ভাবে আগের মত কাজ করতে পারেনা। সংসার চলে তার স্ত্রীর সামান্য উপার্জনে। তার ছেলে মেয়েগুলো অনাহারে দিন কেটে যায়।

কিছু মানুষের চলমান জীবনের সত্যি গল্পগুলো আমাদের চোখে জ্বল এনে দেয় আবার সাহস যোগায় বেঁচে থাকার। এমন একজন সাহসী মানুষ বাঘের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে এটাই বলার মত একটি গল্প।

একটি দোকান বা একটি ভ্যান হলে হয়তো আতিয়ার মল্লিকের বেঁচে থাকার অবলম্বন হবে। মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি দেশের সব মানবিক মানুষগুলোর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছেন।

আসুন সবাই মিলে বেঁচে থাকি। এই সাহসী মানুষটির পাশে দাঁড়িয়ে তার বেঁচে থাকার অবলম্বন হই। যান্ত্রিক পৃথিবীতে এমন একটি সাহসী মানুষকে বাঁচিয়ে রাখলে সেটা আমাদের-ই অহংকার।

কেউ সহযোগীতা করতে চাইলে বিডি২৪লাইভ অনলাইন পোর্টালটির কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হল।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: