‘মুচি’ থেকে এলাকার ত্রাস!
আহমেদ ফেরদাউস খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: ২০ বছর আগে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থেকে গাজীপুরের চন্দ্রায় এসেছিলেন বেঁচে থাকার তাগিদে। কাজ নেন জুতা তৈরির একটি কারখানায়। ছিলেন একজন পিয়ন। পিয়নের চাকরি ছেড়ে নিজেই জুতা তৈরি করে ওই কোম্পানিতে সরবরাহ শুরু করেন। তবে ভাগ্য ফেরে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরুর পর থেকে।
এক যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন জসিম। পুলিশের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় হয়ে উঠেন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় নিজের ইচ্ছে মতো আসামি ফাসিয়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এছাড়াও সরকারি বন বিভাগের জায়গা দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নানা অপকর্মে ১৭টি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। ছিলো গ্রেফতারি পরোয়ানাও। কিন্তু তারপরও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি। ছিলো ক্যাডার বাহিনীও। জুতা কারখানায় পিয়নের চাকরি নেয়ার আগে করেছেন টোকাইয়েরও কাজ। সেই টোকাই এখন কালিয়াকৈরের ত্রাস।
বলছি, কালিয়াকৈরের আতঙ্ক জসিম ইকবালের কথা। জুতা তৈরি করে বিক্রি করার জন্য ‘মুচি জসিম’ নামেই অধিক পরিচিত তিনি।
জানা গেছে, একটি হত্যা মামলায় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে গিয়ে গোটা জীবনটাই বদলে নিয়েছেন জসিম। তার কাছে কেউই নিরাপদ ছিলো না। স্বার্থের পরিপন্থী হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর হামলে পড়তেন তিনি। একে একে ১৭টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি হওয়া সত্তেও প্রকাশ্যেই তিনি ঘুরে বেড়াতেন।
তার কুকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। বাদ যাননি সরকারি কর্মকর্তারাও।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের আর্শীবাদপুষ্ট জসিম ইকবালের রয়েছে শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী। কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বনের অন্তত ৩০০ বিঘা জমি দখল করে পৃথক বেশ কয়েকটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি।
২০১৫ সালের ২১ আগস্ট চন্দ্রায় জাতির পিতা কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলামকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আর এই হত্যার ঘটনায় কপাল খুলে যায় মুচি জসিমের।
রফিকুল হত্যার আসামিদের ধরিয়ে দিতে থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। অল্প সময়ের ব্যবধানে পুলিশের বিশ্বস্ততা অর্জনের সুযোগে হত্যা মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে এলাকার মানুষজনকে জিম্মি করে ফেলেন জসিম। তার সহযোগিতায় কালিয়াকৈর থানার পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানে না এমন মানুষজনকেও ধরে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে আর জসিম মধ্যস্থতা করে তাদের ছাড়িয়ে আনতেন। আর থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ করে টাকা আদায় করতেন।
এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক সেই জসিমের লাশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেল আজ (শুক্রবার) সকালে। জেলার কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের ভুলেশ্বর এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর ছিদ্দিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আজ সকালে কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের ভুলেশ্বর এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে লাশটি জসিম ইকবাল ওরফে মুচি জসিমের কি না তা তারা এখনো নিশ্চিত নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বন্ধুকযুদ্ধে নয়, সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ওই এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। পুলিশ সেখানে গেলে টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দু’দল সন্ত্রাসীর মধ্যে ওই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।’
স্থানীয়রা জানান, ১৭ মামলার পলাতক আসামি জসিম দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। সম্প্রতি কিছু দিন ধরে পলাতক ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বলে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশ জসিমকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি।
এদিকে জসিম গ্রেফতারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে কালিয়াকৈর এলাকায় স্থানীয়রা আনন্দ মিছিল বের করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। মুচি জসিম নিহতের খবরে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: