জিনেরা কি মৃত্যুবরণ করে?
হযরত আদম (আ) সৃষ্টির প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে জিনের সৃষ্টি। জিনের আদি পিতা হলো সামুম। জিন তৈরি করে আল্লাহ সামুমকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তুমি আমার নিকট কিছু কামনা কর। সামুম ২টি বিষয় কামনা করেছিলেন। ১) জিন মানুষকে দেখতে পারবে কিন্তু মানুষ জিনকে দেখতে পারবে না। ২). জিনেরা বৃদ্ধ বয়সে যুবক হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা সামুমের ২টি প্রার্থনা কবুল করেন।
জিনজাতির সৃষ্টি হয়েছে উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। জিনদের বিবেক, বুদ্ধি ও অনুভূতির শক্তি আছে। তাদের আছে ভালো-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা। তাদের মধ্যে রয়েছে ভালো জিন ও মন্দ জিন। পবিত্র কোরআনে জিনদের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমাদের কিছু সৎকর্মশীল ও কিছু এর ব্যতিক্রম। আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১১)
আসমানি কিতাবে যারা বিশ্বাস করে, যেমন: ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান, তারা সবাই জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাসী। পৌত্তলিক, কিছু দার্শনিক ও বস্তুবাদী গবেষক জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। দার্শনিকদের একটি দল বলে থাকে, ফেরেশতা ও জিন রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ভালো চরিত্র ফেরেশতা আর খারাপ চরিত্র জিন বা শয়তান শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়। তাদের বক্তব্য কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘জিন আগুনের তৈরি, মানুষ মাটির তৈরি এবং ফেরশতারা আলো দ্বারা তৈরি’ (মুসলিম শরীফ)। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন আগুনের শিখা দিয়ে’ (সূরা আর রাহমান:১৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে,‘ আর আমি এর আগে জিন সৃষ্টি করেছি প্রখর আগুন দিয়ে’ (সূরা হিজর:২৭)। জিনের শরীর মূলত সূক্ষ্ম। জিনেরা চাইলে যে কোনো রূপ ধারণ করতে পারে। জিনের সবচেয়ে প্রিয় আকার হলো সাপ ও কুকুরের রূপ ধারণ করা। তবে জিনেরা সাপের আকারে চলতে পছন্দ করে। তবে সাপ দেখলেই জিন মনে করার কারণ নেই।
হযরত রাসূল (স) বলেছেন, ‘তিন ধরনের জিন আছে। ১) এক প্রকারের জিন পাখার মাধ্যমে বাতাসে উড়ে। ২) আরেক প্রকারের জিন সাপ, পোকামাকড় ও মাকড়শার আকারে থাকে। ৩). আর তৃতীয় প্রকারের জিন সাধারণ থাকে ও মানুষের সাথে চলাচল করে’ (আত তাবারানী, আল হাকিম ও বায়হাক্কী শরীফ)। এজন্যে রাতের বেলায় সাপ দেখলে প্রথমে তিনটি আওয়াজ করতে হয়। তিনটি আওয়াজের পর সাপ স্থান ত্যাগ না করলে সাপটি মারতে হয়। কুকুর ও গাধা রাতের বেলায় জিনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি অনুভব করে।
জিনের পছন্দনীয় খাবার হলো শুকনা গোবর ও শুকনো হাড়। এজন্য হযরত রাসূল (স) শুকনো গোবর ও হাড়ের উপর মূত্রত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। জিনের সাথে মানুষের বিয়ে হালাল না হারাম এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে সহীহ হাদিসে এসেছে, রাণী বিলকিসের পিতামাতার মধ্যে একজন জিন ছিলেন। এছাড়া অনেক অন্ধবুজুর্গ চলাফেরার সুবিধার্থে জিন মেয়েকে বিয়ে করার ঘটনা শোনা যায়।
জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করা ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে প্রায় ৫০ বার জিন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। জিনজাতির সৃষ্টি, তাদের ইসলাম গ্রহণ, মানুষের আগে তাদের সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে একাধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা আর-রাহমানে জিন ও মানুষকে একসঙ্গে সম্বোধন করা হয়েছে। সোলায়মান (আ.)-এর আমলে জিনদের কাজকর্ম করার তথ্য কোরআনে উল্লেখ আছে। জিনজাতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ ‘সুরা জিন’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল করেছেন। তাই জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করা কোরআন অস্বীকার করার নামান্তর।
প্রশ্ন হলো, জিনেরা কি মানুষের মতো মৃত্যুবরণ করে? এর জবাব হলো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা ও বিশ্বাস মতে, জিনেরা মৃত্যুবরণ করে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হে আল্লাহ! আপনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করেন না। অথচ মানুষ ও জিন মৃত্যুবরণ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩৮৩)
তবে জিনদের মৃত্যুর উপলক্ষ মানুষের মৃত্যুর উপলক্ষের সঙ্গে মিল না-ও থাকতে পারে। সাধারণত জিনেরা জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় পুড়ে মারা যায়। হত্যা ও লড়াইয়েও অনেকের মৃত্যু ঘটে। তাদেরও অসুখ হয়। অসুখেও অনেকের মৃত্যু হয়। আবার অনেকে সাগরে ডুবে মরে। সাগরের তলদেশে চলে গেলে তারা আর ফিরে আসে না। কেউ কেউ মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। জিনেরা যেহেতু বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারে, তাই ধারণকৃত আকৃতিতেও তাদের মৃত্যু হতে পারে।
শয়তানও জিনজাতির অন্তর্ভুক্ত; কিন্তু অন্য জিন তার মতো নয়। তাকে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগ অন্য কোনো জিনকে দেওয়া হয়নি।
প্রসংগত আরেকটি প্রশ্ন এসে যায়। প্রশ্নটি হলো, মৃত জিনদের কোথায় দাফন করা হয়? এর জবাব হলো—যেহেতু রাসুল (সা.)-কে জিনজাতির জন্যও প্রেরণ করা হয়েছে, অতএব তারাও কবর দেওয়ার ইসলামী রীতি অবশ্যই মেনে চলতে বাধ্য। তবে তার ধরন মানুষের অজানা। -তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: