সদরঘাটে বেপরোয়া কুলিরা!
এমদাদ হোসেন। বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। লঞ্চেই বাড়িতে যাতায়াত বেশি করেন। বাড়িতে যাবেন বলে সদরঘাট এসেছেন। সাথে রয়েছে দুটি ব্যাগ। সিএনজি থেকে নেমে টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাধ সাধে কুলিরা। এমদাদ নিজে ব্যাগ দুটি বহনের সামর্থ রাখলেও তা নিয়ে প্রবেশের অনুমতি নেই তার। কুলি দিয়েই নিতে হবে ব্যাগ। এ ব্যাপারে কোন ছাড় নয় কুলিদের।
কুলিদের সাফ কথা ব্যাগ নিজে নিলেও ৫০০ টাকা দিতে হবে। নইলে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। কোন উপায় না দেখে দরকষাকষি করে ৩০০ টাকায় ব্যাগ দুটি কুলি দিয়েই নিতে হল।
শুধু এমদাদই নয়, এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সদরঘাটে লঞ্চ এবং নৌকার লাখ লাখ যাত্রীদের। বিষয়টি প্রশাসনের নাকের ডগার ঘটলেও নিরব তারা।
সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, সদরঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায়ই জোর করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে ঘাটের নীলশার্ট পরা কুলিরা।
এমদাদ হোসেন বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘এটা চাঁদাবাজির মতোই। কুলিরা সবসময়ই এভাবে চাঁদাবাজি করে থাকে। কিছু বলার নেই আমাদের। আমাদের থেকে তারা অনেক বড় ক্ষমতাবান। তারা ক্ষমতাবান না হলে এতো সাহস পায় কিভাবে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এ কাজ করছে বলে অভিযোগ তার।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কুলি বিডি২৪লাইভকে বলেন, ঘাট লিজ রাখতে অনেক টাকা দিতে হয়েছে। এখন যদি যাত্রীরা এভাবে নিজেদের ব্যাগ নিজেরা নিয়েই যায় তাহলে আমরা খাব কী?
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো আর শুধু শুধু টাকা নেই না। ব্যাগ টেনে দিয়ে টাকা নেই। তবে অনেক সময় ব্যাগ নিতে জোর করতে হয়। তবে সেটা চাঁদাবাজি নয়।
দীর্ঘ দিন ধরেই সদরঘাটে কুলিদের অতিষ্ঠে বিরক্ত লঞ্চ ও নৌকার যাত্রীরা। কুলিদের সেল্টার দেওয়ার অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া এ ঘাটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যায়ের চাঁদাবাজি হচ্ছে। চাঁদাবাজির অংশ ভাগবাটোয়ারা করা হচ্ছে প্রভাবশালী চাঁদাবাজদের মাঝে। যার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠছে কুলিরা।
সরেজমিন দেখা যায়, চোখের সামনেই চাঁদাবাজি করছে ঘাটের কুলিরা। যাত্রীদের বহনযোগ্য কোন মালামাল কুলিদের কাছে দিতে না চাইলেও কুলিরা জোর করেই তা বহন করে। অনেকটা জিম্মি করে বহন বাবদ অতিরিক্ত মজুরি আদায় করতেও দেখা যায়। এমনকি দাবি করা টাকা দিতে না চাইলে মালামাল পানিতে ফেলে দেয়ারও হুমকি দেন তারা। এর আগে জেটিতে প্রবেশের মুখে কুলিরা সদলবলে ঘিরে ধরে যাত্রীদের।
এ চাঁদাবাজি শুধু ঘাটেই চলে না। রাজধানীর সদরঘাটের পোর্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বুড়িগঙ্গা নদীতে চলাচলকারী নৌকার মাঝি ও নদীর পাড়ের ফুটপাত থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পুরানো। তবে এ অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না কেউই।
বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট-কালীগঞ্জ ফেরিঘাট, সিমসন ঘাট-কালীগঞ্জ ফেরিঘাট, ওয়াইজ ঘাট-নবাববাড়ি-আগানগর ঘাটে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার নৌকা চলাচল করে।
প্রত্যেক নৌকার মাঝির কাছ থেকে প্রতিদিন খাজনার নামে ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। যদি কোন মাঝি চাঁদার টাকা দিতে দেরি করেন, তাহলে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, অনেক মাঝিকে রাতের বেলায় নৌকা থেকে নদীতেও ফেলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে সদরঘাট এলাকার হকাররা জানান, যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় হওয়া অতিরিক্ত চাঁদার টাকা পুলিশ, ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, স্থানীয় প্রভাবশালী থেকে শুরু করে ঘাট কর্তৃপক্ষের মধ্যে বণ্টন হয়। তাদের চাঁদাবাজি চলে নৌকার মাঝি, ঘাটের ফলের দোকান এবং হকার থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি পর্যায়ে। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথক পৃথক লোক রয়েছে। টার্মিনালে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো ও হকারির ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে চাঁদাবাজরা সেখানে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেয়।
প্রতিদিন প্রতি হকারের কাছ থেকে ২০০ টাকার বেশি আদায় করা হয়। এছাড়া নদীর ওপর ভাসমান দোকানগুলো থেকে আদায় করা হয় ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই মিলে না অটোরিকশা ও রিকশা চালকদেরও।
এ ব্যাপারে সদরঘাট পোর্ট অফিসার যুগ্ম কমিশনার মো. আরিফকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিডি২৪লাইভ/এএফকে/এএইচ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: