ফরম ফিলাপের নামে চলছে অর্থ হরিলুটের বাণিজ্য
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পুরণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন অযুহাতে বোর্ডের দেয়া তালিকার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষাবোর্ডের দেয়া নির্ধারিত তারিখ ১০ ডিসেম্বর নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ফরম পুরণের নির্দেশ থাকলেও দেরিতে নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের অনেকটা বেকায়দায় ফেলে কলেজের দেয়া নিজস্ব নিয়মে ফরম পুরণে বাধ্য করা হচ্ছে বলে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা পর্যবেক্ষণ করতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি শিক্ষার্থীদের। শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের বেধে দেয়া নিয়ম মোতাবেক অর্থ দিতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থী দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।
অন্যান্য পার্শ্ববর্তী কলেজের চেয়ে অনেক বেশি টাকার কথা বলায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্থ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণের জন্য বিজ্ঞান বিভাগে ৬ হাজার টাকা জমা দিয়ে ফরম পুরণের জন্য বলা হয়েছে কলেজের পরীক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে। কলেজের ফরম পুরণের নোটিশে বলা লেখা হয়েছে, প্রতি বিষয় ফি ১০০ টাকা, একাডেমিক ট্র্যান্সক্রিপ ফি ৫০ টাকা, সনদ ফি ১০০ টাকা, রিটেন, ডিটেন্ড ও জিপি উন্নয়ন ১০০ টাকা, রোভার গার্লস গাইড জাতীয় শিক্ষা ফি ২০ টাকা, প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফি ৫ টাকা, প্রতি বিষয় ব্যবহারিক ফি ২৮০ টাকা, আইসিটি ব্যহারিক ফি ৯০ টাকা, কেন্দ্র ফি ৩৫০ টাকা, ভর্তি ফি ১০০ টাকা, সেশন চার্জ ২৫০ টাকা, বকেয়া বেতন (যদি থাকে), কলেজ পরীক্ষা ফি (প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ, বার্ষিক, প্রি-টেস্ট, নির্বাচনী ফি) ৩০০ টাকা, অতিরিক্ত ক্লাস ফি বিজ্ঞান বিভাগ ১ হাজার টাকা, মানবিক ৭০০ টাকা, ব্যবসা শিক্ষা ৮০০ টাকা এবং ১/২ বিষয় ৫০০ টাকা। কল্যাণ ট্রাস্ট ৫০ টাকা, নন কলেজ ফি ১০০ টাকা, রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন ফি এক বিষয় ২৫০ টাকা, স্টাফ কাউন্সিল ফি ৫ টাকা, মসজিদ ফি ২০ টাকা, বিলম্ব ফি ১০০ টাকা, বিবিধ ২০ টাকা, কলেজের ৪০ বছর পূর্তি রেজিষ্ট্রেশন ফি ৬০০ টাকা। তবে সব বিভাগে একই পরিমাণ টাকা নেয়া হচ্ছে তা নয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, কলেজের ৪০ বছর পূর্তির জন্য ৬০০ টাকা অতিরিক্ত ক্লাস ফি ১ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক এবং অন্যান্য যেসব ফি অন্যান্য কলেজে নেয়া হচ্ছে না বা কোন শিক্ষার্থী দিতে না পারলে সাধ্যমত অর্থ নিয়ে ফরম পুরণ করতে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজে বাধ্য করে কলেজের সকল শর্ত পুরণ করে ফরম পুরণ করতে হচ্ছে। না হলে ফরম পুরণ করতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ জেলার বিভিন্ন কলেজে অনেক কম টাকা নিয়ে ফরম পুরণ করা হচ্ছে।
যাদের কোন ফি বকেয়া রয়েছে, তাদের বিষয় আলাদা, কিন্তু যেসব শিক্ষার্থীর কোন ফি বাকি নেয়, তাদের কাছ থেকেই ফরম পুরণের জন্য বিভিন্নভাবে বেশি বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়েই বেশি টাকা দিয়ে ফরম পুরণ করলেও শিক্ষকদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। কলেজের শত শত শিক্ষার্থী ফরম পুরণের নামে আর্থিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কলেজের পরীক্ষা কমিটির বেধে দেয়া নিয়মের বাইরে কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবকও কথা বলতে পারছে না।
এদিকে গত শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) ফরম পুরণ করে এসে কলেজের এক শিক্ষার্থী আবেগাপ্লুত হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘মানবতা আজ কোথায়! প্রকাশ্যে ছাত্রদের কাছ থেকে মানসিক নির্যাতন করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হচ্ছে, এই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫ হাজার ৮০ টাকা নেয়া হয়েছে’ বলে ওই শিক্ষার্থীর ফরম পুরণকৃত রশিদ থেকে জানা যায়। এছাড়া কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে কোন কোন শিক্ষকের অসৌজন্যমূলক আচরণ শিক্ষার্থীদের অত্যাচারের সামিল। কিন্তু শিক্ষকদের ভয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয়।
অন্য কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে ফরম পুরণে নেয়া টাকার বিষয়ে জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ডের বিষয় ফি, বিষয় ফি, একাডেমিক ট্র্যান্সক্রিপ ফি, সনদ ফি, প্রতি বিষয় ব্যবহারিক ফি, আইসিটি ব্যবহারিক ফি, কেন্দ্র ফিসহ বোর্ডের নিয়ম মোতাবেক বিজ্ঞান বিভাগের একজন পরীক্ষার্থীর ৩১১০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা লাগবে। যদি কোন কলেজ কোন অযুহাতে বেশি টাকা নেয়, সেটা সংশ্লিষ্ট কলেজের ব্যাপার। বেশি টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই, যদি কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম পুরণের জন্য বেশি টাকা নেয়া হয়, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা ফরম পুরণ কমিটির প্রধান মো: আজমল হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে না। যাদের কোন ফি বকেয়া রয়েছে, তাদের টাকা বেশি লাগতে পারে। কিন্তু সব ফি দেয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ডের নিয়ম মোতাবেক টাকা নিয়েই ফরম পুরণ করা হচ্ছে। ৪০ বছর পূর্তির টাকা নিয়ে কোন শিক্ষার্থীকে বাধ্য করা হচ্ছে না। নিয়ম মোতাবেকই ফরম পুরণের কাজ চলছে।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: