টনসিলের কারণ-লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:২৯ এএম

গলায় একটু বেশি ব্যথা হলেই আমরা বলে দেই, তোমার তো টনসিল হয়েছে। তো এই টনসিলটা কী? টনসিল হলো আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটা অংশ এবং আমাদের মুখের ভেতরেই চারটি গ্রুপে তারা অবস্থান করে।

এদের নাম লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এই টনসিলগুলোর কোনো একটির প্রদাহ হলেই তাকে বলে টনসিলাইটিস।

টনসিল একটি ভাইরাস জড়িত রোগ। টনসিল আক্রান্ত শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে এটা চলতে থাকলে তাদের শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের চার থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে খুব সক্রিয় থাকে।

শীত আসলেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে কমে যায়। যে কারণে অন্যান্য সময় থেকে রোগ জীবাণু বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে শিশুরা শীতকালীর রোগে আক্রান্ত হয়।

সাধারণত বয়ঃসন্ধিক্ষণ বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী সময়ে বিলীন হয়ে যায়। সাধারণত টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহ ছাড়াও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা জটিল রোগে ভুগে থাকে।

রোগের লক্ষণ:

১। তীব্র গলাব্যথা।

২। মাথাব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা।

৩। খাবার খেতে কষ্ট ও মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়।

৪। কানে ব্যথা হতে পারে।

৫। মুখ দিয়ে লালা বের হয় ও কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যেতে পারে।

৬। মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে।

৭। স্বরভঙ্গ, গলায় ঘাসহ টনসিল স্ফীতি, ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়, গলা ফুলে যাওয়া।কারণ: পুষ্টির অভাব, আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা শীতল পানি বেশি পান করা টনসিলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে স্থানে বাস করলে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে শীতের প্রকোপ বেশি হলে, রোদ থেকে এসে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করলে, গরমে ঘাম বসে গেলে টনসিলের প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা:

১। গলা ব্যথা দূর করতে সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হলো হালকা গরম পানি দিয়ে কুলিকুচি করা। এটি টনসিলে সংক্রমণ রোধ করে ব্যথা কমাতে খুবই কার্যকরী। শুধু তাই নয়, বারবার গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করলে গলায় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের আশঙ্কাও দূর হয়।

২। গ্রিন টিয়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথায় আরাম পাবেন। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সব রকম ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে।ভালো ফল পেতে দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ এই মধু-চা পান করুন।

৩। এক কাপ গরম দুধে সামান্য হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। হলুদে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরী, অ্যান্টিব্যায়টিক এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান গলা ব্যথা কমিয়ে টনসিলের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।

৪। দেড় কাপ পানিতে এক চামচ আদা কুচি দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এরপর এতে মধু মিশিয়ে পান করুন।আদায় থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরী উপাদান সংক্রমণ ছড়াতে বাঁধা দেয়।সেই সঙ্গে গলা ব্যথা কমাতেও এটি খুবই কার্যকরী। দিনে দুই থেকে তিনবার এই মিশ্রণ পান করলে গলা ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।

৫। ২০০ মিলিগ্রাম গরম পানিতে লেবুর রস, এক চা চামচ মধু, আধা চা চামচ লবণ ভাল করে মিশিয়ে নিন। যতদিন গলা ব্যথা ভাল না হয় তত দিন পর্যন্ত এটি ব্যবহার করুন। টনসিলের সম্যসা দূর করার জন্য এটি বেশ কার্যকরী।

৬। মেথি টনসিলের ব্যথা রোধ বেশ উপকারী। এক লিটার পানিতে তিন চা চামচ মেথি দিয়ে জ্বাল দিন। এটি ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট জ্বাল দিতে থাকুন। কুসুম গরম থাকা অবস্থায় এটি দিয়ে কুলকুচি করুন। মেথি গলা ফুলা এবং ব্যথা কমিয়ে দেবে। 

৭। সাধারণত রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠাণ্ডা পানি ও ঠাণ্ডা খাবার পরিহার করতে হবে। সাধারণত গোসলের সময় পানি হালকা গরম পানি করে নিতে হবে। সঠিকভাবে দাঁত ও মুখের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠাণ্ডা খাওয়া পরিহার করতে হবে। সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের চেষ্টা করতে হবে। সঠিকভাবে শরীরচর্চা করতে হবে। ৭ দিনের বেশি সময় হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিতে হবে।

৮। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও প্রতিবন্ধকতা জনিত সমস্যায়-টনসিল ও এডিনয়েড অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া ভালো।

টনসিল অপারেশনের পদ্ধতি:

টনসিল অপারেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। যেমন: ডিসেকশন ম্যাথড, ইলেকট্রকটা, লেজার,  কোবলেশন আলট্রাসনিক।

ডিসেকশন ম্যাথড বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এই উপায়ে অপারেশনের সময় কিছু রক্তপাত হয় এবং রক্তনালিগুলো সেলাই করে দিতে হয়।

লেজার, কোবলেশন এবং আলট্রাসনিক উপায়ে টনসিল অপারেশন অনেক উন্নতমানের কিন্তু ব্যয়বহুল। উপযুক্ত ট্রেনিংপ্রাপ্ত দক্ষ সার্জনের প্রয়োজন।

ইলেকট্রকটারি, লেজার পদ্ধতিতে টনসিল অপারেশনের সুবিধা হলো এটি রক্তপাতহীন, নিরাপদ, আধুনিক এবং কম সময়ে লাগে। ইলেকট্রকটারি, লেজার পদ্ধতিতে টনসিল অপারেশনে কোনও সেলাই লাগে না। অপারেশনের পরই রোগী মুখে খেতে পারবে। দ্রুত আরোগ্য লাভ এবং রোগী শিগগিরই দৈনন্দিন স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যেতে পারে। তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: