প্রেম, বিয়ে ও দেড় মাসের মাথায় ভয়ঙ্কর পরিণতি

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৫১ এএম

আশুলিয়া থানাধীন নিশ্চিন্তপুর এলাকায় গার্মেন্টসে কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয় হোসনে আরা এবং ইউনুস আলীর। একই ফ্লোরে কাজ করার সুবাদে কথা বার্তার এক পর্যায়ে জড়িয়ে পড়ে প্রেম ভালোবাসায়। সম্পর্কের এক পর্যায়ে চতুর ইউনুস হোসনে আরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। রেজিস্ট্রি করতে টাকা লাগবে এই অজুহাতে পরিচয় গোপন রেখে শুধু মৌলভী ডেকে বিয়ে করেন হোসনে আরাকে। হোসনে আরার আগে স্বামী এবং সন্তানের কথা ইউনুস জানলে গোপন করেন নিজের আগের স্ত্রী এবং সন্তানের কথা। 

দুই হাজার আটশত টাকা মাসিক ভাড়া হিসেবে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় আলম মিয়ার বাসার একটি রুম ভাড়া নেয় ইউনুস আলী। সেখানেও দেয়নি কোন পরিচয় পত্র। মাস খানেক এক সাথে থাকলেও মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত তাদের। সেই সাথে সন্দেহের বাসা বাধে পর পুরুষের সাথে স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের। 

বিষয়টি তিনি শেয়ার করেন তার এক নিকট আত্মীয়ের সাথে। তার পরিকল্পনা এবং পরামর্শ মতে স্ত্রীকে খুন করে পালানোর পরিকল্পনা করে ইউনুস আলী। সেই পরিকল্পনা থেকেই গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করে স্ত্রীর লাশ বাথ রুমে রেখে স্ত্রীর মোবাইল, কানের দুল এবং নুপুরসহ রুমের বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে আগের স্ত্রীর বাড়ি নাটোর জেলার সিংড়া থানায় লাড়ুয়া হাতিয়ান দহ পালিয়ে চলে যায় ইউনুছ আলী। 

ঘটনার দুই দিন পর ঘরের ভেতর থেকে লাশের গন্ধ বের হলে এলাকাবাসী আশুলিয়া থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। সংবাদ পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ উক্ত ঘরের তালা ভেঙ্গে বাথ রুমের ভেতর থেকে ভিকটিম হোসনে আরার অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে। ভিকটিম হোসনে আরা (৩৫) রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খিয়ারপাড়া গ্রামের মৃত মনিরুজ্জামানের মেয়ে।    

উক্ত ঘটনায় ভিকটিম এর বোন স্বপ্না বেগম বাদী হয়ে ইউনুস আলীর জায়গায় ইউসুফ নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করলেও সেখানে ঠিকানা উল্লেখ করা হয় অজ্ঞাত হিসেবে। আশুলিয়া থানা পুলিশ তিন মাস মামলাটি তদন্ত করলেও তেমন কোন অগ্রগতি না থাকায় মামলার বাদী লোক মুখে পিবিআই এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত হয়ে পিবিআই ঢাকা জেলা অফিসে এসে মামলাটি স্ব-উদ্যোগে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

মামলাটি পিবিআই এর শিডিউল ভুক্ত হওয়ায় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) সালেহ ইমরান গত ১১ ডিসেম্বর মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করেন। 

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সালেহ ইমরান জানান, তদন্তভার গ্রহণ করে স্থানীয় সোর্স এবং প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে পারি অভিযুক্ত ব্যক্তি ইউসুফ নয় তার আসল নাম ইউনুস আলী (২৫)। তিনি পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার চান্দাই পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত বাবু প্রামানিকের ছেলে। মামলার ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ইউনুস এর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে ঘটনার সাথে তার সম্পৃকতা নিশ্চিত হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) নাটোর জেলার সিংড়া থানায় লাড়ুয়া হাতিয়ানদহ থেকে গ্রেফতার করেন বলেও জানান তিনি। 

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ইউনুস স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করেছে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার স্ত্রী ভিকটিম হোসনে আরার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং পায়ের নুপুর উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

পিবিআই ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান বারী নূর জানান, মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। আসামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার সাথে আরও কারো সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। 

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: