কিশোরগঞ্জে বিনম্র শ্রদ্ধায় মাতৃভাষা দিবস পালিত
পলাশ-শিমুলের রক্তলাল মিলেছে শহীদ বেদীতে। কৃষ্ণচূড়ায় রক্তের লাল আজ আরও গাঢ়। আর ভোরের সূর্যও যেন লালে লাল। রক্তমাখা বর্ণমালায় অর্ঘ্য দিতেই এত আয়োজন! মায়ের ভাষা রক্ষায় যারা বুকের রক্ত ঢেলেছিলেন, জাতি আজ তাদের শ্রদ্ধা জানাতেই সাজিয়েছে ফুলের অর্ঘ্য। একুশ মানে রক্তস্নাত ভোরের সূর্য। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানেই বাংলা জয়ের প্রথম প্রহর। মা-মাটি-মানুষের আবেগের বিস্ফোরণ। একুশ মানে জাতীয়তাবোধের চেতনায় শির উঁচু করে দাঁড়ানো। শোক ও শ্রদ্ধার মিশেলে তৈরি এক চেতনার নাম একুশ। তাইতো একুশ এলেই বাঙালি জাতি শানিত করে নিজস্ব চেতনাবোধ। সে চেতনাবোধের জায়গা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি স্মরণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
আজ (২১ শে ফেব্রুয়ারী) মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যেন অধিকার আদায়ে বাঙালির জীবনে প্রথম সূর্যোদয় এদিন। রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। একুশের প্রথম প্রহরেই ফুলে ফুলে ভরে উঠছে দেশের শহীদ মিনারগুলোর বেদী। দিনব্যাপী ফুল দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরিবে জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের।
ৎশহীদ দিবসে শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে বাঙালি তার দেশমাতৃকার চেতনাদীপ্ত শপথ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে কোনোই কার্পণ্য থাকে না কিশোরগঞ্জবাসীর। দল-মত, জাতি-ধর্ম, আবাল-বৃদ্ধা নির্বিশেষে সকলেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে অধীর আগ্রহে থাকেন এদিন। নগ্নপায়ে ফুলের ডালায় হাতে হাত রেখে গেয়েছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। আর তারই ধারাবাহিকতায় শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে সারাদেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৯ পালিত হয়েছে। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের সর্বস্থরের হাজারো মানুষ।
একুশের প্রথম প্রহরে কিশোরগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ সরকারি গুরুদয়াল কলেজ মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে জেলা প্রশাসন, কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ, জেলা পরিষদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সারাদেশের ন্যায় যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপনের লক্ষে বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ও জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চেীধুরী রাত ১২টা ১ মিনিটে জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। এরপর পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. মো: জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. কামরুল আহসান শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক এড. এম. এ. আফজাল, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রসাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামিল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো: হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, জেলা সিভিল সার্জন মো: হাবিবুর রহমান, ডেপুটি সিভিল সার্জন মো: মুজিবুর রহমান, কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার মো: মাহাদি হাসান, উপজেলা চেয়ারম্যান এড. শরিফুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন নাহার লুনা, জেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার মো. আসাদউল্লাহ, জেল সুপার মো: বজলুর রশিদ, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বকুল, বণ ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত করিম অমি, কিশোরগঞ্জ পুলিশ নারী কল্যাণ (পুনাক) সমিতির সভানেত্রী মাহফুজা নাজনীন দিষার চৌধুরী, সহ-সভানেত্রী নার্গিস পারভিন, সাধারণ সম্পাদিকা মোসা. তাছকিরা, জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি শফিকুল হক ঢালী লিমন, সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন মোল্লা, ৭১ এর প্রজন্মের সভাপতি মো. মহসিন, ‘হৃদয়ে কিশোরগঞ্জ’ মানবাধিকার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মো. এস. হোসেন আকাশ, সদস্য আবদুর রহিম, সুজন দাস, সোহাগসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর ধারাবাহিকভাবে সরকারি-বেসরকারি সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শহীদ মিনারসহ আশপাশের পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় কিশোরগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে একে একে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এবং নানা শ্রেনী-পেশার মানুষের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হয় স্মৃতির মিনার। নেয়া হয় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। সকল সরকারি-বেসরকারি-আধা সরকারি ভবন, দোকানপাঠসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে উত্তোলন করা হয়।
বাদ যোহর সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিডি২৪লাইভ/এজে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: