বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবি, উত্তাল রাজপথ

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০১৯, ০২:৫৪ পিএম

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বাস চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এক ছাত্র নিহতের ঘটনায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় সু-প্রভাত বাসের চাপায় বিইউপি'র শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন।

এ ঘটনায় রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। তারা প্রগতি সরণি অবরোধ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিইউপির একটি বাস সকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আবরার বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন। এ সময় পাশে থাকা গাজীপুরগামী সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় প্রথমে ১২ দফা ও পরে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক গেট এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের কাছে যান ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া যত দ্রুত সম্ভব মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। সেইসঙ্গে লিখিতভাবে দাবিগুলো উত্থাপনের অনুরোধ জানান।

মেয়রের অনুরোধে বিইউপি শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হচ্ছে-

১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতি মাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।

২. আটক চালক ও সম্পৃক্ত সকলকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৩. আজ থেকে ফিটনেস বিহীন বাস ও লাইসেন্স বিহীন চালককে দ্রুত সময়ে অপসারণ করতে হবে।

&dquote;&dquote;৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সকল স্থানে আন্ডারপাস, স্পিড ব্রেকার এবং ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়ক হত্যার সাথে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ী অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রীছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং

৮. ছাত্রদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।

বিইউপি'র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অনিক হাসানসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন ও লিখিতভাবে প্রথমে ১২ দফা ও পরে ৮ দফা দাবি পেশ করেন। মেয়র ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান।

এসময় ঘটনাস্থলে যান বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব সারোয়ার। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। যে দাবিগুলোতে আইনি জটিলতা আছে সেগুলোর আইনগত দিক দেখে ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় এক বাসচালককে হাতেনাতে ধরে মারধর করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেই চালক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে পুলিশে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। সকালের দিকে কিছু বাস এই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে চাইলে তারা সেগুলোকে রাস্তায় আটকে দেন। বাসগুলো সেখানেই রাখা আছে। এর মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকা ওই বাসগুলোর মধ্যে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগতে দেখা যায়।

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরাই বাসে আগুন দিয়েছেন বলে মনে করা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ব্যক্তিকে শিক্ষার্থীরা ধরে ফেলে। এসময় তাকে মারধর করা হচ্ছিল।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ওই লোক একটি বাসের চালক। সে বাসে আগুন দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো বাসে কোনো ধরনের ভাঙচুরও করা হয়নি। পরে শিক্ষার্থীদেরই ওই বাসের আগুন নেভাতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে হোটেল র‍্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তায় জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাসের রেষারেষিতে দু’জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠে রাজধানীসহ পুরো দেশ। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভের পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শিক্ষার্থীরা। সেই সময় সড়কে প্রতিধ্বনিত হয় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: