রাঙ্গামাটির ব্রাশফায়ারের মর্মান্তিক বর্ণনা দিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তথাপি শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটে পার্বত্য অঞ্চলে ফেরার পথে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীর হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৮ জন। হৃদয়বিদারক সেই ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বর্ণনায়।
সেই ঘটনার ভয়াবহতা নিয়ে ইমদাদুল হক তালুকদার নামে ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফেসবুকে পোস্ট দেন। ‘বাঘাইছড়ি থেকে বলছি’ শিরোনামে ওই ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
পাঠকদের জন্য সেই ফেসবুক পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
‘এসেছিলাম নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে। ভোট বর্জনের মাধ্যমে ক্ষুব্দ প্রার্থী সরে দাঁড়ালেন শান্তিপূর্ণভাবে। সারাদিন খুব স্বাভাবিক, শান্ত পাহাড়ি জনপদ। সন্ধায় হুট করে রক্তারক্তির খবর! দৌড়ে গেলাম হাসপাতালে। তিনটি চান্দের গাড়ীতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ, হাসপাতালের সিড়ি আর মেঝেতে রক্তের ছটা আর ভেতরে তীব্র আর্তনাদ। পুরো ওয়ার্ডে রক্তাক্ত মানুষ; কিছু মৃত, কিছু আর্ত-চিৎকারে হতবিহ্বল। কান্না, রক্ত, অসহায়ত্ব, মাতম। ৬ জন ততক্ষণে নিথর মৃত। আশংকাজনক ১১ জন ভয়াবহ আশংকাজনক। বাকিরা চিকিৎসারত।’
‘ইউএনও স্যার, আমি, আর আরেক ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল দিকবিদিকশুন্য ছুটছি রক্তাক্ত সিড়ি, করিডোর আর ওয়ার্ডে। কাতরদের পাঠাতে হবে হেলিকপ্টারে করে চট্রগ্রাম। তাহলে হয়তো বাঁচবে। আমি পুলিশ সাথে নিয়ে চিৎকার করছি গাড়ীযোগে হেলিপ্যাড এ পাঠাতে। আমাদের গাড়ীতে একটার পর একটা গুলিবিদ্ধ মানুষকে পাঠাচ্ছি। তারপর হেলিপ্যাডের দিকে যাত্রা। ৬ টি লাশ হাসপাতালে রেখে সবুজ হেলিপ্যাডের মাঠে আমরা। লাইন ধরে শুয়ে থাকা বিক্ষত মানুষ। কারো বুক থেকে, কারও মগজ থেকে, কারো উরু থেকে, কারও ডানা থেকে সস্তা রক্ত ঝরছে। প্রথম দফায় ৬ জনকে উড়ানো হলো। ’
‘তার মধ্যে পোলিং অফিসার (প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) আবু তৈয়বও ছিলেন। তার বড় ভাই বারবার কান্নায় ভেংগে পড়ছিলেন আর আমাকে ধরে বলছিলেন, ‘স্যার, আমার ভাইটাকে বাঁচান; আমার ভাই ছাড়া আমার বেঁচে থেকে লাভ কী। আমার ভাইটা কিছুদিন আগে চাকরি পেয়েছে স্যার। অনেক কষ্টে আমি ভাইটারে পড়ালেখা শিখাইছি। আমি নিরুত্তর’।
‘কিছুক্ষণ পর জনা গেলো তৈয়ব আকাশপথে মারা গেছে। ওর ভাই আমাকে এসে কেবল বললো, ‘স্যার, আপনে না কইছিলেন আমার ভাইয়ের কিচ্ছু হবে না। স্যার, আমার ভাই তো নাই স্যার।’
‘এদিকে অনেকের মাঝে আনুমানিক ১০ বছরের শিশু, চান্দের গাড়ীর হেলপার সাদ্দাম কাতরাচ্ছে। ওর লিঙ্গ ভেদ করে গুলি বের হয়ে গেছে। কপালে, মাথায় হাত বুলাতে গিয়ে কেমন গলা ধরে এলো।’
‘সাড়ে এগারোটায় শেষ লটে সবাইকে বিদায় জানিয়ে শূন্যতা নিয়ে ফিরে এলাম।’
‘এখন পাহাড়ে শূন্যতা, জোৎস্না স্নিগ্ধ আলোয় ছাপিয়ে রেখেছে অরণ্য। অরণ্যের গহিনে পাখিরা ঘুমোচ্ছে, আর চোখে জল নিয়ে জেগে আছে আর্তদের স্বজনেরা।’
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: