বৈসাবি মেলার নামে চলছে জুয়া ও হাউজি খেলা

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১২ পিএম

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বৈসাবি মেলার নামে র‍্যাফেল ড্র লটারি, হাউজি, অশ্লীল নাচগান সহ অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। আর এতে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও জড়িয়ে যাচ্ছে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এদিকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উপরও প্রভাব ফেলছে এই মেলা এমনটাই আশংকা প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও ৩ নং কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক জুড়েও মেলার নামে এই জুয়া ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়েছে নিন্দার ঝড়।

মেলাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে করা কিছু মন্তব্য পাঠকের জন্য নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হল;-
এইচ এম কামরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে মন্তব্য করে লেখেন, ‘দৈনিক গড়ে দীঘিনালা বাসি ২০ লাখ টাকা জুয়া খেলে হারাচ্ছে.... এসব অনতিবিলম্বে বন্ধ করা হউক.... প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সু-দৃষ্টি কামনা করছি। বিঃদ্রঃ যারা এইসব লটারি ও হাউজি খেলছেন তাদের ৯০% ই নিন্মআয়ের মানুষ... তারা একদিকে যেভাবে নিজেরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই দ্রুত এসব খেলা বন্ধ করে দিতে হবে। ভবিষ্যতে এসব খেলা যেন চালাতে না পারে সেজন্য প্রশাসন কে কঠোর ভূমিকা পালন করা চাই।’

জামান কমেন্টে লেখেন, ‘শুনেছি বিনোদন নাকি মনের খোরাক, এখন দেখছি দিনোদনের নামে চলে রমরমা ব্যবসা, ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের তাতে কার কি যায় আসে.. যারা সুবিধাভোগী তারা তো ভালোই আছেন...।’

ইসমাইল হোসেন লেখেন, ‘হাউজি ও লটারি দুটো জুয়াচুরি ১০০%বন্দ হওয়া জরুরি। প্রশাসনের দিষ্টি কামনা করছি।’

এই বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৩নং কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নওশাদ পাটোয়ারী বিডি২৪লাইভকে বলেন, বৈসাবি মেলার নামে এখানে র‍্যাফেল ড্র, হাউজি, অশ্লীল নাচগানসহ যে জুয়া খেলা চলছে তা অচিরেই বন্ধ করা উচিত। এই এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সহ এলাকার সাধারণ জনগনও এই জুয়া খেলাগুলোর থাবায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাব এই জুয়া খেলাগুলো পুরু এলাকায় ছড়ানোর আগেই যেন অচিরেই এই মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

লিখিত অভিযোগ দায়েরকারী  দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও ৩নং কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিডি২৪লাইভকে বলেন, কবাখালী ইউনিয়নাধীন সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গায় অনুমোদন বিহীনভাবে বৈসাবি মেলার নামে দৈনিক তামান্না র‍্যাফেল ড্র এবং ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে অশ্লীল নৃত্য ও গান পরিবেশন, জাদু খেলা, হাউজির নামে অবাধে জুয়া খেলা, এবং অসামাজিক কার্যকালাপ পরিচালিত হয়ে আসছে। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় তারা বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে যায়। কিন্তু এখানে মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে আমার কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে যে, তারা সারাদিন কাজ করে যা আয় করেন র‍্যাফেল ড্র টিকেট আর রাতে হাউজি খেলে তা নষ্ট করে ফেলছেন। আর এতে করে সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার ঘটনা গুলো বাড়ছে।

এছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও মেলাতে গিয়ে লটারি ও হাউজি খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ছে,  তাদের পড়াশোনা ফাকি দিচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক বিষয়। এছাড়া সামনে রমজান মাস। জুয়া খেলায় খরচ করা টাকা গুলো তারা রমজান মাসে রোজা রাখা ও সেহরি খাওয়ায় ব্যয় করতে পারবে। তাই আমি এই মেলা বন্ধের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ হয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা আশা করি প্রশাসন এই অবৈধ মেলাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করে দিবে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বিডি২৪লাইভকে বলেন, লিখিত অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি। বেশকিছু শর্তের অনুকূলে শান্তি-সম্প্রীতি ধরে রাখতে আমরা মেলার অনুমোদন দিয়েছিলাম। এখন মেলার আয়োজকরা যদি মেলার নামে লটারি, হাউজি এবং অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ে তাহলে আমরা মেলা বন্ধ করে দিব।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: