গান আমার রক্তে মিশে আছে: লাবিবা

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০২:৫৫ পিএম

গেল ছয়মাস আগে শুরু হওয়া শিশুদের গানের উৎসব নির্ভর রিয়েলিটি শো ‘এসিআই ফান কেক-চ্যানেল আই গানের রাজা’র গ্র্যান্ড ফিনালে অর্থাৎ মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মলেন কেন্দ্রে। সারাদেশের প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো আয়োজিত চ্যানেল আই ‘গানের রাজা’র মুকুট জয় করে নেন খুলনার মেয়ে ফাইরুজ লাবিবা।

চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে ৫ লাখ টাকা। এই আয়োজনে প্রথম রানার্সআপ হয়েছেন নেত্রকোনা জেলার শফিকুল ইসলাম এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছেন ময়মনসিংহের সিঁথি সরকার। বিজয়ীর মুকুট পড়ার পর থেকে অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা পাচ্ছেন লাবিবা। বিজয়ী হওয়ার পর বিডি২৪লাইভের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের স্বপ্ন ও ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেন ফাইরুজ লাবিবা। তার সঙ্গে আলাপের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল-

বিডি২৪লাইভ: প্রথমবারের মতো চ্যানেল আই আয়োজিত ‘গানের রাজা’র মুকুট জয় করার পর আপনার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাই...?
ফাইরুজ লাবিবা: আমি অনেক অনেক আনন্দিত। অনেক বেশি ভালো লাগছে। ফলাফল ঘোষণার সময় খুব নার্ভাস লাগছিল, কি যেন হয় কিন্তু আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করার পর আমি একদম ব্ল্যাঙ্ক আউট হয়ে গিয়েছিলাম। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। চ্যানেল আইয়ের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা আমাকে এমন একটা প্ল্যাটফর্মে সুযোগ দেওয়ার জন্য। এখান থেকেই আমার পথচলা শুরু, সবার দোয়া নিয়ে আমি আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতে চাই। আমি কখনও হারিয়ে যেতে চাই না। সবার মাঝেই আজীবন গান নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

বিডি২৪লাইভ: গানের রাজার পুরো জার্নিটা কেমন ছিল?
ফাইরুজ লাবিবা: সত্যি বলতে অনেক ভালো লেগেছে। লাস্ট তিনমাস ধরে ক্যাম্পে আছি। আমি কখনও এতদিন পরিবারের বাইরে থাকিনি। আমার পরিবারকে খুব মিস করতাম। প্রথমদিকে একটু খারাপ লাগলেও পরে অভ্যাস হয়ে যায়। ক্যাম্পে যারা ছিলেন তার সবাই খুব আন্তরিক এবং আমাদের সবার প্রতি খুব যত্ন নিতেন। হালিমা আপু, মনি আপু, শাহীন ভাইয়া তারা সবাই আমাদের খুব কেয়ার করতেন। এই তিনমাস ক্যাম্পে থেকে একটা পরিবারের মত হয়ে গিয়েছি আমরা সবাই। এখন তাদেরকে ছেড়ে যেতে হবে ভেবে একটু খারাপ লাগছে।

বিডি২৪লাইভ: এই বিজয়ের পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
ফাইরুজ লাবিবা: আমার আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে আমার গ্রুমারদের অবদান সবচেয়ে বেশি। গ্রুমার যারা ছিলেন তারা সবাই খুবই ভালো ছিলেন, অনেক কেয়ার করতেন। কোনকিছু না বুঝলে আমাকে বুঝিয়ে দিতেন। আমাদের সবাইকে নিজেদের ভাইবোনের মত কেয়ার করতেন, ভালোবাসতেন। বাপ্পী ভাইয়া, তৃষা আপু, আনিসা আপু তারা সবাই অনেক অনেক হেল্প করেছেন। তারা এতটা কেয়ার আর সহযোগীতা না করলে হয়তো আমি আজকের এই অবস্থানে আসতে পারতাম না। তাদের সবার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

বিডি২৪লাইভ: আপনি তো এখনও অনেক ছোট। উপস্থিত যারা ছিলেন সিনিয়র শিল্পী তাদের সামনে গান গাইতে আপনাকে নার্ভাস মনে হয় নি একদম। এর কারণ কি?
ফাইরুজ লাবিবা: আসলে ভিতরে ভিতরে আমি অনেক নার্ভাস ছিলাম কিন্তু সেটা বাইরে আনিনি। এস আই টুটুল স্যারের সঙ্গে স্টেজে গান করা ও পারফর্ম করার কথা আমি কখনও ভাবিওনি। সবার প্রশংসা পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। আর রুনা লায়লা ম্যামের সামনে গান করা তো অনেক বড় ব্যাপার। একটু ভয় কাজ করছিল।

&dquote;&dquote;

বিডি২৪লাইভ: গান নিয়ে সামনের পরিকল্পনা কি?
ফাইরুজ লাবিবা: এখান থেকে তো কেবল শুরু আমার পথচলা। সামনে গান নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যেতে চাই। অনেকে বিজয়ী হওয়া বা একটা প্ল্যাটফর্ম থেকে বের হওয়ার পর হারিয়ে যায়। কিন্তু আমি কখনও সেটা করতে চাই না। গানই আমার স্বপ্ন, গান নিয়েই আজীবন সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। ইমরান স্যারের সঙ্গে কিছু গান করবো সামনে আর চ্যানেল আইয়ের কিছু গানের কাজ করবো। এরপর দেখা যাক কি হয়! আমি থেমে যেতে আসি নি, আমার লক্ষ্য অনেকদূর।

বিডি২৪লাইভ: বিজয়ী হওয়ার পরপরই নিজের এই সময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ইমরানের সঙ্গে মৌলিক গান করার সুযোগ পেয়েছেন এরইমধ্যে। এই বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
ফাইরুজ লাবিবা: আমরা যারা সেরা পাঁচে ছিলাম তাদের সবার জন্য ইমরান স্যার গান করবেন বলে কথা দিয়েছেন এটা আসলেই আমাদের জন্য অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। আসলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে হয়তো এগুলো সম্ভব হতো না। আমি সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। একটা প্ল্যাটফর্ম থেকে বের হওয়ার পর অনেকেরই নিজের গান বের হতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আর সেখানে চূড়ান্ত পর্বেই এমন সুখবর পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। স্যার বলেছেন আমাদের নিয়ে গান করবেন, সবসময় আমাদের পাশে থাকবেন এটা আসলেই অনেক বড় পাওয়া। এখনও ভয়েস দেওয়া হয় নি, সামনে দিব। আমি খুবই আনন্দিত। আর নিজের অবস্থানটাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করবো সবসময়।

বিডি২৪লাইভ: কোন ধরনের গান গাইতে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
ফাইরুজ লাবিবা: আমি সবধরনের গান গাইতেই পছন্দ করি। আসলে এই অনুষ্ঠানে আসার আগে রক গান করিনি। আমি সফট আর মেলোডি গান করতাম। এখানে এসে রক গান, ছবির গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত এগুলা করলাম। আর স্টেজে উঠলে আমি কি যেন হয়ে যাই নিজেও জানিনা। আসলে সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে। আজকের অবস্থানও তারই দান।

বিডি২৪লাইভ: আপনার গানের হাতেখড়িটা কিভাবে হয়েছে?
ফাইরুজ লাবিবা: আমার যখন দুই বছর বয়স তখন থেকেই আমি গান শিখছি। আমার গানের হাতেখড়ি হয় খুলনার আজিজুর রহমান স্যারের কাছ থেকে। এরপর হাফিজুর রহমান স্যারের কাছে গান শিখি। তারপর ঢাকায় ছন্দা ম্যামের কাছে কিছুদিন গান শিখেছিলাম। আমার মেলোডি আর সফট গান গাইতে খুব ভালো লাগে। আর আমার বড় বোন ফাইরুজ মালিহাও গান করে। সে চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ ২০১৩ এর চ্যাম্পিয়ন ছিল। আপুর কাছেই গান শিখি এখনও। আমার পরিবারের সবাই গান করে। বাবা-মা শখে গান করে আর আমার ফুপ্পিরাও গান করে। সেইদিক থেকে বলতে গেলে আমার রক্তেই গান মিশে আছে।

বিডি২৪লাইভ: আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। আর আপনার এমন সাফল্যে আপনার পরিবারের অনুভূতি কি?
ফাইরুজ লাবিবা: আমি খুলনায় থাকি। খুলনার সরকারি করোনেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি এখন। আমার পরিবারে আমার বাবা, মা আর আমার বড় বোন আছে। আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি। সেইসাথে আমার ফুপ্পিরা আমেরিকায় থাকে, তারাও আমার গানের রাজার প্রোগাম দেখতো। কালকেও দেখেছে। আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তারা সবাই অনেক বেশি খুশি হয়েছে। এখন আমার কাছ থেকে সবাই ট্রিট চাচ্ছে। এখন আমি তো আর আমেরিকায় গিয়ে ট্রিট দিতে পারবো না তাই ফুপ্পি আর খালারাই ট্রিট দিয়ে দিচ্ছে। সবার এত আনন্দ দেখে আমারও খুব ভালো লাগছে। আর আগামীকাল বাড়ি যাব এটা ভেবে অনেক বেশি ভালো লাগছে। তিনমাস পর বাড়ি যাচ্ছি। এখানের সবাইকে খুব মিস করবো।

বিডি২৪লাইভ/আইএন/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: