দুই যুগ পর প্রাণ ফিরছে ‘মরা’ ধানসিঁড়িতে

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:০০ এএম

দীর্ঘ দুই যুগ প্রাণহীন থাকার পর অবশেষে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের সেই ‘মরা’ ধানসিঁড়ি নদীতে। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের বাঘরি ও ঝালকাঠির সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ছত্রকান্দা এলাকা থেকে একযোগে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বহুল প্রতীক্ষিত ধানসিঁড়ির খননকাজ শুরু হওয়ায় নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বস লক্ষ্য করা গেছে।

ধানসিঁড়ির খননকাজ শেষ হলে দুই যুগ ধরে বন্ধ থাকা ঝালকাঠি-রাজাপুর নৌপথের যোগাযোগ আবার শুরু হবে। ফলে খুব সহজে ও অল্পখরচে জেলা সদর দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করতে পারবেন। পাশাপাশি কৃষকদের এক ফসলি জমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। এছাড়া জেলেদের মাছ ধরাসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষ নদীর সুফল ভোগ করতে পারবেন। অপরদিকে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি নদীতে প্রাণ ফেরাতে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সবশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি ওই জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘হত্যার শিকার নদী’ শিরোনামে মরা ধানসিঁড়ির কথা তুলে ধরা হয়। ফলে ধানসিঁড়ি খনন প্রকল্পের কাজ আরও ত্বরান্বিত হয়।

জানা যায়, ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিশখালী ও গাবখান চ্যানেলের মোহনা থেকে ধানসিঁড়ি নদীর উৎপত্তি। সেখান থেকে সারে ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজাপুর খালে মিশেছে নদীটি। রাজাপুর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে জাঙ্গালিয়া নদী হয়ে আবার বিশখালীতে মিশেছে ধানসিঁড়ির পানিপ্রবাহ। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে ধানসিঁড়ির তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তাই মরা ধানসিঁড়িতে প্রাণ ফেরাতে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ধানসিঁড়ি খনন প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন থেকে রাজাপুর সদরের বাঘরি পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হচ্ছে। ৪টি এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ধানসিঁড়ি সারে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৭০ ফুট চওড়া, ১০ ফুট গভীর ও তলদেশ ২০ ফুট চওড়া করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে রাজাপুর অংশের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা খনন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।

সম্প্রতি সরেজমিনে খনন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেছে। ধানসিঁড়ি পাড়ের চর ইন্দ্রপাশা গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম। তিনি নিজ বাড়িতে উঠানে বসে পুরনো জাল মেরামত করছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিম বলেন, বহু বছর ধানসিঁড়িতে পানি ছিল না। ফলে কৃষক, জেলে, মাঝিসহ সাধারণ মানুষ দারুণ কষ্টে ছিল। খনন শেষ হলে ধানসিঁড়িতে পানি আসবে। তাই মাছ শিকারের জন্য জাল মেরামত করছি। দীর্ঘদিন পরে হলেও অবশেষে নদীটি খনন হওয়ায় আমরা ধানসিঁড়ি পাড়ের মানুষেরা দারুণ খুঁশি।

হাইলাকাঠি গ্রামের কৃষক মো: সেলিম বলেন, আমরা ছোটবেলায় ধানসিঁড়ির সৌন্দর্য দেখেছি। এ নদীকে ঘিরে আমাদের বহু আনন্দঘন স্মৃতি রয়েছে। আবার ধীরে ধীরে অপরূপ ধানসিঁড়ির মৃত্যুও দেখেছি। অবশেষে ধানসিঁড়িতে আবার পানি আসছে ভেবেই ভালো লাগছে।

রাজাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রিয়াজউল্লাহ বাহাদুর বলেন, ধানসিঁড়ি খনন সম্পন্ন হলে দুই পাড়ের কৃষিজমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। ফলে কৃষি উৎপাদনে নদীটি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোড্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আতাউর রহমান বলেন, ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫১ টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদী এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কাজটি যেন সঠিক ও সুন্দরভাবে হয় আমরা সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো: হামিদুল হক বলেন, খননকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি দ্রুতই কাজ শেষ হবে। এরপর ধানসিঁড়ি আবার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। দুই পাড়ের মানুষের আর পানির অভাব থাকবে না। এছাড়া খনন এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কাজ করা হবে। ফলে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের ভিড় বাড়বে ধানসিঁড়ি পাড়ে।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: