অনিশ্চয়তার দিকে ঢাবির অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা
মোঃ ইলিয়াস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত হওয়ার আগে সুনাম অক্ষত রেখে ধারাবাহিক ভাবে ভালো ফলাফল করে আসছিল রাজধানীর সরকারি ৭ কলেজ। ঢাবির অধিভুক্ত হওয়ার পর এসব কলেজের ফলাফলে বেশ প্রভাব পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পর ইতোমধ্যে ২ বছর ২ মাস পেরিয়ে গেলেও ৭ কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। অভিযোগ রয়েছে, অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষর্থীদের ‘গণহারে ফেল করানোর’ হচ্ছে। এমন কি তাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এদিকে প্রশ্নপত্র তৈরি ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ণে ঢাবি শিক্ষকদের একক আধিপত্য থাকায় সেই সুযোগে তারা ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে বলে অভিযোগ উঠছে।
সিদ্দিকুরের কথা এখনও কেউ ভোলে নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে দুটি চোখ হারিয়েছেন। অধিভূক্ত হওয়ার পর বিক্ষোভ, মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচি এবং অবস্থান কর্মসুচি পালন করে আসছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ২ বছর ২ মাস পেরিয়ে গেলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কোন সুফল ভোগ করতে পারছে না।
শিক্ষার্থীদের দাবি, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। সর্বশেষ পরীক্ষায় ঢাকা কলেজ বাংলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ২১৬ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সব বিষয়ে পাশ করেছেন মাত্র ৩ জন। রসায়নে ৪৮ জনের মধ্যে ৪০ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। ঢাকা কলেজ ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ২৪৮ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাশ করেছে মাত্র ১৩ জন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- ইডেন কলেজের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের ৩০০ জন শিক্ষার্থী প্রথমবর্ষে শুধু বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ফেল করায় পুনরায় সবার খাতা নিরীক্ষণের আবেদন করেন। পরবর্তীতে প্রকাশিত ফলাফলে ৩/৪ জন ছাড়া সবাই পাশ করে।
সেশনজট নিরসন, ক্রটিপূর্ণ ফল সংশোধন এবং ফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রিতা দূর করাসহ নানা সমস্যা সমাধানের দাবিতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সড়ক অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজে শিক্ষার্থীরা।
সড়ক অবরোধ করে সেশন জট, ত্রুটিপূর্ণ ফলাফলের সমাধানসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় সড়ক আটকে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এসময় তারা সাত কলেজের নানা সমস্যা তুলে ধরে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ‘গণহারে আর ফেল নয়, যথাযথ রেজাল্ট চাই’, ‘শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা নয়’, ‘গণহারে ফেল, ঢাবি তোমার খেল’, ‘বন্ধ করো অনাচার, সাত কলেজের আবদার’- এসব স্লোগান দেয়া হয় বিক্ষোভে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে থাকা কালীন আমাদের পরিক্ষা গ্রহণ ও ফলাফলে দীর্ঘসূত্রা দেখা দেয়। রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করার পর আমরা ভেবেছিলাম সেশনজট কমবে, সাথে শিক্ষার মানও বাড়বে। কিন্তু কিছুই হয়নি। উল্টো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাবির অধীনে আসার পর আরও বেশি সেশনজটে পড়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিক্ষার ফল প্রকাশ করা হচ্ছে না। ত্রুটিযুক্ত ফল প্রকাশিত হচ্ছে। এবার আমরা এর সমাধান চাই।
ফলাফল খারাপ হওয়ার বিষয়ে ঢাকা কলেজের ইংরেজী বিভাগের চেয়াম্যান পূরণ জয় বিশ্বাস বলেন, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার মান ধরে রাখতে পারছে না। আর শিক্ষার্থীদের বেশি করে ক্লাসমূখী হতে হবে। তাদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অনেক অভাব রয়েছে। তাদের জন্য যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়।
তিতুমীর কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সাফিনাজ সুলতানার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন মানটা একটু বেড়ে গেছে, এটা হচ্ছে একটা বড় কারণ। আগে যেই মানে নাম্বার দেয়া হতো এখন তেমন দেয়া হয় না। তিনি বলেন, লেখাপড়ার মানটা আগের থেকে বেড়েছে। এই অবস্থা বেশি দিন থাকবে না, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল এবং সেশনজটের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এই সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের সমন্বয়ক ও বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম বলেন, ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল এবং সেশনজট নিয়ে আমার কাছে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টা সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
উল্লেখ্য, শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ- এই সাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে অধ্যয়নরত আছেন প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী এবং এক হাজার ১৪৯ জন শিক্ষক রয়েছেন।
বিডি২৪লাইভ/এমই/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: