‘গভীর রাতে ছেলে আমাকে বলে বাবা আর নেই’

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১২:১৮ এএম

চট্টগ্রামে ডিবি পরিচয়ে বাসচালক জালাল হোসেনকে হত্যার বিচারের দাবিতে দিনাজপুরে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন অবরোধ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংর্ঘষ হয়েছে। এ সময় ১০ জন রিজার্ভ পুলিশ আহত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পরিবহন অবরোধে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে সকাল থেকে দিনাজপুর শহরের সুইহারী কলেজ মোড়, দিনাজপুর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে মহাসড়কে ও দশ মাইল মোড়ে তিন দিকে ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেট তৈরি করে দিনাজপুর-রংপুর-পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও জেলার সঙ্গে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের পরিবহন অবরোধ ডাক দেয়ার কারণে মানুষের চরম ভোগান্তি শুরু হয়েছে। দিনাজপুর দশ মাইল মোড়ের তিন দিকে শতশত যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে।  

জানা যায়, চট্টগ্রামে ডিবি পরিচয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার জালাল হোসেন (৪৪) দিনজপুর জেলার সদর উপজেলার ২নং সুন্দরবন ইউনিয়নের দরবারপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে। গত বুধবার জালালের লাশ নিজ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃর্ষ্টি হয়। বিকালে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

&dquote;&dquote;বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোন বাস। সেই সঙ্গে ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে দুপুর দেড়টার সময় একদল রিজার্ভ পুলিশ দিনাজপুর- রংপুর মহামড়কের নয়নপুর দিনাজপুর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসের সামনে মহাসড়ক থেকে ব্যারিকেড দেয়া ট্রাক সরাতে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংর্ঘষ হয়। এতে ১০ জন পুলিশ আহত হয়েছে।

আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে, শাহরিয়ার (২১), মনিরুজ্জামান (২২), আনোয়ারুল ইসলাম( ১৯), আতিকুর রহমান( ২৫), আরিফুল ইসলাম( ১৯), রাকিবুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্য চারজন পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী জানান, চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকায় বাসচালক জালাল হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে এই ধর্মঘট। হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। সকাল থেকে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বাস-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে। চার জেলার মিলনস্থল দশ মাইল মোড়ের তিন দিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে। বেড়ে গেছে মানুষের দুর্ভোগ।

দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) বজলুর রশিদ জানান, পরিবহন অবরোধ চলাকালে দুপুরে শ্রমিকদের হামলায় ১০ জন পুলিশ আহত হয়েছে।

এর আগে, সোমবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি থানার শিকলবাহা এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মারধর করায় বাস চালক জালাল হোসেনের মৃত্যু হয়। তিনি শ্যামলী পরিবহনের চালক ছিলেন।

&dquote;&dquote;নিহতের পরিবার জানায়, ৩০ হাজার পিস ইয়াবা আছে, এই অভিযোগে জালাল হোসেনকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে মারধর করে আহত করে ফেলে রেখে যায় ডিবি পরিচয় দেওয়া কয়েকজন। এ সময় বাসের সহকারী রাফিসহ অন্যরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ও পরে চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বুধবার (২৪ এপ্রিল) মরদেহ দিনাজপুরে নিজ বাড়িতে আনা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

নিহতের প্রতিবন্ধি ছেলে ইমরান হোসেন মিলন (১৫) বলেন, আমরা দুটি ছোট ভাই রয়েছে। বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, মাকে নিয়ে এখন কীভাবে আমাদের দিন যাবে। পরিবার কীভাবে চলবে, আমি নিজেও প্রতিবন্ধী। বাবার হত্যার বিচার চাই এবং সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হোক।

নিহতের স্ত্রী ইরিনা খাতুন বলেন, ‘ওইদিন সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। গভীর রাতে ছেলে আমাকে বলে বাবা আর নেই। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। আমার স্বামীর কোনও দোষ নেই, কোনও অবৈধ কাজ করতো না। আমার স্বামীকে কেন হত্যা করা হলো। ডিবি হত্যা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: