বাঙালির জন্মের ঠিক নাই !

॥ কাজী শরীফ ॥
কুমিল্লায় আমার জীবন কাটে ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গতায়। বিষয়টি আমার মত আড্ডাবাজ মানুষের জন্য কোনভাবেই স্বস্তিদায়ক নয়। তবু কাটাতে হয় জীবন ও জীবিকার তাগিদে। চিরকালীন ইতিবাচক আমি এর মধ্যেও একটি ইতিবাচক দিক খোঁজার চেষ্টা করি। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যাই । কোন এক পণ্ডিত বলেছিলেন একাকীত্ব খারাপ নয় এতে তুমি দার্শনিক হতে পারবে। আমার বিদ্যার দৌড় দিয়ে দার্শনিক হওয়া যে সুদূরকল্পনা তা আমার কিংবা আমার কাছের মানুষদের না বোঝার কথা নয়। তাই একাকীত্বকে সাথী করে সন্ধ্যার সময়টাতে কুমিল্লার সড়কগুলোতে একা একা হাঁটি । কান্দিরপাড়,ধর্মসাগর কিংবা মহিলা কলেজের হোস্টেলের পাশ দিয়েই হাঁটি।কান্দিরপাড়ে যেতে যেতে গাজার তীব্র কটু গন্ধ যেমন পরিচিত হয়ে গেছে, ধর্মসাগর পাড়ে প্রেমের রকমফের যেমন চোখে পড়ে তেমনি মহিলা কলেজের হোস্টেলের মেয়েদের জানালার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চুল আঁচড়ানোর দৃশ্য দেখতেও বেশ লাগে। সেদিনও এমনিই হাঁটছিলাম।
উদ্দেশ্য মানুষের জীবন দেখা নয় একাকীত্ব উদযাপন করা। আচমকাই দেখি এক মধ্যবয়স্ক রিকশাচালক রিকশা চালাতে চালাতে ঘর্মাক্ত অবস্থায় পেছন ফিরে তার স্বরে বলছে “ বাঙ্গালির জন্মের ঠিক নাই।”কথাটি শোনার পরই মাথা গরম হয়ে গেল। ভাবলাম রিকশাচালককে দৌড়ে গিয়ে ধরি ও এমন কথার ব্যাখ্যা জানি । রিকশার দ্রুততা ও আমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফাঁকে কোন গলি দিয়ে যে আমার চোখের আড়াল হয়ে গেল লক্ষ্য করিনি। কথাটায় আমি দুটো কারণে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রথমত, মানুষ হিসেবে জন্মের ঠিক না থাকাটা শুধু বিতর্কিতই না বরং চূড়ান্ত অপমানজনকও বটে ।
দ্বিতীয়ত বাঙালি শব্দটা উচ্চারণ করে আমার বাঙ্গালিয়ানাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আমি আইনের ছাত্র হিসেবে উচ্চ আদালতের রায় জানি এবং বাঙালি ও বাংলাদেশির মীমাংসিত বিষয় নিয়েও আমি ওয়াকিবহাল । তথাপি আমি নিজেকে বাঙালি পরিচয় দিতেই বেশি আনন্দ পাই। হয়ত বাঙলার মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি শ্লোগানে বাঙালি শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার কারণেই আমার এ আবেগ। যাহোক খুব মন খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমি আর সেদিন ঘুরিনি। চলে এলাম আমার দুই কামরার মেস বাসায়। মামারা দোকানে থাকায় বাসায় বসে নিজেই ভাবতে থাকি কেন এ অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত রিকশাচালক এত বড় কথা বলল। একবার মনকে সান্ত্বনা দিলাম এটা ভেবে যে হয়ত কেউ একজন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম দেয়ায় তিনি এ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। নতুবা কোন ট্রাফিক পুলিশের প্রতি এ উক্তি যিনি হয়ত তার সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছেন । এগুলো সবই অনুমান নির্ভর ।আইনের ছাত্র ও অধুনা শিক্ষক হিসেবে আন্দাজের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে যাওয়াটা যে শুধু বোকামি নয় বরং অনৈতিকও তা আমার মাথায় এল।
এবার অঙ্ক করতে শুরু করলাম। আসলেই বাঙ্গালির জন্মের ঠিক নাই এ কথাটি কতটুকু সত্য বা আদৌ কোন একটি কারণে সেটি সত্য হতে পারে কিনা। ভাবতে গিয়ে প্রথম যে ভাবনাটি মাথায় এল তা হল আমাদের জন্মতারিখই তো ঠিক নাই। আমার কথাই ধরা যাক। আমার জন্ম ১৯৮৭ সালের ১৩ই জুলাই ।কিন্তু সার্টিফিকেট বলছে আমি জন্মেছি ১৯৮৮ সালের ০১ সেপ্টেম্বর । একই মানুষের কি দুবার জন্ম হতে পারে? আমার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে । একই ঘটনা আমার পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য । আমার বড়বোনের জন্ম ১৯৮৬ সালের ১৩ই জানুয়ারী। সার্টিফিকেট বলছে ১৯৮৭ সালের ১০ই জানুয়ারী। ওর সার্টিফিকেটেরটা সত্য ধরলে আর আমার বাস্তবেরটাকে কেউ সত্য মানলে আমার আর তার বয়সের পার্থক্য দাঁড়ায় মাত্র ৭ মাস ৩ দিন। সুস্থ স্বাভাবিকভাবে কি এটা সত্য হওয়া সম্ভব! নিজের পরিবার দিয়েই আলোচনার সূত্রপাত করলাম। কারণ,পাছে আবার কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করেন। আমার কাছের অনেক পরিচিত ও স্বজনদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে । অন্তত আমার একজন বন্ধুকেও দেখিনি যে বাস্তবের জন্ম তারিখ সার্টিফিকেটে দেখিয়েছে। এমনও বন্ধু আছে যিনি জীবন থেকে প্রায় আড়াই বছর তসরুফ করেছেন। অনেককে আবার আফসোস করতে দেখেছি তার পিতা মাতা ঠিকমত বয়স কমাতে পারেননি বলে।
কেউ কেউ স্কুলের শিক্ষকদের একহাত নেন এই বলে যে তাঁদের বোকামির কারণে বয়সটা ঠিকমত কম দেখানো যায়নি। একটি শিশু জন্মের পর থেকে একটি মিথ্যাকে ধারণ করে বেড়ে উঠে । যে কাজ শুরুই হয় মিথ্যা দিয়ে তার সমাপ্তি কি আর পুরো সত্য নির্ভর হয়! আমাদের মাইন্ড সেটও এখন তেমন হয়ে গেছে। কেউ কারো বয়স জিজ্ঞেস করলে পরে আবার জিজ্ঞেস করে আসল নাকি সার্টিফিকেটেরটা ? আমার বোনের বিয়ের সময় যত ছেলের জীবনবৃত্তান্ত দেখেছি তাদের সবারই প্রদত্ত বয়সের সাথে দুবছর যোগ করে হিসেব করেছি ! অর্থাৎ আমরা হয়ত সবাই ধরেই নিয়েছি বিষয়টি এমনই ।একটি প্রচলিত মিথ্যাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ঘটনা পৃথিবীতে সচরাচর দেখা যায়না । এতে আমাদের যে সম্মানহানিও ঘটে বাইরের দেশগুলোতে তা আমাদের মাথায়ই থাকেনা। আমাদের বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের মাঝেমাঝেই বাইরে থেকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় বয়সের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ায়। এতে আমরা অপমান বোধ করিনা। আমাদের মুশফিকের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে । তখন তার বয়স ছিল ১৬। আমার স্পষ্ট মনে আছে ইংলিশ মিডিয়া এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আমার খারাপ লাগলেও একি সন্দেহ নিজেরও ছিল। কারন, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ২৩ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ইতিহাস বিভাগ থেকে। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বয়সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা আর তামিম ইকবালের ইনিংসে ১০ উইকেট পাওয়া সমার্থক !একবার একটি ক্রিকেট সম্পর্কিত আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক জনাব রকিবুল হাসান ও সাবেক ওপেনার জনাব জাভেদ ওমর বেলিম।
ওখানে জাভেদ বলেছিলেন তার অনূর্ধ্ব১৯ খেলার সুযোগ হয় ১৯৮৯ সালে। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় ২০০৭ সালে। যখন তার বয়স হল প্রায় ৩০। অর্থাৎ ১৮ বছরে তার বয়স বাড়ে ১১/১২ বছর! রকিবুল হাসান এটা নিয়ে ওখানেই প্রশ্ন তোলেন । টিভিতে সম্প্রচার করায় এ চমৎকার বিষয়টি দেখার সুযোগ হয় আমার ! আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন আমার ক্ষেত্রে এ কাজটা তিনি করেছিলেন ? তিনি বললেন যেন চাকরিতে প্রবেশে বেশি সুযোগ পাই। আমি পাস করার পর কতদিন লেগেছে চাকরিতে ঢুকতে ? আমি মনে করি কেউ যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তার জন্য ৩০ বছরের আগেই ভাল কিছু করা সম্ভব ? এক্ষেত্রে বয়স লুকাতে হয়না। অনেকে হয়ত বলবেন সেশন জট কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘসুত্রিতার কথা । সরকারের উচিত এ সমস্যার আশু সমাধান করা। জাতিকে জাতীয় মিথ্যায় ডুবিয়ে দেয়া নয়। আর আমাদের অভিভাবকরা আমাদের মাথায় চাকুরি নামক পোকাটি বাল্যকাল থেকেই ঢুকিয়ে দেন। আমরা তাই হয়ে উঠি নিম্ন বা উচ্চপদের চাকুরে। হতে পারিনা উদ্যোক্তা । কথা দিচ্ছি এ বিষয় নিয়ে অন্য একদিন লিখব। কেউ কেউ বলেন বয়স কমালে শেষ বয়সে বেশিদিন চাকুরি করা যায় ! বিষয়টি হাস্যকর । আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে কাজে না লাগিয়ে বয়সের ভারে নুজ মানুষকে বেশি কাজে লাগাচ্ছি । তুলানামুলক বিচারে কোনটি বেশি ফলদায়ক সেটি কি বিবেচনা করছি!
যাহোক বয়স বিষয়ক ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ওটাকে আর লম্বা করছিনা। পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটার ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই বয়সের তারিখ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমার সন্তানের ক্ষেত্রে বয়স লুকাবো না। আমার সন্তান জীবন শুরু করবে সত্য দিয়ে। পিতা হিসেবে তাকে শিখিয়ে দেবনা স্কুলে ভর্তির সময় মিথ্যা জন্ম তারিখ বলতে। আমাদের মা বাবাদের আর একটি সমস্যা সন্তানের মাথায় শুরুতেই মিথ্যা ঢুকিয়ে দেয়। হয়ত বাচ্চার শরীর খারাপ লাগছে বলে সে পড়তে চাচ্ছেনা । মা তখন জিজ্ঞেস করে মিথ্যা বলছনা তো? পৃথিবীতে মিথ্যা নামক ব্যাপারটি প্রথমেই ঐ শিশুর মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে মা। বাবা ছেলেকে শিখিয়ে দিচ্ছে বাড়ীওয়ালা আঙ্কেল জিজ্ঞেস করলে বলবা আব্বু বাইরে গেছে। এভাবে মিথ্যা পাচ্ছে স্বীকৃতি , পারিবারিকভাবে থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ।
১৫ আগস্ট আমাদের জাতীর পিতার শাহাদাৎ বার্ষিকী । ১৯৭৫ সালের এইদিনে তিনি সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হন। আমরা জাতীয় শোক দিবস হিসেবে এ দিনটিকে পালন করি। সেদিনই আবার জন্মদিন পালন করেন বাংলাদেশের একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার এস এস সি’র সার্টিফিকেট বলছে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর । তার মানে তিনি জন্মদিন পালন করবেন সেদিন। কিন্তু তিনি পালন করছেন ১৫ আগস্ট । বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীর দিন। সেটা তিনি করতেই পারেন। তার ইচ্ছে করলে কেউতো তাকে বাধা দিতে পারবেন না। আমিও তো জন্মদিন ১৩ই জুলাই পালন করি। ১ সেপ্টেম্বর না। সুতরাং, তাঁকে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনে বাধা দেয়ার নৈতিক অধিকার আমার নেই। হয়ত তার মত বয়সের সমান ওজনের কেক কেনার সামর্থ্য নেই বলে বাহুল্য দেখাইনা। আমি এও বিশ্বাস করি বছরের অন্য যেকোনো দিন তিনি জন্মদিন পালন করলে এটা নিয়ে এত আলোচনা বা সমালোচনা হতনা। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তিনি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে ম্লান করতে এমন করেন ।
রবি ঠাকুর আমাকে শেখান-
“মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ, আজীবন সে বিশ্বাস রক্ষা করে যাব ।”
আমি বিশ্বাস করি তিনি কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই জন্মদিন পালন করেন এ দিনে। এমন হীন মানসিকতার পরিচয় এত বড় নেত্রী দেন না ভাবতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
মওদুদ আহমেদ সাহেব বলেছিলেন তিনি তার জীবনে কখনো খালেদা জিয়ার জন্মদিনে অংশগ্রহণ করেন নি। এটাকে তিনি অসুন্দর মনে করেন।এদিন তিনি তার জন্মদিন হলেও পালন করতেন না বলেছেন। আমার ফেসবুকের বন্ধুলিস্টে বাংলাদেশের কিংবদন্তি গীতিকার মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান আছেন। তিনি ১৫ আগস্ট ,২০১৪ তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন আজ তাঁর ভাই বাংলাদেশের অন্যতম গীতিকার , প্রাবন্ধিক, গবেষক ও লেখক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের জন্মদিন। তাঁরা কখনো এ দিনটি ঘটা করে পালন করেননি ।সেদিন কবি আবুল হোসেনের জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনও পালিত হয়না। তাঁর মানে এই নয় যে আমরা তাদের অসম্মান করি। মাননীয় নেত্রী আমরা সাধারণ মানুষ আমরা ভুল করি,করতে পারি। আপনি তো দেশনেত্রী । আপনি কি করে এতটা ভুল করেন। আপনি যদি এভাবে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে জন্মতারিখ দেখান ও পালন করেন তখনতো রিকশাচালকের ঐ সংলাপ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। বলুন, আমাদের জন্য কি সেটা মেনে নেয়া স্বাস্থ্যকর !
খোলা কলামের লেখা সমূহের দায় দায়িত্ব একান্তই লেখকের নিজের
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: