মুসলিম বিবাহের অবশ্য পূরণীয় শর্তাবলী

`বিবাহ`একটি বন্ধনের নাম। এর আভিধানিক অর্থ -মিলানো,একত্র করা কিংবা সহবাস। ইসলামী আইন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট একজন নর ও নারীর একত্রিত হওয়ার যে চুক্তি তাকেই বিবাহ বলে।
‘মুসলিম আইনের মূলনীতি’ বইয়ে সংজ্ঞা অনুযায়ী “ বিবাহ বা নিকাহ এমন একটি চুক্তি যার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলো বৈধ ও সামাজিকভাবে সন্তান লাভ ও প্রতিপালন।
অন্যদের মতে “ মুসলিম বিবাহ কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, একটি বিশুদ্ধ দেওয়ানী চুক্তি যার উদ্দেশ্য পারিবারিক জীবন যাপন ও বৈধ সন্তান দান।”
ইসলাম ধর্ম অনুসারে বিবাহ করা সুন্নতে মোয়ক্কেদা। এটি করা থেকে বিরত থাকা বা নিবৃত হওয়া পাপ বা অন্যায়। কারণ বিবাহ নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজত করে, পারষ্পরিক ভালবাসা, সহমর্মিতা ও প্রশান্তি অর্জনে ভূমিকা রাখে এবং বংশ ধারা অব্যহত রাখে।
মুসলিম বিবাহের অবশ্য পূরণীয় শর্তাবলী
মানব ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রাচীন সমাজে নারীদের মান-মর্যাদার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিবাহের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা ও গুরুত্ব সংরক্ষিত হয়। ১৯৬১ সালে প্রণীত মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী, বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়কে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক-বয়স্কা এবং সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং স্ত্রীলোকের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।
প্রস্তাব দান এবং কবুল: বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং অপর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দান ও গ্রহণ একই বৈঠক/মজলিসে কমপক্ষে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষ সাক্ষী কিংবা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলা সাক্ষীর সামনে হতে হবে। তবে সাক্ষীগণকে একই বৈঠকে হাজির থাকতে হবে।
এটিই বিবাহ বন্ধন সংগঠিত হওয়ার মূল শর্ত। বিবাহের জন্য পাত্র এবং পাত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতির প্রয়োজন। বল প্রয়োগে সম্মতি আদায়ে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে।
তবে হানাফী মাযহাব মতে ২ জন সাক্ষী এবং শিয়া মতে কোন সাক্ষী দরকার নেই।
বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন: বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুসারে সরকার নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার দ্বারা অবশ্যই বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করাতে হবে।
বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি: সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে বিবাহের ফি নির্ধারণ করেছে। বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি দেনমোহরের ওপর নির্ধারণ হয়ে থাকে। দেনমোহরের প্রতি হাজারে ১০ টাকা হারে ফি নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রাররা সরকার নির্ধারিত রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকেন। দেনমোহর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফি চার হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করার ফলাফল: ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক। বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করলে নিম্নলিখিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়:
১. সরকার নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার কর্তৃক বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিবাদ-বিসংবাদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২. বিবাহ রেজিস্ট্রি না হওয়ায় বিবাহের বৈধতার ক্ষেত্রে দলিলগত সাক্ষীর অভাব ঘটে, ফলে বিবাদ নিষ্পত্তি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৩. বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার ফলে মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বৈধতার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
৪. বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন না হলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোষ ও মোহরানার দাবির মামলা অগ্রাহ্য বলে গণ্য হতে পারে।
বিবাহের দেনমোহরঃ
দাম্পত্য জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেনমোহর। দেনমোহর বিবাহের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। বিবাহের রেজিস্ট্র্রেশনের সময় দেনমোহর ধার্য করতে হবে। স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে।
বিবাহের সময় প্রতিদানস্বরূপ বর কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দিতে সম্মত অথবা গৃহীত কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে মোহর বলে।
মোহর প্রাপ্তির অধিকার সম্পূর্ণরুপে স্ত্রীর। মোহরানা বলতে এমন অর্থ সম্পদ বুঝায়, যা বিয়ের বন্ধনে স্ত্রীর উপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের বিনিময়ে স্বামীকে আদায় করতে হয়।
মোহরানা স্বামীর কোনো করুণা কিংবা কোনো সামাজিক ঐতিহ্য নয়। স্ত্রীর মোহরানা দেওয়ার জন্য আল্লাহ্ নির্দেশ অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট। স্ত্রীর মোহরানার অর্থ আদায় করা স্বামীর ওপর যেমন অবশ্য কর্তব্য, তেমনি তা ইবাদতও।
ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী মোহর আদায় প্রতিটি স্বামীর জন্য ফরজ। দেনমোহর স্বামীর জন্য একটি ঋণ, সর্বাবস্থায় দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক।
রাসুল (সা.) বলেছেন ‘যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে মোহরানা দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা দিতে তার ইচ্ছে নেই, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে’
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: