গাভী পালন করে ২ হাজার মানুষের ভাগ্য বদল

এম.সুরুজ্জামান,
শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলার সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের পাকুরিয়া পূর্ব পাড়া, ভাটিয়া পাড়া ও তিলকান্দি গ্রামের প্রায় ২ হাজার মানুষ গাভী পালন এবং এর দুধ বিক্রি করে ভাগ্যের চাঁকা ঘুরিয়েছে। ওইসব গ্রামে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার গাভীর প্রায় ৬শ মন দুধ উৎপাদন হচ্ছে। যা জেলা শহরের সিংহ ভাগ মিষ্টির দোকান এবং আশপাশের বিভিন্ন হাট-বাজারে দুধের চাহিদা মিটিয়ে আসছে। ফলে ওইসব গ্রাম এখন ‘দুধগ্রাম’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।
জানা গেছে, শেরপুর জেলা সদরের পৌরসভা সংলগ্ন পাকুরিয়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের প্রায় শেষ প্রান্তে প্রায় ৬ কিলোমিটার অদুরে পাকুরিয়া পূর্ব পাড়া, ভাটিয়া পাড়া ও তিলকান্দি গ্রাম। গ্রামের দুই পাশ ঘিরে রয়েছে জেলার সব চেয়ে বড় রৌহা বিল। শুষ্ক মৌসুমে এ গ্রামের মানুষ কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে আশপাশের সব জমিতে পানি থাকায় অনেক কৃষক মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকে।
আবার অনেককেই বেকার হয়ে বসে থাকতে হতো। ফলে দীর্ঘদিন থেকেই ওইসব গ্রমের বেশীর ভাগ মানুষ গবাদি পশু পালন বিশেষ করে গাভী পালনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এসব গ্রামের যত গরিব পরিবারই থাকুকনা কেন প্রতি বাড়িতে কম পক্ষে ১টি করে গাভী রয়েছে। আর যাদের অবস্থা মোটামুটি ভাল তাদের ৫ থেকে কমপক্ষে ২০ টি করে গাভী রয়েছে। এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা প্রতিদিন প্রায় ১ মন করে দুধ উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে।
গ্রামের প্রায় ৫ হাজার গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৫ কেজি করে মোট ২৫ হাজার লিটার প্রায় ৬শ মন দুধ উৎপাদন হয়। তাদের পালিত গাভীর মধ্যে দেশী জাতের গাভীর পাশাপাশি ফার্মের বিভিন্ন জাতের গাভী রয়েছে। ওইসব গ্রামের মানুষ বিকেল হলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাদের গাভী নিয়ে। দুধ দোহন করে শহর এবং আশপাশের বাজারের দিকে ছুটে চলে। গ্রামের রাস্তায় চলে এক অন্যরকম কোলাহল। শত শত মানুষ দলে দলে বালতি, কন্টি, জারসহ বিভিন্ন পাত্রে দুধ নিয়ে ছুটে চলে দুধ বিক্রির জন্য। কেউ পয়ে হেটে, কেউ সাইকেলে চড়ে কেউবা আবার অটোরিক্সায় ছুটে চলে দুধ নিয়ে যার যার গন্তব্যে।
আবার কাউকে তাদের গাভীর খাদ্য সংগ্রহ এবং খাদ্য তৈরীতেও ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। গ্রামের মানুষ যে যত পেশার সাথেই জড়িত থাকুক না কেন বিকেল হলে তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় গাভীর দুধ দহন নিয়ে। এ ব্যস্ততা শুধু মহিলা ও পুরুষই নয়, শিশুরা পর্যন্ত শতঃস্ফুর্তভাবে গাভির খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। গ্রামের সবাই দুধের মান ঠিক রাখায় তাদের দুধের চাহিদাও রয়েছে জেলার সর্বত্র।
গ্রামবাসী ও গাভী পালনকারীরা জানান, গত ৪০ থেকে ৫০ বছর যাবত বাপ-দাদার উত্তেরাধীকার হিসেবে তারা গাভী এবং অন্যান্য পশু পালন করে আসছে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, গ্রামগুলোর দুই পাশের বিলে বর্ষা মৌসুমে গাভীর খাদ্য হিসেবে প্রচুর পরিমানে কচুরি পানা পাওয়া যায়। বর্ষার পর বিলের পানি কমে গেলে ফসলের মাঠে প্রচুর পরিমানে গো-খাদ্য হিসেবে ঘাস পাওয়া যায়।
এছাড়া ওই এলাকার জমিতে শুষ্ক মৌসুমে ধানের উৎপাদনও বেশ ভাল হয়। ফলে গো-খাদ্য খড়েরও অভাব হয় না। মোট কথা, এসব গ্রামে গো-খাদ্যের তেমন কোন সংকট না থাকায় প্রতি পরিবার গাভী বা গবাদি পশু পালনে উৎসাহ পেয়েছে। তবে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ধানের মৌসুমে ক্ষেতে ফসলের বালাই নাশকের জন্য বিষ ছিটানোর ফলে ওই ক্ষেতের পাশের গবাদি পশু ঘাস খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হয়। রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর চিকিৎসা করাতে বেশ টাকা পয়সা খরচ হয়।
গ্রামবাসী এবং গবাদি পশু পালনকারীরা জানান, গাভী পালন এর দুধ বাজারে বিক্রি করে অনেকেই সাংসারের বাড়তি আয় করছে। আবার অনেকে গাভী পালন করেই সংসার চালাচ্ছে। ফলে গাভী পালন ওইসব গ্রামের মানুষের ভাগ্যের চাঁকা ঘুরিয়ে দিয়েছে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: