বিউটি পার্লারে তরুণীদের ভীড়!

প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০১৬, ০৬:০১ এএম

এবারের ঈদে বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা বয়েছে রাঙ্গুনিয়ার সৌন্দর্য চর্চার পার্লার গুলোতে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে পার্লার গুলোতে বাড়ছে ব্যস্ততা। ঈদের কেনা কাটা শেষের পর এবার পার্লার গুলোতে ভীড় করছে তরুণী ও গৃহবধুরা। এসময় বিউটিশিয়ানদের বিরতীহীন গতিতে কাজ করতে হয়। শিক্ষিত নারীরা পার্লারের কাজে এসে নিজেরা স্বাবলম্বীর পাশাপাশী অন্যদেরকে ও কর্মযজ্ঞে সুযোগ করে দিচ্ছে।

এর মধ্যে শিক্ষিত নারীরা রূপ চর্চার পেশা সহজ হওয়ায় বিউটি পার্লারের দিকে ঝুঁকছে। রাঙ্গুনিয়ার বানিজ্যিক কেন্দ্র ছাড়াও গ্রামের অলি গলিতে বিউটি পার্লার গড়ে উঠছে। বিউটি পার্লারে শিক্ষিত তরুনীদের কর্ম ব্যস্ততা মুখর হয়ে উঠেছে এলাকার নানা স্থান। ঈদকে সামনে রেখে অর্ধশতাধিক বিউটি পার্লারে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিউটিশিয়ানরা। অনেক শিক্ষিত মহিলা উচ্চতর লেখাপড়া করার পরও বিয়ের পর অন্যের ঘরে গিয়ে পরিবারের বোঝা না হয়ে বেছে নিচ্ছেন বিউটি পার্লার ব্যবসার কাজ।

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ৫ বছরে রাঙ্গুনিয়ায় বিউটি পার্লারের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা ৫/৬টি, বর্তমানে পার্লারের সংখ্যা প্রায় ৬১ টি। পার্লারে মহিলা শ্রমিকরা কাজ করে অর্থ উর্পাজন করছে। অনেক কলেজ ছাত্রীরা পার্লারের কাজ শেখার জন্য প্রতিদিন জনপ্রিয় পার্লার গুলোতে ভিড় জমায়। গ্রামে গঞ্জে বিয়ে ঠিক হলে বর্তমানে কনের পরিবার প্রথমে মেয়েকে কোন পার্লারে নিয়ে যাবেন সেটা ঠিক করে। পার্লারের সাজে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলে নব বধূদের। পার্লারে সাজানো ছাড়াও এলাকার বিত্তশালী পরিবারের তরুনীরা মাসে কমপক্ষে ৫/৬ বার করে পার্লারে গিয়ে নিজেকে নতুন রূপে সাজিয়ে তুলে।

এছাড়াও পার্লারে স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহিলারা এবং প্রবাসীদের স্ত্রীরা নিজেদেরকে ভিন্নরূপে তুলে ধরার জন্য র্পালারে নিয়মিত রূপ চর্চায় যাওয়া আসা করে। অনেক মহিলা পরিবারের প্রধান পরিবারের অন্যান্যদের খরচ জোগাতে নিজ ঘরে পার্লার দিয়ে পরিশ্রম করে স্ববলম্বী হয়েছেন। একে অপরের দেখা দেখিতে অন্যরাও এগিয়ে আসছে এই ব্যবসায়। অধিক কোন ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভবনা না থাকায় স্বল্প পুঁজিতে নারীরা পার্লার ব্যবসাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজে ভাগ্য বদল করছে।

অনেকেই একটি পার্লারের আয় থেকে উপজেলা ছেড়ে শহরে আরো ২/৩ টি পার্লারের মালিক হয়েছেন। ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় গড়ে তোলা যায় একটি বিউটি পার্লার। বিউটি পার্লারের মাধ্যমে ভাগ্য বদলে যাওয়ায় এই পেশার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ সহকারে নিজেদেরকে জড়িয়ে আত্ম প্রত্যয়ী মহিলা হিসেবে সমাজে নিজেদের অবস্থান পুরুষের পাশাপাশি সুদৃঢ় করছে। কাপ্তাই চট্টগ্রাম সড়কে পাশের উচু দালান, মার্কেট, বানিজ্যিক শহর লিচুবাগান ও দোভাষী বাজারে থানার সামনে, উপজেলা সদরে, পোমরা, রানীর হাট, এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য দৃষ্টি নন্দন বিউটি পার্লার। রাঙ্গুনিয়ায় বিউটি র্পালার গুলোর মধ্যে অন্যতম বিউটি পার্লারগুলো হচ্ছে তানিয়া বিউটি পার্লার, লাবণী বিউটি পার্লার, ঋত্বিক বিউটি পার্লার, চন্দ্রিমা, স্টাইলিষ্ট, বাপ্পি, সাতরং, ইভা, অপরূপা, কেয়া, শালুক, আলো, বার্মিজ বিউটি পার্লার অন্যতম।

রাঙ্গুনিয়া থানার সদরে তানিয়া বিউটি পার্লারের বিউটিশিয়ান জানান, ঈদের দুই দিনে আগে তরুণী কিংবা গৃহ বধুরা নিজেদের আরো সুন্দর ও আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য পার্লারে ভিড় করে। সে সময়ে আমরা রাতেও দিনে কাজ করে থাকি। ঈদে বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ বিউটি পার্লাারটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ১০/১২টি বৌ সাজ উন্নত মানের ফেসিয়্যাল, মেনিকিউর, পেডিকিউর, ব্লিচ, ফেস থ্রেডিং, ওয়ার্কিং, ফেয়ার পালিশ, রিভনডিং, স্পা, এ্যারোমা থেরাপি, চুল কাটিং সংক্রান্ত, চুল সিল্কি, চুল কালার, চুল পাম্প, হাই লাইট, ব্যাথা মুক্তভাবে নাক কান ছিদ্র করা হয়।

তিনি জানান, তানিয়া বিউটি পার্লারে মহিলাদের রূপ চর্চা করার পাশাপাশি গ্রামের অবহেলিত মেয়েদেরকে পার্লারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে তানিয়া বিউটি পার্লারে ৫ জন মহিলা কর্মরত রয়েছে। পার্লারের পাশাপাশি বাটিক বুটিক হাউস ও সেলাই কাজ শেখানো হয়।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান এড্ভোকেট রেহেনা আক্তার বেগম জানান, মেয়েদের নিজে স্বাবলম্বী হতে বিউটি পার্লার খুবই সহজ একটি ব্যবসা। শিক্ষিত তরুণীরা বেকার না থেকে বর্তমানে সরকার নারীদের উন্নয়নের জন্য নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। এতে অবহেলিত নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বিউটি পার্লার ব্যবসা বেছে নিচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: