
দেশের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাট। এই জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন মোহাম্মদ নূরে আলম। যার দক্ষতা ও সাহসিকতা দিয়ে বদলে গেছে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেন জিরো টলারেন্স নীতি। মাদক উদ্ধারে সারাদেশের মধ্যে জয়পুরহাট হয়েছে দ্বিতীয়। এছাড়াও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলমের নেতৃত্বে টানা ৮ মাস সারাদেশের মধ্যে ওয়ারেন্ট তামিলে জয়পুরহাট জেলা প্রথম স্থান অধিকার করে চলেছে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়, সমাজ ব্যবস্থা, কিশোরগ্যাং সহ নিজের ব্যাক্তিগত নানা তথ্য নিয়ে কথা হয় বিডি২৪লাইভের বিশেষ প্রতিবেদক খায়রুল আলম রফিকের সাথে। সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
বিডি২৪লাইভ: এত পেশা বাদ দিয়ে পুলিশে কেন ?
মোহাম্মদ নূরে আলম : আমার বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেই হিসেবে পারিবারিকভাবেই দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে। আমি মনে করি- মানুষের সেবা করার মত এত আনন্দ আর কোথাও নেই। পুলিশ পেশা থেকে সেটা সরাসরি সম্ভব বলে আমি মনে করেছিলাম। একারনেই ছোট থেকেই পুলিশ হওয়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। পুলিশ হবার পিছনে বাবা-মা দুইজনেরই অবদান রয়েছে। তবে বাবা যেহেতু ব্যবসায়ী ছিলেন তবুও তিনি আমাকে ব্যবসায়ী না বানিয়ে দেশ সেবার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পাশাপাশি আমার মায়ের উৎসাহও আমার পুলিশ কর্মকর্তা হওয়াতে অনেক ভুমিকা রেখেছে।
বিডি২৪লাইভ: পুলিশি পেশা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এই পেশায় সর্বদাই নানারকম ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তবুও কিছু কিছু ঘটনা রয়েছে যা সবসময় মনকে নারা দেয়। সেরকম কোন স্মরনীয় ঘটনা কি আপনার রয়েছে?
মোহাম্মদ নূরে আলম : আমি মানিকগঞ্জের শিবালয় সার্কেলে থাকাকালীন একটি ঘটনা। এক প্রতিবন্ধী তার প্রয়োজনে কিছু জমি তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে। তার চাচাতো ভাই জালিয়াতি করে ওই প্রতিবন্ধীর বসত ভিটার অংশটুকুও লিখে নেয় এবং তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। পরে ওই অসহায় প্রতিবন্ধী পাশের একটি কবরস্থানে পলিথিন দিয়ে একটি ঝুপড়ি বানিয়ে বসবাস শুরু করে। খবর পেয়ে আমি ওই প্রতিবন্ধীকে বসত ভিটার অংশটুকু নতুন দলিল করে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এই ঘটনা আমার কাছে স্মরণীয় বলে মনে হয়।
বিডি২৪লাইভ: বর্তমানে সমাজের একটি অন্যতম ব্যাধি কিশোর গ্যাং। সমাজ থেকে কিশোর গ্যাং এর মত বিষয়গুলোকে কিভাবে উৎখাত করা যায় বা এর সমাধান কি করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ নূরে আলম : সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। আমি মনে করি কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িত সকলকে ক্রীড়ামুখী করা এবং বেকারদের কর্মসংস্থান করে দেওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যায়। আমার দায়িত্বরত জেলা জয়পুরহাটে যোগদানের পর যারা কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত, তাদের ক্রীড়ামুখী করে, বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে কিশোর গ্যাং বন্ধ করেছি। বর্তমানে জয়পুরহাটে কোনো কিশোর গ্যাং নেই।
বিডি২৪লাইভ: আপনাকে ওয়ারেন্ট মাষ্টার বলা হয়। এর পিছনের কারন কি ?
মোহাম্মদ নূরে আলম : জয়পুরহাট জেলা টানা ৮ মাস সারাদেশের মধ্যে ওয়ারেন্ট তামিলে শ্রেষ্ট হয়। আমি চিন্তা করে দেখলাম যে- ওয়ারেন্ট তামিল যতটা বেশি কার্যকর করা যাবে ওয়ারেন্টের আসামীও ধরা যাবে, পাশাপাশি পুলিশের টহল বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য অপরাধীরাও অপরাধ সংঘটন করতে ভয় পাবে।
বিডি২৪লাইভ: কখনো কোনো অপরাধীর জন্য কি মায়া হয়েছে?
মোহাম্মদ নূরে আলম : মায়া বলতে সব অপরাধীর জন্যই মায়া হয়। কারণ কেউই তো অপরাধী হিসাবে জন্মায় না। তারা যদি অপরাধের সাথে জড়িত না হতো তাহলে ভালো পথে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেক ভূমিকা রাখতে পারতো।
বিডি২৪লাইভ: জনাব মোহাম্মদ নূরে আলম আপনাকে বিডি২৪লাইভে সময় দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ নূরে আলম : আপনাকেও ধন্যবাদ এবং বিডি২৪লাইভের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অসংখ্যা ধন্যবাদ। ৩০ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগ-তিতীক্ষা ও জীবনের বিনিময়ে এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বিনিময়ে এই দেশটি স্বাধীন হয়েছে। রক্তের বিনিময়ে অনেক চড়ামূল্যে ক্রয়কৃত এই স্বাধীনতাকে যদি আমরা ধরে রাখতে চাই, স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে চাই, তাহলে সবাইকে সম্মিলিতভাবে দেশ গড়ার কাজে ভূমিকা রাখতে হবে।
কে এই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম :
জয়পুরহাট জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান মোহাম্মদ নূরে আলম। তিনি দূর্গাপুর ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের নাগড়পাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আক্তারুজ্জামানের ছেলে। জয়পুরহাটে বদলির আগে তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এর দায়িত্ব পালন করেছেন।
২৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন সাহসী এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে রাঙ্গামাটি সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), পটুয়াখালী কলাপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), মানিকগঞ্জ শিবালয় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার, সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়ান (র্যাব) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ময়মনসিংহ ও নারায়নগঞ্জের জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুলিশ বিভাগে চাকরিতে আসার পর থেকে জনগণের সেবার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করে কর্মস্থলের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। ময়মনসিংহ জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) থাকাকালীন জেএমবি আটকে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকাকালীন মাদক ও অপরাধ নির্মূলে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশংসিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, জয়পুরহাট পুলিশ সুপারের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। সেবাপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি এবং যথাসম্ভব তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নিই।
পুলিশ সুপার নূরে আলমের সকল ভাই শিক্ষা জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ৫ ভাইদের মধ্যে নূরে আলম সবার বড়। বাকী ৪ জনের মধ্যে একজন ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ও বাকীরা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নুরে আলম পুলিশের চাকুরিতে আসার পূর্ব থেকেই তার বাবা একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। নুরে আলমের শ্বশুরও একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নুরে আলমের বাবা ব্যবসার পাশাপাশি তার সকল সন্তানদের পড়ালেখা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন।
সর্বশেষ খবর
সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ খবর