
শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকরা দিন দিন মসলা জাতীয় উদ্ভিদ বস্তায় আদা চাষের দিকে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই পদ্ধতিতে আদা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এই উপজেলায়। তাই চাষীরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায়, ফল ও কাঁঠ বাগানের পতিত জমিতে এ বছর বস্তায় আদা চাষ করেছেন। কৃষকরা জানান অন্য ফসল বা বাগান ঠিক রেখে ওই ছায়াযুক্ত স্থানে অন্য ফসলের সাথি ফসল হিসেবে আদা চাষ করা যায়। এমনকি বস্তায় আদা চাষ করলে জরুরি প্রয়োজনে আঁদার বস্তার স্থানও পরিবর্তন করা যায়। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতের লক্ষণও খুব ভালো দেখা যাচ্ছে। এতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলায় আঁদার চাহিদা রয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৭২ মেট্রিক টন। বাকি আদা উপজেলার বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়েছে। তাই এ বছর ২৮০ মেট্রিক টন আঁদার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নি করে কৃষি অফিস থেকে ২ হাজার কৃষককে বস্তা, বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এতে বছরের র্মাচ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি বস্তায় সুষম সার মিশ্রিত মাটি ভরে সেখানে বীজ হিসেবে ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম করে বীজ আদা রেপান করা হয়েছে। আগামী নভেম্বর মাস থেকে এসব বস্তা থেকে আদা উত্তোলন শুরু করা হবে। ফলন ভালো হলে প্রতি বস্তা থেকে দেড় থেকে দুই কেজি করে আদা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বাজারে শৌখিন রসনা বিলাসের মসলা হিসেবে আঁদার বেশ চাহিদা থাকায় প্রতি কেজি আদা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই রোপিত আদা উত্তোলন করতে পারবেন কৃষকরা।
উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি বাতকুচি গ্রামের নুরমাশ পল্লির চাষি শওকত আলম জানান, তিনি প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এ বছর তার পাহাড়ি বাড়ির টিলাকে ঘিরে ফল বাগারে ছায়াযুক্ত স্থানে ৫ হাজার বস্তায় বারি-২ জাতের আদা বীজ রোপণ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। যদি প্রতি বস্তায় ১ কেজি করে আদা ফলনে পান তাহলে প্রায় ১০ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন তিনি। খরচ বাদ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, নিতান্তই শখের বসে পাহাড়ের ঢালে নিজের ফল বাগানে এই আদা চাষ করেছেন। তার দেখাদেখি অনেক কৃষক বস্তায় আলু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এ বছর নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজারের অধিক কৃষক বস্তায় আদা চাষ করেছেন। আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ২ হাজার কৃষককে বস্তা, বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছি। আমরা ভালো ফলন পাওয়ার লক্ষ্যে তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি ও সার্বিক খোঁজখবর রাখছি। আশা করছি নালিতাবাড়ীর কৃষকরা বস্তায় আদা চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর