
বরগুনার পাথরঘাটায় বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীতে নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে ইলিশের পোনা। নিষিদ্ধ বাঁধা জাল, গোপজাল, বেহুন্দি জাল ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ ইলিশের পোনা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু অসাধু জেলে মৎস্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি ইলিশের পোনা ধ্বংস করছে।
এতে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলেরা এসব পোনাকে ‘চাপিলা মাছ’ বলে এলাকার হাটবাজারে বিক্রি করছে।
অভিযোগ উঠেছে, পাথরঘাটা মৎস্য বিভাগের দৃশ্যমান কোনো অভিযান না থাকায় অসাধু জেলেরা ইলিশসহ নানা প্রজাতির পোনা ধ্বংস করে বাজারজাত করছে। প্রশাসনের চোখের সামনেই পৌর এলাকা ও বিভিন্ন গ্রামের হাটবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব ইলিশের পোনা। এমনকি এসব পোনা মাছ শুঁটকি করে বিক্রিও করা হচ্ছে, যদিও ইলিশের পোনা ধরা ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব নদীতে প্রতিদিন যে পরিমাণ ইলিশ ও অন্যান্য মাছের পোনা ধরা পড়ছে, তাতে আগামী মৌসুমে ইলিশ আহরণে চরম সংকট দেখা দিতে পারে। নদীতে ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহারে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন, বংশবিস্তার ও বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মৎস্য আইনে সোয়া চার ইঞ্চির নিচে ফাঁসবিশিষ্ট জাল ব্যবহার দণ্ডনীয় হলেও এখানে আধা ইঞ্চি বা তার চেয়েও ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামের জাকির হোসেন জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন নদীতে অবাধে বাঁধা জাল, গোপজাল, বেহুন্দি জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছের পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে।
এ ইউনিয়নের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে তিন শতাধিক নৌকায় ভাসা জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এসব জালে জাটকা, পোয়া, তপসি, টেংরা সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও পোনা ধরা পড়ে। বিক্রিযোগ্য মাছ হাটবাজারে বিক্রি হয় এবং অবিক্রেয় মাছ শুঁটকি করে বিক্রি করা হয়।
সাধারণ জেলে ও সচেতন নাগরিকরা জানান, নিষিদ্ধ বাঁধা, গড়া ও বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে ইলিশের পোনা, ডিমওয়ালা গলদা চিংড়ি, পাঙ্গাসের পোনাসহ বিভিন্ন ছোট মাছ মারা পড়ছে। মরা পোনাগুলো নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, আবার দেড়-দুই ইঞ্চি আকারের পোনাগুলো প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের নজরদারি না থাকায় এই অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে।
তারা আরও জানান, প্রতিদিন কত পোনা মাছ ধ্বংস হচ্ছে, তা চোখে না দেখলে কল্পনা করাও কঠিন। প্রশাসন যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
সম্প্রতি কাকচিড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আল-আমিন পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করেন, নদীতে অব্যাহতভাবে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ধ্বংস করছে জেলেরা। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে জেলেরা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে অবৈধ জাল দিয়ে ইলিশের পোনা ধরা হলে ভবিষ্যতে নদীতে পানি থাকলেও মাছ থাকবে না।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, আমরা গত মাস থেকে ৫০টির বেশি অভিযান পরিচালনা করেছি। তবে জেলায় তিনটি বড় নদী এবং জনবল সংকটের কারণে প্রতিটি স্থানে পৌঁছানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই সুযোগে কিছু অসাধু জেলে ‘চাপিলা’ নাম দিয়ে ইলিশের পোনা বিক্রি করছে। আমরা নদীতে টহল জোরদার করেছি।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান বলেন, অবৈধ জাল দিয়ে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর