
অনার ২০০ মডেলের স্মার্টফোন ব্যবহার করার কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাক প্যানেল খুলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছেন ভুক্তোভোগীরা।
তারা জানান, অনার ২০০ মডেলের স্মার্টফোন কিনে ব্যবহারের কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাক প্যানেল খুলে যাচ্ছে। ফলে মোবাইল কিনে প্রতারিত হয়েছেন তারা।
সালাহউদ্দিন ফরহাদ নামে এক ভুক্তভোগী জানান, অফিসিয়ালি অনার ২০০ ফোনটি কেনার মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ব্যাক প্যানেল আলগা হয়ে যেতে শুরু করে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। হয় এটি ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট, নয়তো ফোনটিতে শুরুর থেকেই কোনো গোপন ত্রুটি ছিল।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ করেছেন তিনি।
যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনাদের দপ্তরের মাধ্যমে আমার ভোগান্তির বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জানাতে চাই। আমি গত ১৭/০২/২০২৫ তারিখে একটি Honor 200 অফিসিয়াল স্মার্টফোন ক্রয় করি। ফোনটি ব্যবহার শুরু করার ১০ দিনের মাথায় লক্ষ্য করি, ফোনটির ব্যাক প্যানেল খুলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট দোকানে (যেখান থেকে ফোনটি কিনেছি) যোগাযোগ করি, কিন্তু তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায়। পরে যখন দেখি সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে, তখন ফোনে যোগাযোগ করলে তারা কোনো দায়ভার নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমার মতো আরও দু'জন ভোক্তা একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, যাদের কাছ থেকে প্রমাণও সংগ্রহ করেছি। এরপর তারা আমাকে সার্ভিস সেন্টারে যেতে বলে। আমি স্পষ্ট জানাই যে, ১০ দিনের মাথায় এমন একটি সমস্যা অগ্রহণযোগ্য, এবং আমি ফোনটির রিপ্লেসমেন্ট চাই। তাদের পরামর্শে আমি ১৭/০৪/২০২৫ তারিখে সিলেট থেকে ঢাকায় এসে মিরপুর ১ ও বসুন্ধরা সিটির কাস্টমার কেয়ারে যাই। কিন্তু তারা জানিয়ে দেয়, রিপ্লেসমেন্ট দেওয়া সম্ভব নয়।
এরপর আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করে একজন প্রতিনিধি’র সহায়তায় ২৩/০৪/২০২৫ তারিখে পুনরায় ঢাকায় আসি। কিন্তু এবার তারা বলে, আমার ফোনটি বাকা, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। যদি ফোনটি বাকা হয়েই থাকে, তাহলে তারা হয়তো এমন পণ্যই আমাকে বিক্রি করেছে। কারণ ফোন কেনার ১০ দিনের মধ্যেই আমি সমস্যাটি ফেস করেছি, এবং কাস্টমার কেয়ারে প্রথমবার গেলে এমন কিছু তারা বলেননি।
এছাড়াও, যে আরও দু'জন ভোক্তা একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের ফোন তো বাকা হওয়ার কথা না, অথচ তাদের ক্ষেত্রেও ব্যাক প্যানেল খুলে যাচ্ছে। যেখানে বাজারে এই ফোনের মূল্য ৪২,০০০ টাকা, আমি তাদের কাছ থেকে ৬০,০০০ টাকা দিয়ে ফোনটি ক্রয় করেছি, ভালো সার্ভিসের প্রত্যাশায়।
কিন্তু বাস্তবে আমি মনে করছি, তারা আমাদের কাছে সি গ্রেডের ত্রুটিপূর্ণ ফোন বিক্রি করছে। এই প্রতারণা ও হয়রানির প্রেক্ষিতে আমি এবং অন্যান্য দুইজন ভুক্তভোগী নিচের দাবি জানাচ্ছি:
১. আমাদের প্রতিটির ফোনের পূর্ণ রিফান্ড প্রদান করতে হবে।
২. এই প্রতারণার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও জরিমানা ধার্য করতে হবে।
৩. ভবিষ্যতে এমন প্রতারণা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সালাহউদ্দিন ফরহাদ জানান, আমি অনার ২০০ মোবাইলটি অফিসিয়ালি ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। আমি চাইলে অর্ধেক টাকাতে আনঅফিসিয়াল ফোন কিনতে পারতাম, কিন্তু ভালো সার্ভিস পাওয়ার আশায় অফিসিয়াল ফোনটিই আমি কিনি। কেনার ১০ দিনের মধ্যেই দেখি আমার ফোনের ব্যাক প্যানেল উঠে যাচ্ছে। প্রথমে ভাবলাম আমার ব্যবহারের সমস্যা, পরে খোঁজ নিয়ে দেখি অনেকেই এই একই সমস্যায় পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি হনার কেয়ারে গেলেও তারা কোনো সমাধান দেয়নি। পরে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার হনারের পক্ষে আমার সাথে স্মার্ট টেকনোলজি আমাকে ফোন নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বলা হয়। তখন তারা বলে আমি নাকি ফোন বাঁকা করে ফেলেছি।
এই যুবক আরও বলেন, কথা হচ্ছে, ফোন যদি আমার বাঁকা করে থাকি সেটা কাস্টমার কেয়ার থেকে কেন বললো না? তখন এটাকে আমি ম্যানুফ্যাকচার ডিফেক্ট বলার পরেও কিছু বললো না। আমাকে আবার ফের ঢাকায় কেন আবার ডাকলো? দুইবারে আমার আর্থিক ক্ষতি ভাড়া বাবদ প্রায় ৫ হাজারের বেশি, পড়ালেখা বাদ দুইদিন। সবচেয়ে বড় কথা আমাকে এত হয়রানি কেন করা হল? সিলেট থেকে দুইবার কেন আমাকে ঢাকা নেয়া হয়েও সমাধান দেয়া হলো না।
‘পরে তারা আমাকে জানিয়েছে ফোন ঠিক করে দিবে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, ম্যানুফ্যাকচার ডিফেক্ট ফোন আমি সার্ভিসিং কেন নিব। আমি এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনার-এর সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার ফারুখ রহমান বলেন, কোনো প্রশারের কারণে এমনটা হতে পারে। অথবা চার্জে লাগিয়ে গেমস খেললেও এমনটা হতে পারে। তবে সালাহউদ্দিন ফরহাদ নামে যিনি অভিযোগ করেছেন তার ফোনটি আমরা সার্ভিসিং করে দিতে চেয়েছি কিন্তু তিনি নতুন মোবাইল অথবা টাকা ফেরত দাবি করেছেন। যা আমাদের পলিসির বাইরে। আমাদের পলিসি অনুযায়ী ১০ দিনের মধ্যে ফোনে কোনো সমস্যা হলে তা বদলে দেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা অলরেডি হেডকোয়ার্টার্সে জানিয়েছি। ফোনটি আমরা সার্ভিস সেন্টার থেকে কারণ অনুসন্ধান করে বিস্তারিত জানাব এবং যথযথ ব্যবস্থা নেব। এর পরেও সে তার শখের ফোন হিসেবে যে বর্ণনা দিয়েছেন আমরা তার ফোনটি বদলে দেয়ার জন্য কথা বলছি।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর