
ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন চরম আকার ধারণ করেছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও নানা স্থাপনা। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বাঁধের ভেতরে ও বাহিরে বসবাসকারী শত শত পরিবার। হুমকির মুখে রয়েছে জেলা শহর রক্ষা বাঁধও।
সরেজমিনে শিবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্লুইসগেট, মাছঘাটসহ আশপাশের অন্তত চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের চিহ্ন দেখা গেছে। গত কয়েক মাসে মেঘনার ভাঙন আগ্রাসী রূপ ধারণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক বাজার, অসংখ্য বসতভিটা ও আবাদি জমি। নদী থেকে শহর রক্ষা বাঁধের দূরত্ব এখন মাত্র ৫৫ মিটার।
ভাঙনের ভয়াবহতায় ভিটেমাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। কেউ কেউ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন বসতঘর। নদীভাঙনে ইতোমধ্যে দেড় কানি জমি হারানো আব্দুর রহিম বলেন, “নদীটা আরও দূরে ছিল, এখন আমার ঘরের কাছে চলে এসেছে। যা জমি আছে, সেটুকুও হয়তো আর থাকবে না।”
৭০ বছর বয়সী মো. সিরাজ বলেন, “ঘরটার পাশেই এখন নদী। আর কোনো উপায় নেই, জমি কেনার সামর্থ্যও নাই।”
কৃষক মঞ্জুর আলমের আশঙ্কা, “এই জমিতেই চাষ করে সংসার চলে। যদি নদী সব নিয়ে যায়, তাহলে ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
মো. সোহেল রানা জানান, “আমাদের বসতভিটা বাঁধের পাশে। নদী যেভাবে ভাঙতেছে তাতে মনে হচ্ছে, বাঁধটাও আর থাকবে না।” ভাঙনে একাধিকবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখন বেড়িবাঁধের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া বিধবা আনোয়ারা বেগম বলেন, “নদী এখন ঘরের একদম পাশে। এখানে আর থাকা সম্ভব না, তাই অন্যত্র ঘর সরাচ্ছি।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদী ভাঙন প্রতিরোধে কেবল অল্প কিছু জিওব্যাগ ফেলেই দায়সারা করে। কিছুদিন পরই স্রোতে সেগুলো নদীতে তলিয়ে যায়। এলাকাবাসীর দাবি, আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই দ্রুত সিসি ব্লকের মাধ্যমে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন ও মো. ফারুক বলেন, “আমরা বারবার নদীভাঙনে সর্বস্ব হারাচ্ছি। বারবার জিওব্যাগ ফেলে আমাদের ধোঁকা দেওয়া হয়। এবার স্থায়ীভাবে সিসি ব্লক দিয়ে ভাঙন ঠেকানো হোক।”
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন আরিফ বলেন, “শিবপুরে দেড় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, এর মধ্যে আধা কিলোমিটার অতিভাঙন। ৬০ মিটারের জন্য জিওব্যাগ ডাম্পিং চলছে। বাকি অংশের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। স্থায়ী সমাধানে সিসি ব্লক নির্মাণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করা হবে।
সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এনামুল হক। এতে সামান্য আশার আলো দেখছেন স্থানীয়রা। তারা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।
আরমান/সাএ
সর্বশেষ খবর