
ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক বিচারপতির বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম কে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।বিচারপতি দেবাশিষ রায় চৌধুরি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক। সে মাগুরা ২ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর ছেলে ও বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীর ভাই।
জানা গেছে, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভার ভিউ আবাসিক এলাকার ৮ নম্বর রোডের ৫২৫ নম্বর বাড়িতে বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরি পরিবার নিয়ে বসবাস করছিল। পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টার পাওয়ায় চলতি মে মাসের ২ তারিখে বসুন্ধরার বাসা থেকে পরিবারের সদস্যদের ও মালামাল নিয়ে ঢাকার কোয়াটারে চলে যান। এসময় পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় কেয়ারটেকার আশরাফুল ওই বাড়ির দায়িত্বে ছিলেন। দেবাশিষ রায় চেীধুরী চলে যাবার পরে ৩ মে থেকে ৯ মে যেকোনো সময় ২ তলার জানালার গ্রিল কেটে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে স্বণার্লঙ্কার, হাতঘড়ি ও নগদটাকাসহ ৫২ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। ৯ মে রাজধানীর বাসা থেকে দেবাশিষ রায় চেীধুরী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরার বাসায় এসে দেখতে পান তার বাসায় জানালার থাইগ্লাস খুলে গ্রীল কেটে চুরি হয়েছে। পরেরদিন ১০মে বাড়ির কেয়ারটেকার আশরাফুল বাদী হয়ে চুরির ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলামকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
গতকাল (১৪মে বুধবার) দুপুরে সরজমিনে বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায় বিচারপতির বাড়ির কেয়ারটেকার ও মামলার বাদী আশরাফুল জানান, ‘আমি গত ছয় মাস আগে এখানে কাজে যোগদান করেছি। এই বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে দেবাশীষ রায় চৌধুরী পরিবার নিয়ে থাকতেন, সেখানে যাওয়ার আমার কোন অনুমতি ছিল না। এই ছয় মাসে মাত্র দুইবার আমি দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গিয়েছিলাম। গত ২রা মে বাড়ির আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন মালামাল ট্রাকে তুলে নিয়ে বিচারপতি দেবাশিস রায় চৌধুরি রাজধানীতে সরকারিভাবে প্রাপ্ত একটি বিচারপতির কোয়ার্টারে চলে যান। আমি প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে বাড়ির চারপাশে টহল দিয়ে রাতে নিচ তলার আমার সংরক্ষিত কক্ষে ঘুমিয়ে থাকতাম। কখন গ্লিল কেটে চোর ভিতরে প্রবেশ করেছে তা আমি বুঝতে পারিনি। ৯ মে শুক্রবার সকালে আমার মালিক দেবাশীষ রায় চৌধুরী বাড়িতে দেখাশোনার জন্য আসলে তালা খুলে দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করার পরেই চুরির বিষয়টি দেখতে পান। এরপর তিনি থানা পুলিশকে জানালে সেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এসে আলামত সংগ্রহ করে।
চুরির ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ও ঢাকা জেলার দক্ষিণ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ঢাকা জেলা দক্ষিন ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম জানান, চুরির সময় দেবাশীষ রায় চৌধুরীসহ পরিবার কেউ বাড়িতে ছিল না, এমনকি তাদের বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরাগুলো বন্ধ ছিল। এ ঘটনায় আমরা পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে, আশা করি খুব দ্রুতই আসামিদের গ্রেপ্তার করা যাবে।
কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ প্রত্যাহার বিষয়ে বর্তমানে থানায় দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর তদন্ত মোহাম্মদ আল আমিন জানান, চুরির ঘটনা জানার পর রাতেই ওসি মাজারুল ইসলামকে ফোনে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। তিনি শুধু আমাকে ওয়ারলেস সেট বুঝিয়ে দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। তবে লিখিত কোন প্রত্যাহারের আদেশ এখনো পর্যন্ত থানায় এসে পৌঁছেনি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর