
সম্প্রতি জুলাই আন্দোলন ও বিগত ১৫ বছরে নিয়োগে দুর্নীতির প্রেক্ষিতে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। তবে কমিটিগুলোর মেয়াদ ২ মাসের বেশি সময় পেরোলেও প্রাথমিক তদন্তও সম্পন্ন করতে পারেনি কমিটিগুলো।
এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রক্রিয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তর, বিভাগ, হল ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় চিঠিপত্র ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রেরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দুই কমিটি। এমনকি মাঠ পর্যায়ে কার্যকরী কোনো অনুসন্ধানও করতে পারেনি তারা। এ নিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত কমিটি।
এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহযোগিতা না করলে এই কমিটি থেকে সরে যাবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান। এদিকে এভাবে চলতে থাকলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তারা।
জানা গেছে, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে গত ১৬ মার্চ পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে প্রশাসন। কমিটিকে ৯০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে গত ১৫ মার্চ চব্বিশের জুলাই আন্দোলন বিরোধী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা চিহ্নিত করতে আরেকটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে ৬০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে দুর্নীতি সংক্রান্ত কমিটির মেয়াদ এক-তৃতীয়াংশ ও জুলাই আন্দোলন সংক্রান্ত কমিটির মেয়াদ প্রায় অর্ধেক শেষ হলেও এখনও প্রাথমিক তদন্তও শেষ করতে পারেনি উভয় কমিটি।
উভয় কমিটি বিভিন্ন দপ্তর, বিভাগ, হল ও সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান না করে শুধুমাত্র গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে কার্যত ফলাফল পাওয়া যায় না বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি কমিটিগুলো প্রাথমিক তথ্যের অভাবে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীদের খোঁজ, সাক্ষাৎকার ও মাঠ পর্যায়ে তদন্তও করতে পারছে না বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও যথাযথ সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতঃপূর্বে গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিটিগুলোকেও স্বপ্রণোদিত হয়ে নথিপত্র ঘেঁটে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করতে দেখা যায়নি। এমনকি অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকারও নেয়নি তারা। এছাড়া তদন্তে অভিযুক্তদের দেওয়া তথ্য কোনোরূপ যাচাই-বাছাই না করেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার অভিযোগ রয়েছে। এতে ওইসব কমিটির তদন্ত প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে জুলাই আন্দোলন ও নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত কমিটিও যেন এরকম প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ইতঃপূর্বে এমন অনেক তদন্ত কমিটি হয়েছে যেগুলো শুধু নামমাত্র তদন্ত করে ঘটনা চাপা দিয়েছে। এসব কমিটি মূলত তথ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করে থাকে। তাই তদন্ত প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না। তাই এই দুই কমিটিকে কেবল চিঠির মাধ্যমে তথ্য চেয়ে বসে থাকলে হবে না। তাদেরকে স্বপ্রণোদিত হয়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে নামতে হবে।
তদন্তের স্থবিরতার বিষয়ে জুলাই আন্দোলন সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, আমরা তথ্য চেয়ে বিভিন্ন অফিস, দপ্তর, বিভাগে নোটিশ দিয়েছি। পূর্বে যারা তদন্ত কাজ করেছে তাদের থেকে আমরা তথ্য-উপাত্ত চেয়েছি। তবে আশানুরূপ তথ্য পাইনি। বিষয়টি ভিসি স্যারকে অবগত করলে তিনি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবার তথ্য চাওয়ার পরামর্শ দেন। আগামী সপ্তাহে কমিটির সদস্যদের সাথে বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।
এদিকে কমিটির মেয়াদ এক-তৃতীয়াংশ শেষ হলেও এখনও প্রাথমিক তদন্তও সম্পন্ন করতে পারেনি নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত কমিটি। এমনকি এই কমিটি বিগত সময়ের দুর্নীতির প্রাথমিক নথিপত্র ও তথ্যের অভাবে কাজে অগ্রসর হতে পারছে না বলে অভিযোগ করছেন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, আমরা এখনও তদন্তের প্রাথমিক কাজও শেষ করতে পারিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট অতীতের নিয়োগ বোর্ডের নথিপত্র ও তথ্য ও বিভিন্ন সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটির তথ্যসহ প্রাথমিক তথ্যগুলো চেয়েছি। তবে প্রশাসন থেকে সাড়া পাইনি। এমনকি ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে জানিয়েছে তবুও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এভাবে চলতে থাকলে আমি তদন্ত কমিটি থেকে সরে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি। হয়ত আমার জায়গায় অন্যজন আরো ভালো করবে। তাছাড়া এই কমিটির তদন্ত কার্যক্রম বড় হওয়ায় আমাদের একটি আলাদা কক্ষ প্রয়োজন ছিল তাও পাইনি। যদি পর্যাপ্ত তথ্য না পাই, তাহলে হয়ত প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন ছাড়া কিছুই দিতে পারব না। ৬৮ টি জায়গায় নোটিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ ও সাক্ষাৎকার দিতে আসেনি।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, তদন্ত কাজে কমিটিকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদানে ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেয়া আছে। তদন্তের জন্য আলাদা করে কোনো কক্ষ জরুরি না। তবে প্রয়োজন হলে প্রশাসন ভবনে কক্ষ দেওয়া সম্ভব না হলেও বিকল্প উপায় দেখব।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর