• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩ ঘন্টা পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ৩১ মে, ২০২৫, ০৯:১১ রাত

৫ আগস্টের পর শ ম রেজাউলকে অপহরণ করতে চেয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা!

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কারা কীভাবে পালিয়েছেন সেই বর্ণনা খুব একটা জানা যায়নি। প্রায় দশ মাস পর এ ব্যাপারে ভারতীয় গণমাধ্যমে মুখ খোলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ৫ আগস্ট কীভাবে ছাত্র-জনতার তোপ থেকে বেঁচে যান সেই বর্ণনা দেন সাবেক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদেরের সেই বর্ণনা নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখন ‍মুখ খুললেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।   

ইউটিউব চ্যানেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ ম রেজাউল করিম জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে তাকে এক ‘মারাত্মক পরিকল্পনার’ মুখোমুখি হতে হয়। যার ফলে অবশেষে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এ সময় ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগও করেন তিনি।

ওই সাক্ষাৎকারে শ ম রেজাউল করিম ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, খুবই নির্মম ঘটনা। আমি আমার ন্যাম ফ্ল্যাটে থাকতাম। এর আগের দিন রাতেও ঊর্ধ্বতন সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আমার স্ত্রী বারবার বলছিলেন, ন্যাম ভবনে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। আমি তাকে ধমক দিয়েছি। আমার মেয়ে লন্ডনে ব্যারিস্টার। সে ফোন দিয়ে বলেছে, পরিস্থিতি ভালো না আপনি সরে যান। আমি আমার ওয়াইফকে ধমকিয়ে টেলিভিশন বন্ধ করতে বলেছি। কারণ এগুলো দেখলে আমি ট্রমাটাইজ হবো। প্রধানমন্ত্রী যখন আছেন, তখন তিনি নিশ্চয় ম্যানেজ করবেন। রাত ১২টা পর্যন্ত আমি যোগাযোগে ছিলাম। আমি বাসা থেকে বের হইনি। পরে জানলাম, ওই ৬ নম্বর ভবনে একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ নেই। সবাই চলে গেছে।

রেজাউল করিম বলেন, সকা ল বে লা আমি যখন ম্যাসেজ পাচ্ছি, অবস্থা খুবই বিপন্ন। তখন ন্যাম ভবনের নামনে মব এসে গেছে। সেখানকার কেয়ারটেকার এসে বলছে, স্যার এখন বের হবেন না। আপনাদের খুঁজছে এখানে। একজন পিয়ন এসে বললো, স্যার আপনার নাম ধরে আপনার বাসা খুঁজছে। আমার এলাকায় তো প্রতিপক্ষ আছে। আমাকে বলা হলো লাইট অফ করে যেন থাকি।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমার ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। ব্যারিস্টার সে। সে আমাকে ফোন করে বললো, আপনার বাসা ভেঙে ফেলা হবে। আপনি চেয়ার, সোফা দিয়ে দরকার সামনে থাকেন। আমি সোফা টেনে আনতে পারি না। আমার শরীরে কুলাই না। আমি ফ্যান-লাইট বন্ধ করে দিলাম। তখন প্রচণ্ডভাবে দরজায় লাথি মারা হচ্ছে।

তখন আমার একজন গানম্যান অনেক দূর থেকে বলছে, স্যার আপনার নাম ধরে খুঁজছে। আপনি যতক্ষণ দরজা না ভেঙে ঢুকে আপনি দরজা খুলিয়েন না। তো আমিও খুললাম না। তখন নিচে থেকে স্টাফরা ওদের বলছে, আপনারা এখন খুঁজছেন। উনারা কেউ নাই। কালকে সব পালাইয়া চলে গেছে। তারা বিভিন্ন ফ্ল্যাট ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখে কেউ নাই। তখন আমারটাকেও ধরে নিয়েছে লক করা, ভেতরে কেউ নেই। এভাবে ওরা যখন উপর থেকে নিচে নামলো। তখন স্টাফরা পুরো বিল্ডিংয়ের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা যেন বোঝে এই বিল্ডিংয়ে কেউ নাই।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, আল্লাহর কুদরতি শক্তিতে একটা লোক আসলো। সে ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। আমি তার নাম নিরাপত্তার জন্য বলবো না। আমি নামি ওয়ান এলিভেনের সময় তার স্ত্রী গিয়েছিল তার মামলা নিয়ে, আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম। সেই কৃতজ্ঞতায় সে জানতে পেরেছে, এই বিল্ডিংয়ে আমি থাকি। সে উপরে এসেছে। উপরে আসার পরে আমাকে বারবার ফোন করছে, আমি তো ফোন অফ করে রেখেছি। তখন সে গানম্যানকে ফোন দিয়েছে। গানম্যান বলছে, স্যার আপনি উপকার করেছিলেন এক ভদ্রলোকের। সে উপরে গেছে। তো আমি তো দেখি, আমার উপায় নাই। দরজা খুললাম। সে সময় আমরা সবাই ঘেমে গেছি। আমার স্ত্রী বাথরুমের মধ্যে।

তিনি বলেন, ওই লোক বললো, আপনারা ড্রেস চেঞ্জ করেন। কোনো কিছু হাতে নিতে পারবেন না। তো আমি একটা গেঞ্জি গায়ে দিলাম। আর পায়ে স্পঞ্জ। আর সে মাস্ক পরালো। পরে অসুস্থতার ভান করে বের করে পরিবারসহ নিয়ে আসলো। আমরা কিছু নিয়ে বের হতে পারিনি। সেখান থেকে অ্যাপলোতে গেলাম। সিএনজিকে ভাড়া দেওয়ার মতো টাকাও ছিল না। সেখান থেকে অন্য লোকের সাহায্য নিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় থাকলাম, এক সপ্তাহ। পরে শুনলাম, এটা যে আমাদের ফ্যামেলির বাসা। সেটা অনেকেই জানে। এ কারণে সেখান থেকে শিফট হয়ে আরেকজন দূরবর্তী আত্মীয়ের বাসা বসুন্ধরায় গেলাম। সেই বাসা থেকে বের হতাম না।

রেজাউল করিম বলেন, হঠাৎ করে একদিন আমার দরজায় কড়া নাড়লো আমার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তাপস চৌধুরী। সে বললো হ্যাকার ও প্রশাসনের লোক তাকে ধরে নিয়ে এসেছে। তারা ১২ কোটি টাকা চায়। আমার একটা ভাই চাকরি করে ব্যাংকে। তাকে নিয়ে আসা হলো। ও আসার পরে বললো সর্বোচ্চ ১০ লাখ দিতে পারবো। পরে দরকষাকষি করে বললো পাঁচ কোটি টাকা দিবেন। তাহলে উনাকে ছাড়া হবে। না হলে নিয়ে যাবে। এই অপহরণ চক্রের সঙ্গে ওই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যাকে আমি টাকা দিয়ে বানাইছি। সেই ছেলে টাকার লোভে তাদের সঙ্গে এক হয়ে গেছে। আমার উপজেলার বিএনপি-জামায়াতের লোকের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ও এখানে চলে এসেছে। একটা পর্যায়ে সবাই কান্নাকাটি করছে। তখন আমি বললাম, আমি থানায় যাবো। তখন আমার ছেলে ম্যাসেজ করছিল যে, আপনি কোনো অপরিচিত লোকের সঙ্গে যাবেন না। থানায় যাবেন। থানায় গেলে অন্তত আপনাকে কোর্টে নেবে। নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জোর করে লিফটের ভেতর ঢোকাচ্ছে। প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করে টাকা আদায় করবে। থানায় নেওয়াটা টার্গেট না। তো আমি বললাম, তোমরা না বলছো, প্রশাসনের লোক আছে, ডিবির লোক। তো তাদের ডাকো। আমি এখান থেকে চলে যাবো। তখন তারা বলে, না আপানাকে বাসায় যেতে হবে। টাকা দিতে হবে। তখন আমি বুঝলাম, আমি মবের ভেতরে পড়ে গেছি।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এর ভেতরে আল্লাহর কুদরতি শক্তিতে আমার একজন স্টাফ মোটরসাইকেল নিয়ে আসছে। সে শুনতে পেয়েছে আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আসার পরে ওই ছাত্রলীগের সভাপতি তাপস সে আমার ভাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতেছে। সে আমাকে লিফটে উঠাবে। এক পর্যায়ে তাকে ফেলে ধরছে। আমার ওই স্টাফ আমাকে বলছে, আপনি মোটর সাইকেলে ওঠেন। আমি মোটর সাইকেলে উঠলাম। সে ঝিকঝাক ওয়েতে আমাকে নিয়ে চলে গেল। আমাদের পেছনে অপহরণকারীরা গাড়ি চালাচ্ছে। এরপর আমরা গ্রামীণ একটা এলাকায় গেলাম। ছাত্রলীগের তাপসের নেতৃত্বে ওই মবের লোকে আমার বাসার সামনে রয়েছে। তারা আমার স্ত্রীকে ও ভাইকে ধরবে যে, তারা পরিকল্পিতভাবে আমাকে সরিয়ে দিয়েছে। তারপর আমার ওয়াইফকে আরেকটা বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। ওই বাসার নিচে সিসিটিভি ছিল। সমন্ত রেকর্ডটা আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। তখন মনে হলো দেশের কোথাও আমি নিরাপদ না।

আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপি বলেন, তখন আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, নিজের বডিকে ডিসগাইড করে, আমার ঘনিষ্ঠ একজন ব্যক্তি, সাবেক এমপি এখন আর রাজনীতি করে না, সে এবং আমার ভাই এদের সাহায্য নিয়ে একটি সীমান্তে আসলাম। ওইখানে আসার পরে যোগাযোগ করলাম, যারা পার করে তাদের সঙ্গে। তাদের আগে টাকা না দিলে কিছুই করবে না। টাকা তো নেই। তাদের দয়া হয়েছিল মনে হয়। এরপর তারা একটা বাগানের নিচে ঢুকালো। একটা কর্দামাক্ত পুকুরের মধ্যে তখন পৌনে তিন ঘণ্টা, তারকাটায় আমার পুরো শরীর ছিঁড়ে গেছে। চার ঘণ্টার চেষ্টায় বর্ডার ক্রস করার সুযোগ পেলাম। ওপারে যোগাযোগ করে একজন নিতে আসলো। সেখান থেকে একজনের বাসায় নেওয়া হলো। যে বাসায় নেওয়া হলো, সেটার মালিক ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক এক কর্মকর্তা। তার বাসায় বেশকিছু থেকে অনেক দূর এসে বাংলাদেশের নাগরিক যারা কলকাতায় সেটেল্ড হয়েছেন, তার বাসায় থাকলাম। কলকাতায় গিয়ে দেশের আত্মীয়-স্বজনের সহায়তা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলো। 

শ ম রেজাউল করিম বলেন, কলকাতা যাওয়ার পরে ধার করে সেখানকার গভর্নমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার পাসপোর্টে অ্যারাইভাল সিল নিয়ে, এক্সিটেড পারমিশন নিয়ে, তারপরে সেখান থেকে অন্য একটি দেশে (নাম প্রকাশ করেননি) আসতে সক্ষম হই।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। মনে হয়, মৃত্যুর ভেতর থেকে বেঁচে এসেছি। প্রতিটি স্তরে মনে হয়েছে আল্লাহ তার কুদরতের শক্তি দিয়ে আমাকে অতিক্রম করিয়ে এনেছেন।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]