
সকালে সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম (৫৪)। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণহীন একটি বাস এসে চাপা দেয় তাকে। গাছ ও বাসের মাঝে দুই ঘণ্টা আটকে বাঁচার লড়াই করেন। উদ্ধার হন জীবিত অবস্থায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।
গতকাল শুক্রবার (৬ জুন) দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আমিনুলের মৃত্যু হয়। বাদ মাগরিব কালপোহা গ্রামে আমিনুলের দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেছরদিয়া মোড়ে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমিনুলকে ধাক্কা দিয়ে সোজা গিয়ে আঘাত করে একটি পাকুড়গাছে। আমিনুল গাছ ও বাসের মাঝখানে আটকে যান। সোয়া দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রেকারের সাহায্যে তাকে উদ্ধার করা হয়।
করিমপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী জানান, আমিনুলের দুই পায়ে ছিল মারাত্মক আঘাত। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলে। কিন্তু জীবনের এই যুদ্ধে হেরে যান আমিনুল। ঢাকায় নেওয়ার পথে দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে,আমিনুলের পরিবারে চলছে নীরব কান্না। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ছিল ছোট্ট সংসার। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক কষ্ট করে। ছেলে এবারে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে আর ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন কালপোহা গ্রামের ইউপি সদস্য সয়েল আহমেদ বলেন, আমিনুল খুবই গরিব ছিলেন। ব্যাটারিচালিত রিকশাটিও ভাড়া করে চালাতেন। মাত্র ২-৩ শতাংশ জমির ওপর ছোট্ট একটি ঘর ছিল তার। এখন তার পরিবারটা নিঃস্ব হয়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, অন্যের ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়া করে চালিয়ে দিনে যা পেতেন তা দিয়েই সংসার চলতো কোনো মতে। তার স্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে সংসারে। ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এখন পরিবারটি পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়বে। তিনি শুধু একজন বাবা নন, ছিলেন পরিবারটার একমাত্র ভরসা। তার হঠাৎ মৃত্যু যেন তাদের মাথার ওপর থেকে ছায়াটাই কেড়ে নিল। আমরা স্থানীয়ভাবে যা পারি সাহায্য করছি, তবে এই পরিবারের পাশে সরকারসহ সমাজের সকল হৃদয়বান মানুষের দাঁড়ানো উচিত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে এ দুর্ঘটনার পর স্থানীয় মানুষজন গাছের গুঁড়ি ফেলে মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দেন। তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা গিয়ে এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে রেকার দিয়ে বাস সরানো সম্ভব হয়নি, পরে ভাঙ্গা থেকে আনা রেকার দিয়েই আমিনুলকে উদ্ধার করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর