
লামা বন বিভাগের আওতাধীন বমু রিজার্ভের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঠ কাটা ও পাচারের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি চট্টগ্রাম বন সংরক্ষক কার্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম বন সংরক্ষক কার্যালয়ের উপ বন সংরক্ষক এম.এ. হাসান জানান, অভিযোগকারীর প্রতিনিধিদের দেখানো স্থানগুলোতে দিনব্যাপী তল্লাশি চালিয়ে কাঠ কাটার কোনো চিহ্ন বা কাঠ পাচারের সত্যতা পাওয়া যায়নি। রাতে লামা বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, তদন্ত কমিটির সদস্য কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ রাশেদ আহসান, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ফরেস্ট রেঞ্জার মোঃ আবদুল মালেক, লামা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহি, হাবিবুর রহমান, জসিম উদ্দিন, আরিফুল ইসলাম এবং স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় জনসাধারণ জানান, বমু বিট এলাকাটি পূর্বে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভৌগোলিক কারণে এবং দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ২০০৫ সালে এটি লামা বন বিভাগের অধীনে আসে। বমুবিট এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে জবরদখলপ্রবণ হওয়ায় বন বিভাগ ২০২১ সালে জবরদখলকারীদের তালিকা করে উচ্ছেদের প্রস্তাব জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠায়, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বমু রিজার্ভের মোট বনভূমির পরিমাণ ২১৭৮.৮৪ একর। এর মধ্যে ২০২৭.৪২ একর সংরক্ষিত এবং ১৫১.৪২ একর রক্ষিত বনভূমি। ১৯৮৯-৯০ থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত ১০৩০ একর জমিতে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে। স্থানীয় ৯১৭ জন উপকারভোগীর সাথে চুক্তি করে বাগান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৫০ একর সামাজিক বনায়নের গাছ নিলামে বিক্রি করে উপকারভোগীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় ২৫০ একর জমিতে সামাজিক বনায়ন সৃজন করা হয়েছে।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী আমির হোসেন, তহুরা বেগম ও মোহাম্মদ হোসেন জানান, লামা বন বিভাগ বনভূমি জবরদখল ও বন অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। স্বার্থান্বেষী মহল বমু বিটের সরকারী বাগানের ক্ষতিসাধনে ব্যর্থ হয়ে ফেসবুকে এবং নামসর্বস্ব পত্রিকায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বমু বিটের রিজার্ভের সেগুন গাছ অবৈধভাবে কর্তন ও পাচারের অভিযোগে কতিপয় কর্মকর্তা/কর্মচারীর জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন সংরক্ষকের দপ্তর হতে গঠিত তদন্ত দল সরেজমিনে তদন্তে আসে। অভিযোগকারী তার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারি দপ্তরকে অহেতুক হয়রানি করা হয়েছে।
সরেজমিনে বমু বিটের নন্দীরবিলের চড়ুইবিল এলাকার সেগুন বাগানে গিয়ে স্থানীয় চাষী আমির হোসেন ও মোহাম্মদ হোসেন জানান, ১৯৯১-৯২ সালে বাগানটি সৃজন করা হয়। ২০১৭ সালের আগে প্রায় অর্ধেক সেগুন বাগান নষ্ট হয়ে গেলে সেখানে ২০১৭-১৮ সালে ১০ হেক্টর জমিতে সামাজিক বনায়ন করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো গাছ কাটা হয়নি।
পানিস্যাবিল ওয়েদ্দারঘোনা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২০১০-১১ সালে বন বিভাগ ১০ হেক্টর সেগুন বাগান সৃজন করে ২৫ জন উপকারভোগীকে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়ায় সেটিও একটি সফল বাগানে পরিণত হয়েছে।
লামার কাঠ ব্যবসায়ী ও জোত মালিকরা জানান, বমু বিটে প্রায় ২০ হেক্টরের মতো সেগুন বাগান আছে, যা অক্ষত ও দৃষ্টিনন্দন। বন বিভাগ বিধি অনুসরণ করে জোত ভূমির সেগুন, গামার ও কড়ই প্রজাতির কাঠ কাটার অনুমতি দিয়ে থাকে। ফলে বনের কাঠ মেশানোর সুযোগ নেই। কতিপয় ব্যবসায়ী জানান, তথাকথিত এক সাংবাদিক তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন। চাঁদা না পেয়ে তিনি মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর