
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার জিয়াপুর গ্রাম মাদকের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত। অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি পরিবারের হাত ধরে এই গ্রামের প্রায় সবাই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এই চক্রের মূলহোতা রায়েছ আলীকে (৪২) সম্প্রতি মাদকসহ আটক করেছে সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রায়েছের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তার বাবা আরজু মিয়াও ছিলেন এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ২০১০ সালে আরজু মিয়ার মৃত্যুর পর রায়েছ এই ব্যবসার হাল ধরে এবং পুরো পরিবারকে এই অন্ধকার পথে নিয়ে আসে।
রায়েছের স্ত্রী রুপনা বেগম জানান, তিনি তার বাবার কাছ থেকে মাদক ব্যবসা শিখেছেন এবং এখন তার পরিবারের সবাই এই ব্যবসায় জড়িত। রায়েছের সৎ মা খাদিজা বেগমও স্বীকার করেছেন যে, তাদের বাড়িতে মাদক বিক্রির প্রতিযোগিতা চলে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) হবিগঞ্জের তালিকায় রায়েছ ও তার পরিবারের নাম শীর্ষে রয়েছে। রায়েছের দুই ভাই কয়েছ আলী ও ফয়েজ আলীর বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসার অভিযোগ আছে। ফয়েজ আলী কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ, ধারণা করা হয় মাদক ব্যবসার জের ধরেই তিনি নিখোঁজ হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, গত ২ জুন রায়েছ আলী ২৯ কেজি গাঁজা ও নগদ ১ লক্ষ ৬ হাজার ১শ টাকা সহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পেছনে তার ছোট ভাই কয়েছ আলীর হাত রয়েছে। রায়েছের স্ত্রী রুপনা বেগমের দাবি, কয়েছ আলী জুয়েল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে মাদক এনে রায়েছকে সরবরাহ করত। লাভের অংশ না দেওয়ায় কয়েছ আলীই সেনাবাহিনীকে খবর দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। রুপনা আরও অভিযোগ করেন, গ্রামের জুসনা, আহাদ, মঙ্গাই মিয়া, জিলু মিয়া, এবং জিলুর দুই চাচিসহ আরও অনেকে এই ব্যবসার সাথে জড়িত।
তবে কয়েছ আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তার ভাই রায়েছ মাদক ব্যবসায়ী এবং তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। এই বিষয়ে তিনি নবীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
খাদিজা বেগম জানান, তাদের পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এবং রায়েছ এই ব্যবসার একজন ডিলার। তিনি আরও জানান, গ্রামের আরও অনেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
স্থানীয়দের ভাষ্য, গত দুই দশকে এই পরিবার মাদক ব্যবসা করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে তারা আলিশান বাড়ি ও একাধিক গাড়ি কিনেছেন এবং ব্যাংকে কোটি টাকা জমা করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চুনারুঘাটের ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে জুয়েল নামের এক ব্যক্তি এই পরিবারকে ইয়াবা ও গাঁজা সরবরাহ করে। রায়েছের পরিবার পাইকারি দরে সেই মাদক কিনে গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
জিয়াপুর গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া ও ইউপি সদস্য খছরু মিয়া এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তারা জানান, তারা শুনেছেন আরজু মিয়ার পরিবার মাদকের সাথে জড়িত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হবিগঞ্জ "খ" সার্কেলের পরিদর্শক ফণী ভূষন রায় জানান, রায়েছ আলীকে তার বসতঘর থেকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের কাছে এই পরিবারের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে অনেক অভিযোগ আছে এবং খুব শীঘ্রই এই গ্রামে আরও অভিযান চালানো হবে।
সর্বশেষ খবর
এক্সক্লুসিভ এর সর্বশেষ খবর