
কণ্ঠের পাশাপাশি লেখাপড়াতেও অদম্য কিশোরগঞ্জের তিন বোন। সদ্য প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে চমক দেখিয়েছেন আলেম পরিবারের এই তিন কন্যা। ফাওজিয়া তারান্নুম ও তাহিয়া তাবাসসুম নামের যমজ বোন এবং তাদের আরেক বোন উম্মে আতিয়া উমামা—তিনজনেই সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন।
ফাওজিয়া তারান্নুম (১৪), তাহিয়া তাবাসসুম (১৪) এবং উম্মে আতিয়া উমামার (১৫) এই সাফল্যে মাদরাসা ও এলাকাজুড়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
যমজ বোন ফাওজিয়া ও তাহিয়ার স্বপ্ন বিচারক হওয়ার। তারা মনে করেন, ন্যায়ের ভিত্তিতেই একটি আদর্শ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। অন্যদিকে, বড় বোন উম্মে আতিয়া উমামা শিক্ষক হয়ে দেশের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আলোর দিশারি হতে চান।
কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন নগুয়া এলাকার বাসিন্দা মো. আলীম উদ্দিন ও নূরুন্নাহারের তিন মেয়ে। তাদের মধ্যে আতিয়া দু'জনের চেয়ে এক বছরের বড়। তিন বোনই জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এই সাফল্যে পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে।
মেধাবী এই তিন বোনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ নানশ্রী গ্রামে। বাবা মো. আলীম উদ্দিন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সহকারী মাওলানা হিসেবে কর্মরত। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই রাবিবুল হাসান সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বড় দুই বোন সুমাইয়া আক্তার ও উসরাত জাহান মারিয়া কামিল শ্রেণিতে পড়ছেন এবং ছোট ভাই নকিবুল হোসেন জারিফ হাফিজি পড়ছে।
বাবা আলীম উদ্দিন জানান, তার তিন মেয়ে একসঙ্গে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল এবং তিনজনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। তিনি তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
বড় ভাই রাবিবুল হাসান জানান, তার বোনেরা ফজরের নামাজ পড়েই পড়াশোনায় বসত এবং তিনি সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করেছেন।
যমজ বোন ফাওজিয়া তারান্নুম ও তাহিয়া তাবাসসুম জানায়, তারা সবসময় একসঙ্গে পড়াশোনা করেছে এবং একে অপরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তারা ভবিষ্যতে বিচারক হয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চায়।
বড় বোন উম্মে আতিয়া উমামা বলেন, তিনি শিক্ষক হয়ে পিছিয়ে পড়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চান।
হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, এই তিন বোন শুরু থেকেই মেধাবী, বিনয়ী ও মনোযোগী।
হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষায় ৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ৬৩ জন পাস করেছে। তিন বোনসহ জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ জন।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আজিজুল হক জানান, এই তিন বোনের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সুস্থ প্রতিযোগিতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের সমন্বয় রয়েছে, যা বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরল। খুব শীঘ্রই অন্য মেধাবীদের সঙ্গে এই তিন বোনকে সংবর্ধনা দেয়া হবে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর